০১ জুন ২০১৫

৩য় বছর ৫ম-৬ম সংখ্যা




কবিরুল ইসলাম কঙ্ক


চিঠি

আগের বছর চিঠিতে বৃষ্টি পাঠিয়েছিলে
ক্যাম্পাসের চিলতে রোদে একঝাঁক স্পর্শ
স্পর্শন পাঠ্যবইয়ে । হিমঘরে রাখা আছে
সেইসব রঙধনু  অধ্যায়

এবছর বৃষ্টিতে বাষ্পের ছলাকলা কৌশল
মুখ বুজে ক্লান্তির ঘনঘোর মেঘ
বারান্দায় কারও দেখা নাই
পোস্টম্যান, চিঠি দিয়ে যাও

পরের বছর কোথায় পাঠাবে চিঠি
আমার ঠিকানা আবার পাল্টেছে
বৃষ্টি চিঠি আমাকে ভিজিয়ে দিও
যেখানে দেখবে সার্কাসের তাঁবু 








শুভঙ্কর ঘোষ

এই মেয়েটি 



দুরন্ত ট্রাম হলুদ বিকেল 
রাত্রি নিকষ কালো ,
অজ পাড়াগাঁয় শাড়ীর আঁচল
এই মেয়েটি ভালো

এই মেয়েটি জাগরণের
মিছিল পায়ে হাঁটে,
এই মেয়েটিই জলকে চলে
শহরের স্নানঘাটে

ভোরের পাঁপড়ি,জলীয় বাষ্প 
চোখের তারায় মেশে,
এই মেয়েটিই নাট্যমেলায়,
উজ্জ্বল বিদ্বেষে । 


আমার চোখে নতুন ভাষায়
নতুন কাব্য হয়ে,
এই মেয়েটিই বনলতা
পদ্মাপারের মেয়ে




কৌশিক বড়াল

প্রেয়সী তোমায়

দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আন্তরিক
চাতক পিপাসা, পুড়ে যায়
ভিতরে কামনা
অস্থির আদল ভেঙে মনপাখি উড়াল দেয়
হাজারো আকালি রঙ মুছে ন্যুব্জ গোধূলি
স্বপ্নিল সম্পর্কে তোলপাড়, খরতাপ শেষে
বৃষ্টি নামে অনাবাদী জমিতে

প্রসংসা কৃতজ্ঞতায় মোড়া রোজনামচা
জ্যোৎস্নাগড়া পেলব সুখস্মৃতি, মনের কোণে
উঁকি দেয় এক চিলতে প্রেম

উদ্বেগের স্বরলিপি পাঁজরে আত্তীভূত
প্রতীকি ভালবাসায় খাতাভর্তি কবিত, হিমেল বাতাসে
নগ্ন নির্জন হাত

নিবিড় সান্নিধ্য খুঁজে নেয় অলৌকিক মৌনতা
নিরাকার বায়ু নিষ্কাম নির্বিকার, আশার ডিঙ্গিতে
বেঁচে রয় টুকিরো সংলাপ, প্রেয়সীর ঈপ্সিত
মনোবাসনার স্মৃতি হয়ে।

গার্গী মুখার্জী

ট্রেন চলেছে 



ট্রেন চলেছে  ঝিকিঝিকি 
রোদের পরশ গায়, 
কত দেশ ঘুরে ঘুরে
কোথায় শেষে যায় ?


ট্রেন চলেছে ঝড়ের বেগে
উড়িয়ে ধুলো  বালি
কখনো সে বোঝায় ভিড়ে
কখনো  বা খালি


ট্রেন চলেছে বৃষ্টি ঝড়ে
রাতের  পর দিন,
পথ বড় কঠিন, কঠোর,
বিরামসে তো  ক্ষীণ


ট্রেন চলেছে আপন তালে
আপন ছন্দে সুরে,
বিরাম স্থিতি সব ভুলে তাই,
যাবেই যাবে দূরে। 







গুচ্ছকবিতা- সৌরভ হোসেন

ঝরাফুলের হিসেব


কটা ঝরা ফুলের হিসেব  রাখে গাছ......একটাও না
পাতা ঝরার নিশ্বাসও গায়ে মাখেনি কখনও
শুকনো পাতার মৃত্যু-গন্ধ শুঁকে যে প্রেম....
সেও কখনো রং মাখেনি
হিসেব রাখি আমি
রংও মাখি আমি
শুধু শ্বাস মাপার উত্তরাধিকার নেই আমার
কারন......
প্রেমের খোসা ছাড়ালেও
আমি কখনও প্রেম খুন করিনি। 


প্যান্টের চেন
আমার প্যান্টের চেনে .......
   
একটা স্বপ্ন আটকে আছে
পাছা ঘষটানো বুজরুকদের ব্লাউজ
উদরানোর         লোকলজ্জায়........
থুতু ফেলতে পারছে না

চুঁইয়েই যাচ্ছে ধরমের পোটা

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নদীর তহবোনে
ছ্যাচ্ছাড় করে মুতা' কথা ছিল তার  


রোদ্দুর রঙ

এই রঙই তো এতদিন ছুঁতে চেয়েছি আমি
রঙ মেখে হতে চেয়েছি রোদ্দুর
শুধু বদলে গেছে তোমার ঠিকানা
তোমার আকাশ তোমার ভেজা শরীরের উত্তাপ 







গুচ্ছকবিতা- অনির্বাণ হালদার

তুমি কাছে থাকলে

তুমি কাছে থাকলে 
আঁধার হয়ে থাকা সবুজ বুঝতে পারে না
আলোয় কখন সবুজ হয়ে গেছে
তুমি কাছে থাকলে 
সকালের চাষি বুঝতে পারে না
পথটি কখন ক্লান্ত ঘর-মুখো হয়ে গেছে
তুমি কাছে থাকলে বোঝা যায় না
দীর্ঘ পথ কখন ছোট হয়ে যায়
দীর্ঘ বসে থাকা কেন অল্প হয়ে যায়
তুমি কাছে থাকলে বোঝা যায় না
কখন বেলা গড়িয়ে আসে।


বসে আছি তোমার কাছে

বসে আছি নদীর ধারে 
বসে আছি তোমার কাছে.....
শীতল বাতাস জলে তোলে ঢেউ 
ঢেউ ছুটে আসে কিনারায়
তোমার দুটি পা ভেজাতে
বসে আছি তোমার কাছে......
পাখিদের ঠোঁটে ভোরের গান,
তোমাকে ছুঁয়ে যায় বাতাস
বাতাসে সবুজের গন্ধ 
দেখ........
মেঠো-সোনালী ফসলের স্পর্শ পায় 
মাথাল মাথায় চাষি 
আনন্দে হাঁটে আল ধরে
নদীর ধারে 
দু'চারটি শালিক চড়ুই সাথ-এর সাথে
মাটি খুঁটে পোকা খায়.......
কয়েকটি বক ওত পেতে থাকে রূপোলী ঝলকে,
ওদের স্বচ্ছন্দতা তোমার আঁচলে
খানিক পরে ঠিকরে পড়ে রোদ 
ঠিকরে পড়ে জলে
হালকা ঢেউ অসংখ্য তারাকে ভাঙে-গড়ে
ঝিকমিকে আলো পড়ে তোমার গায়ে  
বসে থাকি......
বসে থাকি তোমার কাছে
বসে থাকি আনন্দে  


পাথেয়
নিজস্ব আকাশে যখন মেঘ জমে ওঠে 
তোমাকে অনুভব করি ,
রঙিন আকাশের নীচে সবুজে বসি
তুমি-আমি বা আমি-তুমি....
ব্যস্ত জীবনের পান্ডুলীপি থাকা শুকনো পাতাগুলি
ক্রমাগত সরে সরে যায়....
সারাদিনের তপ্ত ধূলিকণাগুলি খোঁজে 
রাতের নিস্তব্ধতা.....
অবশেষে মেঘ ভেঙে হয় বৃষ্টি 
বৃষ্টি আনে রামধনু
রামধনুতে ফোটে আনন্দের রেখা 
আমার ব্যস্ত জীবনের  পাথেয়


প্রকাশ

আকাশের গায়ে অসংখ্য তারা ছিল
তারা থাকলে কি হবে 
অন্ধকার ঢেকে রেখেছিল তোমায় ....
শিশিরে ভেজা তৃণ.....
আকাশ সারারাত কেঁদেছিল  




তাহির হাসান মহম্মদ সফি

করুণাময়ী 
জননী আমার জননী জন্মভূমি 
ওমা কষ্টে আছো তুমি ?
আঁখি সম্মুখে ঘটছে যেসব
শয়তান দলের নৃত্য
কাল যে তোমায় হার মানাল 
বাধ্য হয়ে ভৃত্য
কখনও তুমি মাতৃরূপে 
কখনও প্রনয়ণী
কখনও আবার স্নেহময়ী
ভগিণী রূপে চিনি
ওগো মাতা , তুমি ওগো ছিলে বলে 
অধম গুলো জনম নিলে 
লালন পালন করলে তারে 
শত যন্ত্রণাতে
পরিশেষে একি পেলে 
ঘরে-বাইরেতে 
ধর্ষণ চরে গেল চলে 
কেউবা বৃদ্ধাশ্রমে
তবুও তোমার অশেষ মায়া 
অসীম তোমার করুণা 
নয়ণ জল লুটাও তারে 
যতই দিকনা যন্ত্রণা ।