০৪ অক্টোবর ২০১৪

২য় বছর ১০ম সংখ্যা




মনসুর আজিজ


রঙিন প্রজাপতিগুলো


রঙিন প্রজাপতিগুলো উড়ছে ডানা মেলে
লাল নীল ফ্রক পরে
প্রজাপতির আঙুল ছুঁয়ে যায় সবুজ ঘাসের ডগা
ঘাসপরী জেগে ওঠে ঘুম থেকে
বর্ণিল প্রজাপতিনৃত্য শুরু হয় ভোরের রক্তিম আভায়
সোনালু হলুদের মতো, কৃষ্ণচূড়ার লালের মতো ফিতা পরে
মাঠ জুড়ে নাচতে থাকে কিশোরী প্রজাপতিগুলো
মধ্যদুপুরে, বিকেলের লালিমায় প্রজাপতি গান গায়
সুর তোলে প্রকৃতির ডাকে
কবিতার কোরাস কাঁপনে ছন্দে হাসে গাছের পাতারা
প্রজাপতির মেলা বসে গ্রামে-শহরে-শহরতলীতে
ইস্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে বহুবর্ণিল প্রজাপতি

ডাইনিরা জেগে ওঠে ঝোপের আঁড়াল থেকে
প্রজাপতি ধরার উন্মত্ত খেলায় মেতে ওঠে তারা
শকুনের দৃষ্টি খোঁজে কিশোরী প্রজাপতি
ধারালো নখর, বিষাক্ত ঠোঁট দেখে প্রজাপতির কচি মনে জেগে ওঠে ভয়
একসাথে হামলে পড়ে শকুনের ঝাঁক
ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে নরম প্রজাপতিগুলো
অশ্রুতে ভিজে যায় ঘাসের ডগা
প্রজাপতি বন্দি হয় অহরহ
প্রতিদিন কিশোরী প্রজাপতি চলে যায়
সংসদে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ... রাজনীতিকের গোপন কামরায়
দাঁতাল কামড় বসে প্রজাপতির তুলতুলে শরীরে
ভয়াল রাতের শেষে-
প্রজাপতির ছিন্নভিন্ন রঙিন ডানাগুলো
পুরাতন ফ্রকের মতো পড়ে থাকে ডাস্টবিনে





সুপ্রিয় মিত্র


আড়ালে আড়ালে 


দুপুর গুলো সারাটা দিনের দুরন্ত সন্তান পুরোদস্তুর যেন লায়েক সকালের স্মৃতি ,বিকেলের প্রতি অন্ধ পিরিত - কাউকে ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়না

আমি এসব বুঝতে শিখেছি তাই হৃদয় কে ক্লান্তির রুমালে ভাঁজ করে , সে সময় কলেজ যাই - ক্লাস করি - কবিতা লিখিনা কখনো

তাতে আরো 'টে গিয়ে অসম্পূর্ণ দহণে দুপুর , হলুদ হয়ে ওঠে তারপর , বিকেল গড়ালে নিজেরই অহং জ্বলেপুড়ে কমলা - লাল গোধূলি হয়ে যায়

ঘরে ফিরি দরজা খুলি বিবশ গতায়াতের দেখি ,-
কখন সে জানলা দিয়ে ঢুকে আমার জন্যে করে রেখেচে এককাপ লাল চা ...
বিদায় নেবার অপেক্ষায় নাজুক ঝরে পড়ছে
বারান্দায় রেলিং  সীমান্তে






রাজর্ষি মজুমদার


অন্ধকারের মদ


অন্ধকারে থাকলে হাত নাড়াতে ভয় লাগে
দরজার দিকে যেতে যেতে -
সে যেন আমার নয় ; কতকাল পুরোনো বিছানা
কতকাল পুরোনো হয়েছে ভয়

শহর আমায় সাহস দিয়েছে, রাস্তাকে বাতি
কাঁচের গ্লাসে করে মদ খেয়ে গেছে অন্ধকারে






দীননাথ মণ্ডল


একালের শৈশব 


এতটুকু চাইনি রে সোনা
এত শোভা এত আড়ম্বর
ব্যাগ বোঝা বই খাতা
মাথায় পেতে হবে শুধু নম্বর।

ঘুমে চোখ করে ঢুলুঢুলু
দিদিমণি বকে ইস্কুলে
সারারাত জেগে পড়া
মা বলে 'আন গোটা গোটা নম্বর তুলে
নইলে এবার চাড়াবো শূলে।
ও বাড়ির ছোট রেনু
কত পড়ে রাত দিন জেগে জেগে
মায়ের হাতটি ধরে সে
যায় না কখনও ওই ফুলবাগে।
তালা বন্দি করে
এবার রাখবো তোমায় ঘরে
ইস্কুলে প্রথম হতে হবে
সারাদিন পড়ে পড়ে।'

সারাদিন পড়ার ঝাঁকুনি
মায়ের বাঁকা চোখের তিরস্কার
শিশুর মনে পরে বাঁধন 
কল্পনার নাই কোন আধিকার।

এতটুকুই চেয়েছিনু খোকা
বসন্তের হিল্ললে বাতাস ছুটুক
বুক জড়ানো ধনটি আমার
কোকিল কণ্ঠে গেয়ে উঠুক।
উড়ন্ত ফড়িং-এর পিছে পিছে
যাক্ সে দূর দুরান্তে ধেয়ে
কখনও আঙিনায় বা ফাঁকা মাঠে
খেলা করুক ফুল ফল মাটি নিয়ে।
গাছপালার সাথে ফিসফিস
করে বলবে কত কথা
হারিয়ে যাওয়া পুতুলের
সুখদুঃখের কত ব্যথা।

বেলা গড়িয়ে সূর্য যাবে ঢলে
অবশ হবে তার দুরন্তপনা
বিভোর ঘুম কেড়ে নিয়ে যাবে
তার আঁকা ছবি কত চেনা অজানা।
শিশির ভেজা কপালে
মা এঁকে দেবে ঠোটের ছোঁয়া
মায়ের এ আবেশ যেন
হিম জুড়ানো তরুর শীতল ছায়া।

সাঁঝের বেলায় আদর কণ্ঠে
মা ডাকবে 'এস খোকা, আমরা পড়ি এবার
রাজকুমারের ছুটে চলা
মাঠ ঘাট আর তেপান্তর।'





মহঃ আসাদুজ্জামান


শান্তি স্বর্গ


আমার মায়ের কাছে
একটি মন্ত্র আছে
পথ বলে দেয় সব
নতুন অনুভব
সড়ক যায় খুলে
পথ ঢেকে যায় ফুলে
হাজার তারার বাতি
কাটে আঁধার রাতি
আঁচল আছে পাতা
চক্ষু কেন রাতা!




তন্ময় ভট্টাচার্য


নিয়ম


প্রত্যেকবার
আমিই ভেঙেছি
ফিরে ফিরে গেছি
লাথিও খেয়েছি প্রতিদান হিসেবে
এবারও প্রেমিকই
আগুন এনে দেবে...




আবদার


তোর সানগ্লাসে ছিল বিশ্বাস
আমি বৃষ্টি দেখতে পাইয়েছি
যেন সাদাকালো কিছু আহ্লাদ
ওই হাসির মতোই
ধরাও যায় না
ছোঁয়াও যায় না
তবু হাসিটুকু চেয়েছি






মিলন চট্টোপাধ্যায়


অষ্টম নরক


পাঁচশ টাকায় আমার আজকের সন্ধ্যা 
স্বর্গ হয়ে গেছে !
রোজ ভালোবাসার অপেক্ষায় থেকে যা
                           অষ্টম নরক হয়ে থাকে

লাইব্রেরী যাই না বলে 
আমার মননে এখন বই নেই কথা নেই  
আছে নয় রুপী বৌ ! 

সাট্টা যারা খেলে তারাই এর যথার্থ জানে ! 

আমার বুকে শব্দ তার মোহজাল বিছিয়েছে  
আমার মাথায় একলাখ বোমা

পরকীয়া করার আগে চিনতো সবাই  
প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার আগে 
চিনিয়ে দেবো বলে
  অস্ত্রে, শান দিচ্ছি এখন ! 

দেবী, তোমার বুকের মাপ
একা আমি কেন ? 
            এইবার জানুক সবাই !