২৬ জানুয়ারী ২০১৫
শ্যামলকান্তি দাশ
তথাস্তু
বনের বাঘ, পথ ভুল করে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছি,
একটু হালুম হুলুম না করলে চলে ?
এইটুকুই তো বাঘের অলঙ্কার !
মনের দুঃখে আজ সারাদিন ঝাঁপাঝাঁপি করলাম,
হুঙ্কার দিলাম । কেউ ঘুরেও দেখল না ।
অঞ্চলপ্রধান বদ রাগী মানুষ
পেটে লাথ মারলেও এক ছটাক বিদ্যে বেরোবে না ।
তিনি আমাকে ঘাস পাতার পাহাড় দেখিয়ে বললেন :
যান, খেয়ে নিন,
বেশি চেঁচালে জিভ ছিঁড়ে ফেলব কিন্তু !
তাঁবুর ভেতর থেকে তাঁকে একবার
জুলজুলে চোখে নিরীক্ষণ করলাম,
তারপর অস্ফুট শব্দে বললাম : তথাস্তু ! গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
সামান্য সময়
যাকে চাই
তাকে দেখতে না পেলে
মনে হয়
নিঃসঙ্গ বিকেলের
কয়েকটি সত্য জানা হল
না
কীভাবে কথার ফাঁকে
একটু জায়গা খুঁজে নেওয়া
সামান্য সময়ের ধুলো লেগে থাকা
বসার আসনে থাকে ঘনিষ্ঠ উত্তাপ
এমন কল্পনা নিয়ে
যদি একদিন কেউ তোমার কাছাকাছি আসে
যার চোখে মুখে নীরোগ সৌন্দর্য
চাল ধোয়া জলের মতো স্বচ্ছতা ছড়িয়ে
সেও জানে তুলনীয় হতে
যাকে চাই
তাকে দেখতে পেলে
আরও কয়েকটি পঙক্তি এসে
আমাকেই নিঃসঙ্গ করে দিত নাসের হোসেন
অক্ষরনামা
মাটির টুকরোর মধ্যে কত যে
অক্ষর মিশে আছে
মাঝেমাঝে ভাবি এইসব
অক্ষরগুলোকে সাজিয়ে
যদি অন্যরকম কোনো আকাশ
দেখতে পাওয়া
যেত, যদি পাওয়া যেত ভিন্ন
সুগন্ধের বাতাস
এবং অবশ্যই সেসব উঠে আসতো
পুরোনোদিনের
আবহ থেকে, মাটির সোঁদা
গন্ধের কাছে নতজানু
হই, এখানেই, এই পঞ্চ ভূতে
মিষে আছে কত
কোটি মনুষ্য-পরম্পরা, কত
কোটি জন্তু-পরম্পরা,
কত কোটি উদ্ভিদ- পরম্পরা,
অজস্র অক্ষর উপছে ওঠে । সমীরণ ঘোষ
কস্মিনকাল
চিলতে চিক্কুরধ্বনি, তুমি
কবেকার না-ফোটা ডিমের শতভাগ
নীচে আমারই মাংসের পাটা,
নুনজলে জারানো সময়
যদি কস্মিনকালেও জাগে
ভ্রূণ, চিরাগ জ্বলছে
বাতিস্তম্ভ নুয়েবেঁকে
যাত্রাগহিন ওই স্রোতের পাষাণ
যদি কস্মিনকালেও ডানা
ফোটে দিগন্তের বেগানা রেখায়
নীচে থেকে তাপ দিই, আমারই
মাংসের, পূর্বপুরুষের ক্রমশ্রম তাপ
তামা ও ব্রোঞ্জের রাত ।
কিমাদেহে ঝরে যায় নিশিদগ্ধ পুবের রবার কবিরুল ইসলাম কঙ্ক
নেই নেই নেই
পাড়ায় ধুলো মাঠ নেই
বই খাতাতে ভর্তি ঝুলি
পড়ার মতো পাঠ নেই ।
মানুষ আছে জন নেই
স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকা
মনের মতো মন নেই ।
সবুজ পাতার বন নেই
কালো মেঘের আকাশ আছে
বৃষ্টি কথার পণ নেই ।
ভাবার কোনো শেষ নেই
মাথায় যখন টাকার কথা
রূপকথাদের দেশ নেই ।
পুকুর ভরা মাছ নেই
মাঠ ছেড়ে হাঁটছে চাষি
মায়ের স্নেহ কাছ নেই ।
সোনার বরণ খেত নেই
চারদিকেতে দূষণ ভারি
আলাদিনের প্রেত নেই ।
মিষ্টি সুরের গান নেই
চলছে জীবন সরলরেখায়
বাঁচার মতো প্রাণ নেই । কাজল চক্রবর্তী
অক্ষর জন্মের অধিকার
একটা ঘাসের ওপরে জেগে আছো ফুল
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা উড়ে গেল
---
ঘাসফুল তুমি একা ।
আমার হাত ভিজে আছে শিশিরের জলে
তোমাকে ছুঁতে ভয় হয় ।
তোমার নিকটে গেলে অভিমান তপ্ত হয়ে ওঠে
ভয় হয়, এই দূরে বসে দেখা ঘাসফুল
---
যদি নুয়ে পড়ে পুত্রস্নেহে ;
তবে আমার অঙ্গীকার --- !
আমি দূর থেকে দেখি তোমার পৃথিবী
অক্ষরজন্ম দান করেছো তুমি ।
এই হাত ছুঁয়ে শেষ জল-বিন্দুর
লাল শিখা পৌঁছে যাবে তোমার শীতল দু-ঠোঁটে
এ অধিকার আমি কাউকে দেব না । হাসান ইমতি
অলীক সুখ
আতস কাচের চোখ থেকে আকাশের নীল
ঢেকে দেওয়া বৃষ্টির ঝুম পর্দা সরিয়ে যখন
তুমি নারীসুলভ পেলব ছলনা মেখে পুরনো
অতীতকে ফিরে পাবার অনাবৃত বাসনায়
বহুদিন পর আবার তাকালে আমার পরিত্যক্ত
পৃথিবীর মত বদলে যাওয়া পুরুষ চোখে তখন
আর আগের মত দক্ষিণ মেরুর সব সাদা বরফ
গলে মহাপ্লাবন এলো না নুহের পৃথিবীতে ।
কেবল একাকী রাত কান্নার মত হেসে লুটিয়ে
পড়ল শরীরসর্বস্ব নারীর ক্লান্তিকর অস্তিত্বে উষ্ণতা
খোঁজা বোকা মানুষটির সুখ ভাবনার উদারতায়,
তবু তুমি স্বার্থের হিসেবী শকুন চোখের মোহ হটালে
না আমার তোমার জন্য মৃত পাথর চোখ থেকে,
সব ভুলিয়ে দেয়া মায়াবী কন্ঠে পুরনো সেই মধু
ঢেলে আগের মত জানতে চাইলে "কেমন আছো ?"
তখন ভালো থাকা না থাকার মাঝের কুমারী
পর্দাটা ছিনাল নারীর মত বেফাঁস দুলে উঠে
বলল, প্রিয়তম, আবার দেখা হবে সহরমনে,
ডানা ঝাপটানো মৃত্যুর মত বেশরম কষ্টগুলোকে
ডালপালা সহ ভেসে যাওয়া শারীরিক রাতের
নিজস্ব গল্প শোনাতে শোনাতে ফিরে পাওয়া
গাঙ হরিণের ক্ষুধিত জীবন থেকে আমি ফিরিয়ে
দিলাম স্মৃতির দংশন জর্জরিত কিছুঅলীক সুখ । ইকবাল হোসেন বাল্মীকি
জল কুমারির ভ্রমণ ও বাতাসের ছুরিকা
প্লাটিনামের চাকু ঘোরাচ্ছি বাতাসে
বাতাসের ছাল পরিষ্কার করছি
ছাল তোলা বাতাস পালতুলে
এসেছে মনের অসুখে। আমি হাঁ করি
বাতাসের রক্ত খেতে ভালবাসি।
প্লাটিনামের চাকু বাতাসে তৈরি।
বাতাস, ও বাতাস তুমি কি জিরাফের মতো
বাতাস, ও বাতাস তুমি কি বনেলা পেঁচার মতো
বাতাস, ও বাতাস তুমি কি একেলা সহবাসের মতো
বাতাস, ও বাতাস তুমি আমার দণ্ড তুমি আমার মুক্তি।
চাকু ধোতে যাবো লন্ডনিয়ামের থেক একশ মাইল উত্তরে
আলেক্সজান্ডার ও তার পিতামহ যেখানে রক্ত গর্গল করেছিল
মধ্যব্রিটানিয়ার হ্রদে।এখানে আজ এক জলকুমারি নিয়ে যাচ্ছি।
কয়েকটা ইসকাপনের অজগর সেখানে হেলে দুলে যাচ্ছে।
কয়েকটা ইস্টিলের দাড়াস সর্প দ্রুত বেগে লিক লিক করে যাচ্ছে।
আমি ‘এম ওয়ান’
নদী দিয়ে যাচ্ছি আমার নৌকা ‘টিয়েটা করোলা’।
আমার বাম পাশে তামুক ভারার জন্য সুন্দর চোকরা।
পিছনের সিটে নিচ্ছি রাতের মাংস, জল কুমারী চুপচাপ বসে আছে
তবুও বাতাসের রক্তে শীত লেগে আমার সর্দি জ্বর আসবে মনে হয়।
বাতাসের নাও ধিরে ধিরে বাও ।গান গায় সুবুদ জল কুমারি।
দমক দিলাম। ‘ এই দেখ চাকু, তোর বাতাস বের করে দেব,।
দেয়, বুক থেকে চাঁদ খুলে দেয়।
চাঁদ বর্গা দিয়েছিল কার কাছে , এতো কলঙ্ক কীসের
দেয় নাভি থেকে জলের ইন্দারা মুখে ঢেলে, মদ খায় মাতালিরা
আমি তোর ইন্দারার নিচে সুমদ্র, সমুদ্রের তলে সাগর, তার তলে দরিয়া
সব জল দরিয়া সহ ডুক ডুক খরে চাকুদিয়ে খাবলে খাবলে খাব
দেয়, আপেলের লাল অংশ চুল দিয়ে চোরি করে রেখেছিস
দেয়, বের করে দেয়---
তোর আমার দুরত্ব মাত্র দুই ফুট
আমার ধারালো কৃপান দশ ইঞ্চি। এক নিমেশে দুরত্ব মধু দিয়ে খেতে পারে।
লাল আপেলে জলকন্যার মাড়ি বসে আছে
মাড়ির চিত্রে ‘মকবুল ফিদা হোসেন’ পোশাক বানাচ্ছেন জম্ম দিনের
তিব্র গন্ধ বের হচ্ছে তৈলচিত্র থেকে। বনাজি তেলের গন্ধ।
উরদংগের বিষ নামানোর গন্ধ। জল কুমারীর নাভির গন্ধ।
আর পারিনা। স্টিয়ারিং নৌকার পিছনের সিটে নিয়ে আসি।
নৌকার জানালা পানির মত কাঁচের। দেখা যায় হলুদ সরিষার মনোহর আগুন
এখন বাতাস নৌকা চালাচ্ছে, বাতাসের হেন্ডেল কে ঘোরায়?
আমি জল কুমারীর নিদ্রার পট্টির উপর লোহার হুক
চাবি খোঁজতে পেরেশান হয়ে গালের আলতায় জিহ্বা ঘষে দিয়েছি।
কি স্বাদে পায় পোড়া মাটির ক্যামিকাল লাগিয়ে- রূপ সত্যি কি বের হয়?
রূপের ভেতরের রূপে আলকাতরা, জল কুমারিদের আমি লবনের মতো চিনি।
জাপানিরা ভালো নৌকা বানাতে পারে, চরে আটকায় না।
সাসপেন্সসন রাস্তায় গেঁথে তাকে, দোলনিতে অরিতিক্ত আরাম
জলকুমারিকে বসন্তের মতো দোলায়, কোমরে যেন অলৌকিক ইস্প্রিং।
সুন্দর বালক, কল্কিটা এগিয়ে দাও। আরেকটু ফিলিংস ভরি। সেন্সেসন।
বালকের মুখে আরক্তিম হাসি। দেবদুত বালক নিপুন কল্কির কারিগর। একটু উদাস।
চালাক হয়োনা বালক। তুমিও বাতাসের চাকু থেকে দুরে নও
উভয় কামি বাতাস সব লিঙ্গের সুন্দর্য তালুতে কছলাতে জানে বলেই জীবন এত সমকামী।
মনের বৈটা নব গুরিয়ে জলাশয়ের দিকে মনোযোগ দেয়
জলাশয়ে বাতাসের গর্জন,
বাতাসের কান্না, বাতাসের ছন্দ
জলাশয় উপচে পড়ছে তীব্র নীল জলে, জলে বন্যা ও মাছের চীৎকার
পারের কৃষ্ণ শেফালি ধানে চপ চপ শব্দে মাগুর মাছের দ্রুত যাতায়াত
জল কুমারির বনিতা ভেঙ্গে পড়ে বন্যায়,
সে কাঁদে জন্মদিনের আনন্দের মতো।
পরিশ্রান্ত বাতাস ছুরিকা ঘুমাতে চায়। জল কুমারি বুক এগিয়ে দিলে-
বাতাসের ছুরিকা নেতিয়ে পড়ে; এখানে প্রেম ও বিশ্বাসের কোন ছায়ামায়া নেই।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)