০৮ মার্চ ২০১৪

নীল


রাতের নামচা


এ নাটকে চরিত্র দুটি টেলিফোন তার আর খুঁটি
সূত্রধর অর্বাচীন কাক, আসুন নাটক শোনা যাক....
তার - সিগনাল পাচ্ছি, আবার ফোন করছে নিশ্চয়....
খুঁটি - এবার ও তুলবে না, আমি জানি তুলবে
না ।
তার
- অন্য কেউ ও তো হতে পারে ? কোন খারাপ খবর
খুঁটি
- এত রাতে খারাপ খবর ও ঘুমায় জাগে শুধু টিকটিকি ।
তার
- ফোন বেজে যাচ্ছে, ঠিকই বলেছ ... তুলবে না বোধহয়।
কাক - "টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজী আছি তোমার খোলা হাওয়ায়..." রোজ রাতে ডুবতে চায়, সকাল হলেই ভেসে ওঠে তখন আর ঠেলে গুঁজেও জলে নামানো যায় না! এ আসলে চরিত্র, যাবে কোথায়! রাতের পুরুষ দিনে বদলে যায়, রাতের নারী দিনে অন্ধকারচারী।
তার- আবার সিগনাল, আবার করছে, কী নাছোড়বান্দা ছেলে রে বাবা, রাত হয়েছে ঘুমো তা না !
খুঁটি
- ঘুম একটা অভ্যাস-এর ফল, ফোন করাটাও...একটা অভ্যাস ঘেঁটে গেলে অন্যটাও ঘেঁটে যায়। বাটার ফ্লাই এফেক্ট ।
তার
- তুমি এত জানো কি করে ?
খুঁটি
- আমি পূর্বাশ্রমে গাছ ছিলাম, খুব কাছ থেকে মানুষ দেখেছি।
তার
- পূর্বাশ্রম, আমি ছিলাম বক্সাইটের পাহাড়, জানো চাঁদ উঠলে আমার সারা গায়ে জোনাকি জ্বলত।
খুঁটি
- বিবর্তনের ইতিহাস এইরকমই হয়, এই যে ওরা একজন ফোন করছে, একজন ধরছে না কিন্তু জেগে আছে, ওরাও একদিন মৌন হয়ে যাবে।
কাক - যা গেছে তা যাক, যাক যা গেছে তা যাক.... গাছ খুঁটি হয়ে যাক, পাহাড় লিকলিকে তার হয়ে যাক, জেগে থাকা সব প্রাণী মৌন হয়ে যাক, শান্তি শান্তি.... কাক কোকিল এক হয়ে যাবে সেদিন
তার -ঘুমোলে ?
খুঁটি
- না, শুনছি....
তার
- কি শুনছো ?
খুঁটি
- ভোরের আজান দিচ্ছে কোন মৌলবী, বড় মন উদাস করা সুর।
তার
- পাখিরা সব জেগে উঠবে এবার, আমার শিরায় শিরায় বয়ে যাবে ক্লান্তিহীন লক্ষ সিগনালের বিদ্যুৎ । ব্যস্ত দ্রুত শহরটা ক্রমে একটা আস্ত অজগরের মতো গিলে ফেলবে রাতের সমস্ত আলস্য।
খুঁটি
- তারপর, আরো একটা রাত....
তার
-তারপর আরো একটা দিন....
খুঁটি
- আরো একটা রাত....
কাক - অভ্যাসবশে সকলেই একদিন জেনে যাবে, চাওয়া পাওয়ার শেষে পড়ে থাকে শুধু নৈঃশব্দ । অভ্যাসবশে সকলেই একদিন ....



ইন্দ্রনীল


খেয়ালী / ৩৬


যে আকাশে স্বপ্নেরা বাঁচে সেখানে যাইনি বহুদিন
এখানে জীবন্ত লাশের স্তুপ পেরোনো দায়
অক্সিজেন মাপার মাপদণ্ড নেই আমার কাছে
চৌকাঠবিহীন ঘরে এসবের দরকার হয় না ।

শান্ত শীতের রাতকে দেখেছি কাছ থেকে
এখানে বাঁচার সুত্র আলাদা
চলার রাস্তা নির্দিষ্ট এখানে
জীবনের লম্বচ্ছেদ ঘটে প্রতিনিয়ত
ব্রাউনীয় গতিতে লেগে যেতে পারে
অনাকাঙ্খিত পূর্ণচ্ছেদ ।




সেলিম জাহাঙ্গির


অজ্ঞতার পাপোশ 


ঘরে আধুনিক ঐক্যের কর্পূর
বাইরে ট্র্যাফিক--
সিগন্যাল পেষাইয়ের সফল সংহতি
প্রয়োজন বিদ্যুতের মাকড়সার জালে   
কাঁটাতারের সংকট...
সিঁড়ি মুখে অজ্ঞতার পাপোশ 
কেবল পাথেয় ।

চল ঘুড়ি উড়ে চল
কোন দূরে যাবি
চল মাঝি নিয়ে চল
কোন পারে যাবি,
বেশ করে ভরে নিই হাওয়া
টিউবের তোবড়ানো গালে ।




কৌশিক বড়াল


শিশুর আত্মপট 


হুকোমুখো হ্যাংলারা বইয়ের পাতায়
মুখ লুকায় গভীর অভিমানে
শৈশব কেড়ে নিয়েছে আধুনিক সভ্যতা
যন্ত্রমানব আর যন্ত্রদানবের দাপাদাপি
কবির পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করার অঙ্গীকার
ধূলোয় মিশেছে

আত্মপটে ফুটে উঠেছে
শিশুর কৈশোরোচিত মত্তোল্লাস । 




মোজামমেল সেখ


বাঘকথা 


হাওয়ায় ওড়ে -- নীল ছোপ
বিষাক্ত ওড়না --
ডোরা কাটা দাগ দাগ
আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
বহু দিনের শিকারহীন -- ক্ষুধার্ত ...
ঘাস পাতা তো আর মুখে তোলা যায় না

হালুম ডাকে তোলপাড় এলাকা
বাঘ-বার্তা রটে যায় -- লোকালয়ে
সদর দপ্তরে...  




মহম্মদ সামসুর রহমান


হে প্রেম, হে কবিতা 


তুমি এক আশ্চর্য সুন্দরী
তোমার শরীরে এসেই জড়ো হয়
শতাব্দীর সেরা সুন্দরীরা ---
স্বপ্ন, নোনাজল, শ্মশান কিংবা মেঘদূত
সবই তোমাকে নিয়েই; 
তোমাকে গড়তে না পারার ব্যথা দিয়েই তো
সুধীন্দ্রনাথ এঁকেছিলেন ‘মৌন ব্রত’ ।

আজ আমিও অনেকটা এরকম
প্রেমের পর্ব শেষ
হৃদয়ের লেনদেন বন্ধ
তবু, আজীবন প্রেম করে যাবো তোমার
হে কবিতাসুন্দরী ।




সৌরভ হোসেন


একখণ্ড উড়ন্ত স্বাধীনতা 


একপেট স্বাধীনতা চোঁয়াঢেকুর তোলে রোজ
বাইপাশের ধারে রুট বদলায়
রেডরোডের মধ্যরাতে আমি উদোম হই
ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টি ঝেপে নামে
ভেজা ল্যাম্পপোস্টের না ঘুমানো রাত
লজ্জায় মুখ ঢাকে, মুখ লুকায়, চোখ কচলায়
টিটকিরি কাটে ঘাসফড়িঙ ব্যাঙের ছাতা ।
গলা থইথই স্বাধীনতার বদলে
একখণ্ড মেঘের স্বাধীনতা পেতে বড় ইচ্ছে করে আজ
ওগো রৌদ্র ভেজা মেঘ
আমাকে তোমার মতো একখণ্ড উড়ন্ত স্বাধীনতা দেবে ?



গার্গী মুখার্জী


সুন্দরতা


তোমাকে দেখলে
সুন্দর হয়ে ওঠে পৃথিবী ।
বসন্ত রঙ আকাশ জুড়ে
হিমেল বাতাসে কোকিলের সুর 
হৃদয়ের কথা মাথা নাড়া দেয় ।

প্রতি কোষের অনুভূতি
সুন্দর করে তোলে পৃথিবী ।




গোপাল বাইন


একটি সূর্যের জন্য


একটি সূর্যের জন্যই এত প্রাণ চঞ্চলতা
পৃথিবীর এত ভালোবাসা লেনদেন
স্থাবর অস্থাবর সব সম্পর্কের ভিতর
প্রতিনিয়ত যাওয়া আসা

একটি সূর্যের জন্যই রাত, তারা, চাঁদ
প্রজাপতি, ফুল, নদী, পিকনিক
গ্রহের ভিতর মানুষের এত জড়াজড়ি

একটি সূর্যের জন্যই আমি প্রতিদিন

সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি 




রাজেশ চট্টোপাধ্যায়


বৃষ্টি ভেজা চোখে


তোমার চোখে বৃষ্টি হলে
কাদা হয় আমার আঙিনা ।
তুমি এস না আমার কাছে
বড় পিচ্ছিল এ হৃদয়
পড়ে যাও যদি পাছে
তখন আবার বৃষ্টি নামবে
        আমার চোখে ।





০৬ মার্চ ২০১৪

জৈদুল সেখ


মায়াফল


বিস্ময়ের তারা, আশ্চর্য মানুষ
আর বিস্ময়ের আশ্চর্য মানুষের মন ।
ঝপটা বাতাসে সাজে স্বর্গরাজ্য
সৃষ্টি তার ভিতর এক দৃষ্টিতেই ।
আবার রক্তের ভিতর রক্ত চোখে
সবপ্রেম হারিয়ে হৃদয় পুড়িয়ে ।

মোহনার মায়া মন্থনে খোলে সব কর
আবার সব দ্বার বন্ধ মন ভাবে যদি পর ।