০৭ এপ্রিল ২০১৪

সম্পাদকীয়

২য় বছর ৩য় সংখ্যা 





বসন্ত বিদায় নিয়ে গ্রীষ্ম আসার সময় । আবহাওয়াতে ঋতু পরিবর্তনের ছোঁয়া। ‘প্রতিচ্ছবি’-র নতুন সংখ্যা নতুন কলেবরে প্রকাশিত হল। এবারের সংখ্যায় ‘কবিলেখক’ ট্যাবে কিছু নাম-ঠিকানা যোগ করা হয়েছে। যদিও এটি সম্পূর্ণ নয়। পরবর্তীতে আরও নাম-ঠিকানা যোগ করা হবে। আপনাদের নাম-ঠিকানা ইমেল করে পাঠাতে পারেন। সেই নাম-ঠিকানাগুলি পরে যোগ করা হবে। ‘পত্রপত্রিকা’ ট্যাবে ইন্টারনেটে প্রকাশিত বিভিন্ন ‘ওয়েবম্যাগাজিন’–গুলিকে রাখা হয়েছে। পাঠক-পাঠিকারা এখান থেকেই বিভিন্ন ‘ওয়েবম্যাগাজিন’–গুলি পড়তে পারবেন। ‘প্রতিচ্ছবি’-র নতুন সংখ্যায় গল্প–এর সাথে চালু করা হল ‘বই সমালোচনা’ বিভাগ। আরও কিছু বিভাগ পরবর্তীতে চালু করা হবে। সবাই ভালো থাকুন সবসময় সবখানে। 

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক  





০৬ এপ্রিল ২০১৪

কবিতা- মনসুর আজিজ

আত্মার ভাঁজপত্র


আত্মার ভাঁজপত্রের ভেতর জমানো জুনি পোকা
আলো দেয় সাঁঝবেলা অন্ধকার মনের ভিতর
পাজরের দ্বার খুলে জোসনারা হাসে একরোখা
ভাঁজপত্রের আঁড়ালে লেজ তুলে পালায় ইতর
ওহির আঁড়াল থেকে আদি গান শোনায় পিতর ।

মেদময় দেহ ভাঁজে ঘাম ধূলো জমে একাকার
উর্বশী মাতাল সুরে মদিরায় মাতায় হেরেম
দেহের মাতাল ঘ্রাণে যুবরাজ হয় বেকারার
আকশির ঘোর শেষে ভাঙা রয় তসবির ফ্রেম
হীরের মালায় গাঁথা উর্বশীর ক্ষণিকের প্রেম ।

বেভুল মনের ঘোরে ক্ষয় হয় পূর্ণিমার চাঁদ
তখতের মালিকানা চলে যায় ক্ষণিক চুমোয়
উজির নাজির শুধু মৃদু হেসে বুনে যায় ফাঁদ
সুঠাম পেশির পাশে শেষরাতে উর্বশী ঘুমোয়
যুবরাজ ভাঁজপত্রে ফেলে আসে দ্যুতির সময় ।

আত্মার চেতনা তবু লিখে যায় কষ্টের গাথা
স্বর্ণালি দিনের স্মৃতি মনপাখি বলে বারে বারে
ভাঁজপত্র খুলে খুলে। আমরা তো গুনে রাখি পাতা ।








কবিতা- কবিরুল ইসলাম কঙ্ক


মেঘলাদিনের কবিতা


এসএমএস-এ এমন কথা ছিল না
মেঘমল্লারে অসংখ্য বিন্দু ছোপ
চুপ করে আছে রাজধানী শহর

সাড়ে দশটার হৃদয়পুর লোকাল পৌঁছেছে
খালি হয়ে গেছে ভিজে প্ল্যাটফর্ম
বুকপকেটে বনউদাসি শীতল গন্ধ

শ্রাবণ ঘোরে প্রেমের পর্যাপ্ত পঙক্তি
ডানা খুলে দেয় মেঘল তেপান্তর
তোমার ওখানে ক-টা বাজে

তুমি রোজ দেরি করো  কেন
ক্লাস শুরুর ঘণ্টা কখন বেজে গেছে    



         

অনুবাদ কবিতা- খায়রুল আহসান


তোমার প্রেমেই বেঁচে থাকতে চাই 


আমি তোমার প্রেমেই বেঁচে থাকতে চাই,
যেমন করে শ্যাওলা সাগরে ভেসে থাকে।
উত্তাল ঢেউ-এর সাথে ভেসে ভেসে উঠে,
আবার ঢেউ চলে গেলে নীচে নেমে আসে।
যেসব স্বপ্ন আমার আত্মায় বাসা বেঁধেছে,
আমি তার সবগুলো খালি করে ফেলবো।
তোমার হৃদস্পন্দনের সাথেই আমার হৃদয়
স্পন্দিত হবে, তোমার আত্মার পিছু নেবে। 


মূল : Sara Teasdale
অনুবাদ : খায়রুল আহসান
কবি পরিচিতি : Sara Teasdale একজন গীতিকাব্য রচয়িতা ছিলেন। তিনি ০৮ আগস্ট ১৮৮৪ তারিখে আমেরিকার St. Louis, Missouri তে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নাম ছিল Sara Trevor Teasdaleশিশুকালে তার স্বাস্থ্য এতটা দুর্বল ছিল যে ১৪ বছর বয়সের পূর্বে তার পক্ষে লেখাপড়া শুরু করা সম্ভব হয় নাই। ১৯০৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ Sonnets to Duse প্রকাশিত হয়, আর দ্বিতীয়টি হয় Helen of Troy নামে, ১৯১১ সালে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটি একটি রোমান্টিক গীতিকাব্য হিসেবে সমাদৃত হয়।
১৯১১ থেকে ১৯১৪ পর্যন্ত তার জীবনে কয়েকজন প্রথিতযশা পুরুষ প্রেমের বারতা নিয়ে এসেছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন কবি Vachel Lindsay, যিনি ঐ সময়ে তার প্রতি অন্ধ প্রেমে হাবুডুবু খেলেও মনে করতেন যে তাকে সন্তষ্ট রাখার মত তার যথেষ্ট টাকা কড়ি ও স্থিতিশীলতা ছিলনা। Sara অবশেষে তার কবিতার অপর এক গুনমুগ্ধ ভক্ত Ernst Filsinger কে ১৯ ডিসেম্বর ১৯১৪ তারিখে বিয়ে করেন এবং Sara Teasdale Filsinger নাম গ্রহণ করে তার সাথে ১৯১৬ সালে New York City তে পাড়ি জমান। সেখানে তারা Central Park West এলাকায় একটি apartment এ বসবাস শুরূ করেন ।
Sara Teasdale Filsinger এর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ Rivers to the Sea ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং প্রায় সাথে সাথে best seller এ পরিণত হওয়ায় বেশ কয়েকবার পুনর্মুদ্রিত হয়। ১৯১৮ সালে তার কাব্যগ্রন্থ Love Songs তিনটি মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার অর্জন করে, যথা :  Columbia University Poetry Society prize, The 1918 Pulitzer Prize for poetry এবং The annual prize of the Poetry Society of America.
তার স্বামী Filsinger কে ব্যবসায়িক কারণে প্রায়শঃই ভ্রমণে থাকতে হতো। একাকীত্বে অতীষ্ঠ হয়ে তিনি গোপনে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আইনজীবিদের শরণাপন্ন হন। আইনজ়ীবিদের পরামর্শে তিনি অবশেষে Filsinger-কে বিষয়টি অবহিত করেন, যা শুনে Filsinger হতভম্ব হয়ে যান। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় জয়ী হয়ে তিনি Central Park West এ তার বাসস্থানের মাত্র দুই ব্লক দূরে বসবাস শুরু করেন। তারপর তিনি তার পুরনো প্রেমিক কবি Vachel Lindsay এর সাথে তার নির্বাপিত সম্পর্ক পুনরুদ্দীপ্ত করেন। ততদিনে Vachel Lindsay স্ত্রী ও বাচ্চাকাচ্চাসহ সংসার পেতেছিলেন। ১৯৩৩ সালে তিনি অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এর ঠিক দুই বছর পূর্বে তার বন্ধু ও প্রেমিক কবি Vachel Lindsay-ও দুঃখজনকভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
মূল ইংরেজি কবিতাটি নীচে উদ্ধৃত হলো :

I Would Live In Your Love


I would live in your love as the sea-grasses live in the sea,
Borne up by each wave as it passes, drawn down by each wave that recedes;
I would empty my soul of the dreams that have gathered in me,
I would beat with your heart as it beats, I would follow your soul as it leads. 



গুচ্ছ কবিতা- ইন্দ্রাণী সরকার

 গুচ্ছ কবিতা- ইন্দ্রাণী সরকার

আমি সখা 

কোন এক সোনালী দুপুরে আমি শ্বেতপদ্ম 
তোমায় ডেকে নিয়েছিলাম পদ্মপাতা হয়ে 
আমায় ভাসিয়ে রাখতে, এই ডুবন্ত আমিকে |
তুমি হাজার পাতা হয়ে আমায় ভাসিয়ে দিলে 
কবিতার ঝিলে কি পরম আদরে ভালোবেসে |

কোনো এক মেঘলা সকালে আমি আহত পাখি 
তোমায় ডেকে নিয়েছিলাম আমায় উড়িয়ে দিতে |
তুমি গাছের ছায়া হয়ে আমায় ঢেকে দিয়েছিলে,
তুমি পাতা হয়ে ঔষধি নির্যাস সিঞ্চন করেছিলে 
আমার ক্ষতকে শুশ্রূযায় নিরাময় করে আবার 
নীল আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ফিরিয়ে দিতে |

তাই আমি পদ্ম হয়ে ভাসি তোমার কবিতার ঝিলে,
তাই আমি পাখি হয়ে উড়ি তোমার মনের আকাশে 
ওগো সখা, আমার চিরসখা ভালোবাসা কাকে বলে 
শুধু নীরবে মনের গহীনে আমায় রেখে শিখিয়েছ 
দিনদিন প্রতিদিন চিরদিন বিনা স্বার্থে ভালোবেসে |


তোমার চিঠি

সকালের মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়ায় তোমার চিঠি এসে 
আমার জানলার কাঁচে আটকে গেল
ঘুমে জড়ানো চোখে চেয়ে দেখি চিঠির গায়ে 
ছোট্ট দুটি ডানা হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে
আরও ভালো করে চেয়ে দেখি চিঠির গা থেকে 
ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে কাঁচে লেগে যাচ্ছে
আমি চিঠিকে হাত নেড়ে ডাকতেই জানলা ভেদ 
করে আমার ঠিক সামনে এসে বসল।
চিঠি হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম লেখা আছে,
বন্ধু, তোমার কষ্টে আমার চোখের জল এই 
চিঠিতে মুড়ে পরীদের ডানা গেঁথে দিলাম
তুমি যখন চিঠি পাবে তখন ভাববে তোমার 
কষ্টটা তোমার থেকেও আমার বুকে বেশি বেজেছে
তাই তুমি আর মনে কোনো দুঃখ রেখো না,
সব দুঃখ এই চিঠিতে মুড়ে আমার নাম করে পাঠিয়ে দাও,
তখন দেখবে তোমার চেয়ে সুখী আর কেউ নেই


চেরাপুঞ্জির মেঘ

ঘষা কাঁচের ফাঁক দিয়ে চেয়ে দেখি 
একটুকরো চেরাপুঞ্জির মেঘ,
বললো, সব জল আমার ফুরিয়ে গেছে,
একটু জল দাও না, বৃষ্টি দিতে চাই |

পথে পথে তৃষিত গুল্মলতা বৃক্ষরাজি 
মাঠে মাঠে শুকনো ঘাস, বনবিথী 
তাদের তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে আজ 
আমি রিক্ত, জলের অভাবে শুষ্ক |

সে বললো, দেখো ওই চোখের মাঝে 
ডুব দিয়ে, খুঁজে পাবে অনেক জল,

আঁজলা ভরে নাও....


শব্দ-জব্দ

শব্দের কারিগর কাজ খুঁজে পায় 
জনবহুল কোনো পল্লীতে কোন এক দিন |
পারিশ্রমিকে বোধ হয় পোষায় নি 
অথবা কোনো খুঁত ছিল কোথাও, 
অজানা সে সব তথ্যের হয় নি প্রকাশ্যে প্রকাশ |
তুখোড় কারিগর ফেরে দ্বারে দ্বারে 
আভিধানিক শব্দের মিছিল নিয়ে,
শব্দজব্দ অনেকেই মাথা ঠুকে যায় তার দরবারে |

হঠাৎই সে পেল এক নিষ্কলঙ্ক মন,
অগোছাল নিউরন আবেগে ভেসে গেল 
পদ্মা নদীর কোনায় কোনায়,
বাউল গানের পাল তোলা নৌকায় |
আবেগী নিউরন উল্লাসে মেতে ওঠে
মনটার কুত্সিত ছবি আঁকার খেয়ালে |
সুযোগসন্ধানী চোখ মনকে নিয়ে লিখে গেল
একের পর এক অনুভবী কল্পকথা |
মনটা সরে গেল অবাক চোখে চেয়ে দেখে 
কেমন বিশ্বাস ভেঙে ফেলে ঠুনকো কাঁচের মত !

ব্যাস ! অপমানিত কারিগরের দুশিন্তা ----
"
এমন ' হবার কথা ছিল না !
এতদিনের কারিগরী বিদ্যা কি বৃথা যায় !
"
লাগাও আরও কারিগর, ভেঙে ফেল,
তছনছ করে দাও শামুকের খোলস,
হিংস্র থাবায় টুঁটি চিপে ধরে
আপাত সরল তিলোত্তমা মনের ন্যাকামি |
তাই আজ ইতিহাস কথা বলে যায় 
পালাবদল হয় একই দৃশ্যের বিভিন্ন 
নাট্যমঞ্চের রঙ্গভূমিতে ||