১১ মে ২০১৪

সম্পাদকীয়

২ বছর ৪ সংখ্যা 


এই রোদ, এই তাপ, অসহ্য গরম । তার উপরে ভোটের হাওয়া পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে । যদিও তাতে কবিলেখকদের কিছু যায় আসে না । তাঁদের লেখনী যথারীতি চলছে এবং ভালোই চলছে । এইসময়ে বেশ কিছু ভালো লেখা পড়লাম বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় । ‘প্রতিচ্ছবি’ ব্লগজিন ক্রমশ সমৃদ্ধ হচ্ছে বিভিন্নভাবে । কবিতা ছাড়াও পরের সংখ্যা থেকে গদ্যের দিকে ঝোঁক দেওয়া হবে । উৎসাহী বন্ধুরা গদ্য লেখা পাঠাতে পারেন । এই গরমে বেশি কথা না বলে, সবার প্রতি রইলো ঠাণ্ডা শুভেচ্ছা । সবাই ভালো থাকুন সবখানে সবসময় । 

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক 




কবিতা - মনসুর আজিজ


আকাশী রঙের চাদর



আকাশী রঙের চাদরে এঁকেছি ভাসমান মেঘমালা
চাঁদের হাসিতে তারার বসতি জোনাকির ডালপালা
উঠোনের পর চারচালা ঘর তারপরে বাঁশঝাড়
পার হয়ে গেলে লতাপাতা ঘেরা আমাদের খালপাড়

সামনে তাকালে মটরের ক্ষেত কলাইয়ের নীলফুল
মরিচের মেয়ে ফিক করে হাসে কানে তার লাল দুল
মাটির মাদুলি গলাতে জড়ায়ে হেঁটে যায় ওরা কারা
এবাড়ি ওবাড়ি দাবড়িয়ে যায় ওরাতো মাটির তারা

শিমুল সকালে আল ধরে হেঁটে শিশিরের চুমু পায়ে
ডাহুকের দল পাখনা ছড়ায়ে রোদ মাখে কালো গায়ে
আলো আঁধারির লুকোচুরি খেলা মেঘপরীদের দেশে
আঁকতে আঁকতে চলে এসেছি একেবারে তার শেষে

হেমন্ত আমার এমনি ছিলো দুরন্ত ছেলেবেলা
তার ছবিটাই ক্যানভাসে আঁকি ঘরেতে বসে একেলা। 




০৯ মে ২০১৪

গুচ্ছ কবিতা - মাসুম বাদল


কবি ও কবিতা-১ 

 
.
কথিত আছে
বঙ্গদেশে
কবি  কাকের সংখ্যা 
সমানে সমান

.
কবি 
কি 
কাক

নিশ্চিত
কবিতা কাকের ডিম নয়
কবিও আদতে কাক নয়

.
কাক তো
ইদানীং চোখেই পড়ে না

জীবনের চত্বর
খুঁটে দেখে না কেউ 
কবিতা না হয়ে ওঠা শব্দেরা
এলোমেলো জঞ্জাল ...  





কবি ও কবিতা-২



প্রবহমান রাশি রাশি ঘটনাচক্র
ভেসে বেড়ায় শব্দেরা যত্রতত্র --
কবি শিল্পিত মনে 
এগুলোই তো’ গাঁথেন

কবিতা মোহনীয় বাঁক দুলিয়ে হাঁটে
নির্যাতিত হয়
ঠেলাগাড়ি চালায়
অসঙ্গতি দেখলে--
কবিতাই গর্জে ওঠে বিপ্লবে।

কবি হাসেন – কাঁদেন লাল ফিতা বাঁধেন 
সামাজিক দায়বোধে ...  





 কবি ও কবিতা-৩ 

 
.
কবি- একটাই মুদ্রাদোষ--
সবকিছুকেই তিনি দেখতে চান
খাঁটি আসল এবং সুন্দরতম চেহারায়।
ঝরাফুল কিংবা ডানা ভাঙা আহত-পাখি দেখলে
কবিমন ডুকরে ওঠে,
কবি- দুঃখবোধটা একটু বেশিই সক্রিয়। 

.
কবিতাই শুধু বোঝে
কবিমনের এই স্পর্শকাতরতা।
তাইতো--
কবিতা সত্য  সুন্দরের কথা বলে
সুন্দর রে বলে
সাহস নিয়ে বলে।

কবিতা পুরুষকে যেমন বোঝে
নারীকেও বোঝে,
সর্বোপরি কবিতা মানুষের কথা বোঝে 
মানুষজাতি- কথা বোঝে।
কবিতা মানব প্রেমে উদ্বুদ্ধ 
মানবতার পূজারী;
কবিতা গায় মানবতার জয়
মানবতা  প্রচারে কবিতা সোচ্চার ... 




গুচ্ছ কবিতা - ইন্দ্রাণী সরকার

চিরমুক্তি 

আমরা বসবাস করি এক কঠিন বাস্তবে
যেখানে চলন্ত বাসে বাসে ধর্ষিতা রমনী 
রাতের পর রাত অঞ্জলি দেওয়া বিপন্ন অস্তিত্ব 
যেন আদিম বর্বতার পোশাক এখনো অটুট

যোনি থেকে ঝরে অবিশ্রান্ত রক্তের ধারা 
অন্ধকারে হারিয়ে যায় কত না তরুণী 
যারা কোনদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল |
প্রতিবাদের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে সমাজ |

হিংস্র শ্বাপদের লোভাতুর চোখ এড়িয়ে 
ওরা কি খুঁজে পাবে এক বিশ্বস্ত ঈশ্বর ?
এক নির্লোভ জগতের প্রতিশ্রূত আচ্ছাদন ?
বিকৃত কামনার হাত থেকে চিরমুক্তি ?



পরিব্রাজক 

অনুশোচনার রৌদ্র আগুন স্পর্শ দেয় না আর
যতটুকু মধুর সম্পর্ক দিয়ে বিপন্ন অস্তিত্ত্ব
পুনরুজ্জীবিত করা যায় ঠিক ততটুকুই অমরত্ত্ব 
শীতলপাটিতে চন্দন প্রলেপে লাগানো ছিল |
কিন্তু শুধু ছলনার দাঁড়িপাল্লায় কথার ওজনে 
উদ্ভূত হয়েছিল রঙ বেরঙের কাব্য ফোয়ারা |
বিষুবরেখা, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ খুঁড়ে খুঁড়ে 
এসেছিলো পাতাল ফোঁড়া অক্ষৌহিনী সেনারা
চক্রবুহ্যে কবিতা তীরে আবদ্ধ করতে কুমারী 
সৌদামিনীর বিলম্বিত কৌমার্য্য সিঁথি হরণে;
আবিষ্ট রণক্লান্ত অক্লান্ত পথিক সেনাবাহিনী 
একের পর এক ক্লেদাক্ত বলয়ের পরিব্রাজক |



হোলির রঙিন কবিতা 

রঙ দাও ওগো রঙ দাও 
ওই নিরন্ন, বুভুক্ষু 
বিবর্ণ মুখে রঙ দাও |

রঙ যদি দিতে হয় দাও
ওই শীর্ন জীর্ণ মলিন 
মায়ের মুখে রঙ দাও |

রঙ যদি দিতে চাও দাও 
ওই ক্লান্ত, শ্রান্ত, ঘর্মাক্ত 
পিতার মুখে রঙ দাও |

অনেক অনেক রঙ দাও 
যত অনাথ রুগ্ন অভুক্ত 
শিশুদের  মুখে রঙ দাও |

হ্যাঁ হ্যাঁ দাও, আরও দাও 
ওই রঙহীন মেঠো দেওয়ালে 
রঙের বন্যা ছড়িয়ে দাও



নদীর গন্তব্য 

নদীর গন্তব্য নিয়ে আজকাল 
আর মাথা ব্যথা করেন না 
আমাদের ভূগোলের স্যার |

নদী চলে আপন খেয়ালে 
জল ভেঙে ভিজে যায় 
মানচিত্রের খোলা খাতা |

পাড়েতে নোনা বালি 
রোদে চিকমিক করে |
মিমি ম্যাডাম মাথা চুলকে 
ভাবেন  গনিতে কিছু 
ভুল আছে কি না |

নদীর গতিপথের বর্ণনা 
দিতে গিয়ে ম্যাডামের 
বারে বারে ভুল হয় |

ভূগোলের স্যার ব্যস্ত 
থাকেন হিসেব নিকেশে 
আবহাওয়া মেপে মেপে 
জরিপ করে যান উত্তরের 
অন্তর্গত বিন্যাসের পরিধি



অবয়বহীন শব 

চতুর্দিকে শুধু অবয়বহীন শব 
কেউ হাত নাড়ে, কেউ পা নাড়ে,
কেউ চুপিসারে উঁকি দিয়ে যায়....
গেরস্ত বাড়ি আছে , তুমি জানো না 
তোমাকে রাগিয়েই আমার আনন্দ !
খুনসুটি খেলতে খুব ভালো লাগে আসলে,
তাই ছায়া কায়া নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরি 
যদি মিলে যায় তার দেখা,  যদি এই অবয়বহীন 

শরীরের ঝুলিতে অজান্তে কিছু মনিমানিক্য মেলে




দুটি কবিতা - রাজর্ষি মজুমদার

অন্ধকারের মদ 


অন্ধকারে থাকলে হাত নাড়াতে ভয় লাগে
দরজার দিকে যেতে যেতে -
সে যেন আমার নয় ; কতকাল পুরোনো বিছানা
কতকাল পুরোনো হয়েছে ভয়

শহর আমায় সাহস দিয়েছে, রাস্তাকে বাতি
কাঁচের গ্লাসে করে মদ খেয়ে গেছে অন্ধকারে




ভিজে 


পাড়ের অবিশ্বাস্য বিরতি খুঁজে ফেলেছো স্থির -
রেখার মতন বোতামের যোগাযোগ অল্প অল্প ওড়ে -
বারিষ দিনের ওপাশে

সমস্তবাড়ি ভিজে
ওষুধটুকু বুঝিও মিলিকে
মন্দলাগা মুছে গেলে, দেখতে লাইটার জ্বালাব।