০৯ নভেম্বর ২০১৩

১ম বছর ১ম সংখ্যা

প্রচ্ছদ  : অনিরুদ্ধ মুখার্জী 




সম্পাদকীয় 


বাতাসে শীতের পরশ । সেই শীতস্পর্শের আমেজ হৃদয়েও । এই ঋতুতে উষ্ণতার ঝাঁপি নিয়ে আসে কবিতা । কবিতা উৎসব, অনুষ্ঠান বোধহয় শীতকালেই বেশি । মিলনের এই সুরে প্রকাশিত হয় ছোট পত্রিকাগুলি । ছোট পত্রিকার নিয়ম মেনেই ‘প্রতিচ্ছবি’ অনিয়মিত প্রকাশিত হয় । তবে ‘প্রতিচ্ছবি’ এবার ছাপা পত্রিকার সাথে ব্লগজিনও প্রকাশিত হচ্ছে । ইন্টারনেটে এই পত্রিকা প্রতি মাসে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হবে । সেই সাথে বছরে দুটি মুদ্রিত সংখ্যাও হবে ।
ইন্টারনেটের পৃথিবীতে ‘প্রতিচ্ছবি’ একদম নতুন । পাঠক-পাঠিকাদের ভালো লাগলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে । ব্লগজিনকে আরও সুন্দর ও মনোরম করে তোলার জন্য সবার মতামত কাম্য । নতুন কবি, লেখকদের উৎসাহিত করতে এই ওয়েব ম্যাগাজিন সবসময় সচেষ্ট থাকবে । ‘প্রতিচ্ছবি’ সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে সবাইকে উষ্ণ ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা । সবাই ভালো থাকুন সবখানে সবসময় ।
কাব্যিক অভিনন্দনসহ ---

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক 

যোগাযোগ : pratichchhabi@gmail.com

সুবোধ সরকার

বাংলা 
সুবোধ সরকার 


দুঃখ কষ্ট কার ঘরে নেই, আছে আমাদেরও ঘরে
আশায় আশায় তবু আমাদের বুক ধকধক করে ।

বাংলা ভাষায় ঝড় উঠেছিল, উঠেছে আবার ঝড়
এই জনপদে, এই ভাষাতেই তোমার আমার ঘর ।

কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহারের পথে পথে ভাইবোন
‘মণি, মণি’ বলে কে যেন ডাকছে, ছুটে যায় কাঞ্চন ।

সোনার ছেলেরা কেন ভিনদেশে সোনা খোঁজ করে ফেরে ?
আমরা কি তবে হারার আগেই বসে আছি সব হেরে ?

হতেই পারে না, লক্ষ লক্ষ হাতের ওপরে হাত
সব বাঙালিরা বাংলা বললে ঘটে যাবে বাজিমাৎ ।

আছে অনাহার, আছে মারামারি, তবু আছে ভালবাসা
গর্ব করার মতন রয়েছে একটি মাতৃভাষা । 

আমরা গরিব, তৃতীয় বিশ্ব, বেঁচে আছি জেদ ধরে
পৃথিবী দেখুক সোনার ছেলেরা এখনো যায়নি মরে ।  






শ্যামলকান্তি দাশ

তথাস্তু 
শ্যামলকান্তি দাশ 


বনের বাঘ, পথ ভুল করে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছি,
একটু হালুম হুলুম না করলে চলে ?
এইটুকুই তো বাঘের অলঙ্কার !
মনের দুঃখে আজ সারাদিন ঝাঁপাঝাঁপি করলাম,
হুঙ্কার দিলাম । কেউ ঘুরেও দেখল না ।

অঞ্চলপ্রধান বদ রাগী মানুষ
পেটে লাথ মারলেও এক ছটাক বিদ্যে বেরোবে না ।
তিনি আমাকে ঘাস পাতার পাহাড় দেখিয়ে বললেন :
যান, খেয়ে নিন,
বেশি চেঁচালে জিভ ছিঁড়ে ফেলব কিন্তু !

তাঁবুর ভেতর থেকে তাঁকে একবার
জুলজুলে চোখে নিরীক্ষণ করলাম,
তারপর অস্ফুট শব্দে বললাম : তথাস্তু ! 



নাসের হোসেন

একটু 
নাসের হোসেন 


আকাশ থেকে যে সমস্ত প্যারাসুট নেমে এসেছিল
একসময়, আজকে তাদের আর দেখা পাওয়া যায় না
কেননা যুদ্ধ থেমে গেছে
যুদ্ধ কেন করে মানুষ, কেন এত রক্তপাত
বহু-বহু-কিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর
আজ এতদিনে তারা বুঝতে পেরেছে
এবার একটু ভালোবাসা যেতে পারে
চারপাশে অজস্র দূষণের মধ্যে এই একটু ভালোবাসা । 



কাজল চক্রবর্তী

অক্ষর জন্মের অধিকার 
কাজল চক্রবর্তী 


একটা ঘাসের ওপরে জেগে আছো ফুল
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা উড়ে গেল ---
ঘাসফুল তুমি একা ।
আমার হাত ভিজে আছে শিশিরের জলে
তোমাকে ছুঁতে ভয় হয় ।
তোমার নিকটে গেলে অভিমান তপ্ত হয়ে ওঠে
ভয় হয়, এই দূরে বসে দেখা ঘাসফুল ---
যদি নুয়ে পড়ে পুত্রস্নেহে ;
তবে আমার অঙ্গীকার --- !
আমি দূর থেকে দেখি তোমার পৃথিবী
অক্ষরজন্ম দান করেছো তুমি ।

এই হাত ছুঁয়ে শেষ জল-বিন্দুর
লাল শিখা পৌঁছে যাবে তোমার শীতল দু-ঠোঁটে
এ অধিকার আমি কাউকে দেব না ।



০৫ নভেম্বর ২০১৩

প্রশান্ত সরকার

মেঘ ! সে তো আকাশের 
প্রশান্ত সরকার 


যতক্ষণ চুপ করে আছি
ধরো কথা নেই,      
অথবা হাতড়ে এনেছি ভারাক্রান্ত ধুলো

হাওয়ায় হাওয়ায় উড়িয়েছি শুক্রাণু 
আর অযথা ভারী করেছি বাতাসের স্তন, ইচ্ছাকৃত
ততক্ষণে একচোট বৃষ্টি হয়ে গেছে ...
অন্তত সে রকমই মনে হয়
পাঁজরে পিছলভাব অনুভূত হলে
সাবধানী হয় সাহসী মাছেরা
তবু প্রতিকূলে ভেসে যায় ভীষণ আদরের মেঘ

একদিন আকাশের কাছাকাছি এলে
জমিয়ে গল্প  হবে ... কুয়াশার
গল্প হবে গত জন্মের, ততক্ষণ
যতক্ষণ চুপ করে আছি ... যত ক্ষণ মুষলধারে জল ।           




জুবিন ঘোষ

ক্ষেপুর চতুর্দশপদী 
জুবিন ঘোষ    


এসো মেঘ কচিকাঁচা রুদ্র সে ব্রততী    
রাজর্ষি মিলনে ফোটেন এক প্রগতি     
দাও খুলে কবি কঙ্ক নির্মাল্যে সুমনা   
ইন্দ্রের অনুপ নয়  কৌশিকী রচনা   
তন্ময় অলোক যত, প্রলয় লঙ্ঘিতা   
ঊষসী সূরজের প্রাণ হরি মৌ পৃথা 
মামণি দাও আজ পুণ্য হে ঋষি শ্লোক
অত্রই অমিতাভ সুমিতি কৃপালোক 
বিদিশার বিধান তুমি উল্কার স্রষ্ঠা   
বাণী দাও ব্রত দাও, হে সর্বৈবদ্রষ্টা   

বিমোচন নির্ভার কুন্ঠা মনের আলো 
অনন্যা জয়দীপে রত্ন প্রদীপ জ্বালো 
জেনো শাশ্বত থাকবে অনুপম সত্য 
ভোরে তিতির হয়ে প্রাণভরে ওড়-তো




জুঁই সরকার

অতঃপর
জুঁই সরকার 

শরীর ভেজা সলতে
তোমার প্রদীপে আগুন জ্বেলে
ভেসে যাই নদী

যতক্ষণ ভেসে থাকা যায়

যতটুকু ক্ষমতা জীবনের

ক্ষেপাটে সিজিওনাল
শীতকাল অনেক পুরোনো ঘরবাড়ি ঘুরে আসে
মনে হয় আমাদের চাঁদ আলো বদলায়

অতঃপর

কুমারীত্ব ভাঙনের সূত্র ধরে
অভিমানের প্রাচীর দৃঢ় হয় 




রাজন গঙ্গোপাধ্যায়

বিকেলের শবাধার 
রাজন গঙ্গোপাধ্যায় 


মৃত প্রজাপতি বিকেল অদূরে মায়া
ফুলে ফুলে ভ্রম, ভ্রমর ঘুরছে মন
ফাঁকা মাঠে যেই, পড়ে আছে ঝরা পাতা
তোমার পথে বিস্মরণের গান
সুরে পোড়া দাগ, চিহ্ন বুজেছে নাবিক
সাদা বক তবু উড়ে উড়ে উড়ে আসে
জলে খেলা করে অথৈ জলের মাছ

নাবিকের চোখ নগ্ন দেখেছে কাকে
সাদা পাতা জুড়ে জলীয় জীবন লিপি
জানালা কপাট ভিজানো চায়ের কাপ
পাতা খসানোর শব্দে যে বুক কাঁপে
চলে যাও চলে যাও, --- চলে যাই
মৃত বিকেলের শবাধার ঘিরে থাকি । 




দেবাশিস সাহা

ভূতরাত 
দেবাশিস সাহা


পোষা বাড়িগুলো রঙমশাল
ইচ্ছেহাত প্রদীপ জ্বালে
তুমি চৌদ্দ শাকে চতুর্দশী রাত
শাকচুন্নি বেশে আমার অন্ধকার
বাজীর ইশারায় রাত নামে
ভূতেদের গ্রামে            

তোমার পোষা আলোর হাতে রাতের রাক্ষস
ঈশ্বরের জানালায় চাঁদের চিবুক 
আমাদের রাত চিবুক নাড়তে নাড়তে এগিয়ে দিচ্ছে বেডরুম
জ্যোৎস্না মেখে অপেক্ষা করছে গন্ধ
দেরী করে আসবে সকাল
দুপুর বলবে সুপ্রভাত     

সেলুনের আত্মহত্যা  
 রাতের ছদ্মবেশে আততায়ী চুল
গাছেদের প্রত্যাবর্তনে তোমার দেওয়ালী
এক-একটা জলস্তম্ভ রঙমশাল যেন আলোকিত হাসিরঙের তুমি
সবার গোপন কালো মুছে দিচ্ছো আলোয়.....








প্রাণজি বসাক

হে 

প্রাণজি বসাক 


কিছু কথা বাকি থেকেই যায়
সারারাত বর্ষা --- বর্ষায় ভেজা
কথা আর আঁচল স্বপ্নময়
আষাঢ় না শ্রাবণ অজানা সে কথা

রাত জুড়ে শব্দরা এলো
দূরান্তের শহর থেকে
অবুঝ ভাষা আর নানা উপকথা
শরীর থেকে নানা ছায়া বাড়ায় হাত

আমার ভিতর অসংখ্য তারারা
ভিড় করে --- গাছে আসে কুসুম
গায়ে মাখা মুগ্ধ গন্ধে নেশা লাগে
ঝোড়ো হাওয়ায় অবুঝ ইন্দ্রজাল

ক্রমশ আয়ু কমে ঘুম আসে
চাদ্দিকে এতো আলো
এ কোন বিশ্বরূপ ... হে  




আনসার উল হক

চোখ দিয়ে 

আনসার উল হক 


এখন পালানোর সময় নয়, 
মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে । 
এখন অঘোরে ঘুমানোর সময় নয়,
উর্বর মাঠে স্বপ্নবীজ বুনতে হবে ।

আমাদের বিশ্বস্ত প্রজন্মের কাছে
সাঁঝ-বিহানের কথা বুনতে হবে ।
আমরা বলব স্বপ্নের কথা
প্রগতির কথা, বাঁচার কথা, অধিকারের কথা
পতিত-জমিনে ফসল ফলানোর কথা ।

আর বলব ---
শুধু কলম দিয়ে নয়
চোখ দিয়ে কবিতা লেখার কথা ।    



   

বিধান ঘোষ

শেষ সঞ্চয় 

বিধান ঘোষ 


ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায়
শ্রাবণের শেষ বিকেল ।
পুব আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি
পাখিরা ঘরে ফেরে ।
বৌবাজারে জীর্ণ গলিতে
হাঁক দিয়ে যায় হকার ।
জীবনের বড় হওয়ার দৌড়
ছেলেটা ছোটে রাতের কলেজে ।
শ্রাবণের কদম ফুল
এখনও মেলেনি আজ ।
তবু রাত শেষ হলে
যেতে হবে গাঁয়ে ফিরে ।
সেখানে গাছের তলায় বসে
এক খানি কবিতা লিখবো ।
জীবনের শেষ সঞ্চয় নিয়ে
বেঁচে থাকা যাবে । 




রাখী খাতুন

নিঃসঙ্গ  

রাখী খাতুন  


কখনো কখনো তারা ভরা আকাশে মন রেখে
মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে
কত সব সুখকর ছবি
ভাঙাচোরা ঘরে মায়ের গাঢ় ভালোবাসা
মায়ের আধ পেট খেয়েও বেঁচে থাকা
কাকিমার হাতে পিঠেপুলি, হই চই
বড্ড সেকেলে দেখায়
আজ একলা ঘরে ভালোবাসার লোক নেই । 



০৩ নভেম্বর ২০১৩

মনসুর আজিজ


নিঃসীম শীতের রাতে

মনসুর আজিজ


এক নিঃশীম শীতের রাতে জবুথবু হয়ে শুয়ে আছি 
ট্রেনের বিরহী কামরায়
গ্রীষ্মের এশটি কান্ত ফ্যান চারটি পাতার চোখে
দেখছে আমার একাকি ভ্রমণ
প্যান্টের গরম পকেট থেকে ইচ্ছে করছিলো 
হাতটা  বের করে ফ্যানের সুইচটা টিপে দেই
তাহলে চারটি পাতার চোখে
আমার কাতর বিরহী চোখ দুটোর কোনো সাক্ষী থাকবে না
ঝিকঝিক শব্দের সাথে বুকের ধুকপুক শব্দগুলো
তোমার হাসির মতোই মনে হয়েছিলো আমার কাছে
তোমার দুপাটি দাঁতের মতোই
ভৈরব ব্রিজের দুপাশের লাইটগুলো জ্বলজ্বল করছিলো
আর নদীটিকে মনে হয়েছিলো তোমার উদোম পিঠ
আমি তাতে ঝাপ দিতে চাইলে-
সাদা বাগডাশের মতো কুয়াশা ছেকে ধরলো আমাকে
আমি কুয়াশা কাতর শীতের খেজুর গাছের মতো
নিথর দাঁড়িয়ে রইলাম
সারারাত ট্রেন ভ্রমণের পর ঠকঠক কাঁপতে কাঁপতে
কলস ভর্তি খেজুর রসের ভালোবাসা নিয়ে 
হাজির হয়েছি তোমার উঠোনে
আমাদের চুমুকের কুয়াশা ঠেলে হয়তো উঁকি দেবে 
ভোরের লাল সূর্য
যেমন শিশুরা কম্বলের ভিতর থেকে পিটপিট করে চায় নতুন চোখে