২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪

মহঃ আসাদুজ্জামান

জোনাকির সৌরভ


লাল সূর্যটা আজ ভাইরাসে আক্রান্ত
চারিদিকে ঘন অন্ধকার
কাছে পিঠে কোত্থাও আলো নেই
অন্ধকারে মা'র খুব ভয় করে 
ছেলেবেলায় ভয় ছিল না বোনের 
আজকাল ফুটপাত আর স্টেশনের 
গা বেয়ে অন্ধকার নামলে 
খুব ভয়ে থাকে বোন 
মা জপমালা হাতে প্রতীক্ষায় থাকে
বনগাঁ লোকাল সিটি দিয়ে চলে গেলে
মায়ের বুক জুড়ে 
এক ঝাঁক জোনাকির সৌরভ।






দীননাথ মণ্ডল

জীর্ণ পাণ্ডুলিপি



পরোটা শরীরে শুয়ে আমি এক জীর্ণ পাণ্ডুলিপি
হিসাবের খাতায় শুধু মাটির ঢিবি
বুকের উপর করে কামান গোলার ঠোকাঠুকি 
পাতা উল্টে করে না কেউ টোকাটুকি 
রাতদিন জেগে জেগে শুধু লিখি আর লিখি
আমি এক জীর্ণ পাণ্ডুলিপি। 

কালের স্রোতে বয়ে চলেছি অনন্তকাল ধরে
সেই থেকে আজ অবধি মরছি পরে পরে
আমার বুকে ঘুম ভাঙা একরাশ স্বপ্ন 
হয়ত ঘুচে যাবে
জীর্ণ পাতাগুলি খুলে খুলে পড়বে যবে 
ক্রমে বুকে আগুন জ্বলছে ধিকিধিক
আমি এক মাটির পাণ্ডুলিপি।

আমার নিশ্বাসে প্রশ্বাসে বারুদের দুর্গন্ধ 
হতে হয় মাঝে মাঝে নীরবে অন্ধ
কখনও টেনে টেনে করে ভাগাভাগি
মনে হয় আমিই দাগি 
রক্ত গড়িয়ে পরে আমার গা বেয়ে
আমি এক ভোগের পাণ্ডুলিপি। 

হিমালয় পর্বতে মাথা ভারত সাগরে পদতল
পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত আমার বাহুবল 
কালবৈশাখীর একখণ্ড মেঘ এসে ঝরাক্ বৃষ্টি 
নিথর দেহে ভরে উঠুক 'সুজলাং সুফলাং....শস্য শ্যামলাং' ধারা
দু-দণ্ড শান্তি দিক শিশিরের চুম্বন আকাশের তারা
অগণিত জনতা মুখে ফুটুক হাসি
সেই দিন আমি হব দেশবাসীর পড়ার পাণ্ডুলিপি। 

রৌপ্য রায়

প্রার্থনা   


হে প্রভু আমায় ভিক্ষা দাও
ভিক্ষা দাও
আমার তারুন্য
সেই নিখুঁত দৃষ্টি
মনের সহস্র সাহস দৈহিক বল
হিংসার চোখে ধুলো ঘষে
জোয়ার আনবো সভ্যতার ।।

মনসুর আজিজ

প্রিয় স্বদেশ আমার

স্নিগ্ধতায় মেলে ধরি ভোরের জানালা
আমপাতার সৌরভ নাকে আসে সবুজ চায়ের মতো
পুবালি কুসুম আভা চায়ের কাপে যেন জ্বাল দেয়া ঘন দুধের সর
ঠোঁট ছোঁয়াতেই দুঠোঁটে লেগে যায় প্রকৃতির স্বাদ
সবুজ ঝালরের মতো দুলছে নারকেল পাতা
উঁচু ভবনের ফাঁক দিয়ে, জিরাফের মতো মাথা বাঁকিয়ে

এই ইটের উষ্ণতায় ওরা যদি ভিজাতে পারে সুদৃঢ় পায়ের পাতা
দেয়ালের রস শুষে পায় যদি সূর্যের সাক্ষাৎ
হতে পারে যদি বিরহী পাখিদের ঠিকানা
তবে আমিও পারি-
নদীর মতো আগলে রাখতে নৌকা
আকাশের মতো আগলে রাখতে সূর্য 
বৃক্ষের মতো আগলে রাখতে প্রকৃতি
নারীর মতো আগলে রাখতে গৃহ
দেশপ্রেমিকের মতো আগলে রাখতে প্রিয় স্বদেশ আমার

আমিনুল ইসলাম

যায়রে যায় দিন চলে যায়

যায়রে যায় দিন চলে যায় 
যায়রে হেলেদুলে 
আর কতদিন তোমায় আমি 
রাখব বুকে তুলে।

দূর আকাশের তারাগুলো 
নিরাশায় যে আশার আলো 
এই আসেতো এই চলে যায় 
চোখে দেয় যে ধুলো।

তুমি আমার লক্ষ্মীতারা 
আঁধার মাঝে আলোর ধারা 
তোমার আলোয় আমি চলি 
সকাল-সন্ধ্যা কথাও বলি।

ছন্নছাড়া জীবন আমার 
তোমার গতির সাথেই চলি 
আর কতদিন তোমার আলোয় 
করবো আমি ঢলাঢলি?

তুমি নেইতো হারাই আমি 
তোমার সাথে সাথেই জ্বলি, 
নয়নজলে বুক ভাসিয়ে 
ভাবছি তো হায় দিবাযামী;

যায়রে যায় দিন চলে যায় 
যায়রে হেলে দুলে 
আর কতদিন স্বপন মাঝে 
রাখব তোমায় তুলে।

ঋষি সৌরক


হোটেল কোলকাতা১ 


খনো ঘড়ি বন্ধ হয় নি  

নিতান্ত কিছু পরশ্রীকাতরতা  
বুকে নিয়ে জাল বুনছে শ্রীমদ্ স্বপ্নের মাকড়সা - 
গোটা চার অসামাজিক পিঁপড়ে হারিয়ে ফেলেছে মানচিত্র  
জুতোগুলো কি যমজ ? 

তোমার শহর কোনো কসমোপলিটন হোটেলের চেয়ে কমদামী না  
যেমন ঐ ‘’পার্সেল’’-এ রং-বেরঙ্গের মিথ্যে পুষেছো 
ছুটি দিয়ে ডুয়েটরুমাল খুলি - 
দিনবদলের মনকেমনগুলো ভাংছে  
শাখা-প্রশাখায়,  
অল্পবৃষ্টিতেই যখন সব তলিয়ে যাচ্ছে  
সহজাত কবিতা ভাসিয়ে দিলাম  
দেশলাই বাক্সের গায়ে । 

নিজেকে ঝুলিয়েও কতজন পার হোলো না রাস্তা  
তারা ভুলে গেছে - 
এই চৌকাঠ একদিন রোম্যাণ্টিক ছিলো  

শুধু এই শহরটাকে ঘুম পাড়াবো বলে  
আজো ঘুমোতে পারিনি ... 

হোটেল কোলকাতা ২ 
নিয়মের সূঁচফাঁকে নিভৃত হাওয়ার অরি -  
মেট্রোর চলন্ত দেয়াল ইরেজিত হয়  
বালিকার দো না ম না শীতে ! 
এতো মানুষ এলো কোত্থেকে ভাবতে গিয়ে  
ঈভসুমারী কুমারী চির সারদীয়, 
কি-ফলক একটি সব্যসাচী প্রোডাক্শান মাধ্যম   
কোথায় জানি লেখা আছে মোনের বাপের বাড়ি বুক 
বাঁহাতি লোকটির বাঁহাত কাটা গেলে তাকে কি ডানহাতি বলা যায়? 
কিছু কিছু কাজ একহাতে সম্ভব না  
যেমন – বাংলা কবিতা লেখা  
বানানের ভ্যানতাড়াগুলি পিঁচুটির মত জমে জ  
ফর্ম্যালাঁখি কোলকাতায়  

সমস্ত বাঁধন কিছু কপট নির্মমতা দাবী করছে  ... 


মিলন চট্টোপাধ্যায়

 পবিত্র জিঘাংসা

ক্লান্ত সাপুড়ে খা খা রোদে খুঁজে চলেছে সাপ । 
ফুলগাছের গোড়ায়  
গর্ত চিনে নিচ্ছে অভ্যস্ত চোখ । 
গাছে ফুটে আছে লাখো সুগন্ধি ফুল  
                    তবু নির্বিকার সে মানুষ !  

উঠে আসছে কালনাগ, উঠে আসছে মৃত্যু  
বাঁশি বাজছে, ক্রমশ  
             সাপুড়েই হয়ে উঠছে সাপ !  

ধুনো দিচ্ছে শোভন সমাজ আর  
নাচছে পাড়ার মহীয়সী পাগলী  
একাকার হয়ে যাচ্ছে ~ 
       সাপ, সাপুড়ে, পাগলী ! 

রক্ত ঝরছে মুখ দিয়ে 
আর সেই রক্ত  
পবিত্র জিঘাংসায় পান করে 
   সাবালক হয়ে উঠছে সমস্ত শিশুরা !

অর্ঘ্য দে

ভালোবাসো তো আমায়


ভালোবাসো তো আমায়.....
প্রতিধ্বনিত হয় মনের দেওয়ালে।
ফিরে ফিরে আসে কথায়....
প্রশ্নচিহ্নের সর্পিল বাঁকে
থমকে গেলো চোরাস্রোত।
হাতে হাত পড়তেই 
সম্পূর্ণ হয় বর্তনী...
আলো জ্বলে, গান বাজে।
হাত থেকে হাত সরলেই
আবার সেই অন্ধকার।
দ্বিধা জিজ্ঞাসা করে...
ভালোবাসো তো আমায়.....