১১ এপ্রিল ২০১৬

৩য় বছর ৪র্থ সংখ্যা








কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

নতুন বছর নতুন দিনে

নদী জলে পেখম তুলে
নতুন বছর হাওয়া,
পাতায় পাতায় নতুন খবর
নতুন করে পাওয়া

পাখপাখালির ডানায় ডানায়
নতুন বছর উড়ান,
ফুলে ফুলে মৌমাছি দল
ফুল মুকুলের ঘ্রাণ

ছবির পাতায় রাঙা রঙে
জলছবিদের ছবি,
উঠছে বেজে নতুন সুরে
বদলে গেল সবই

ঘরের মাঝে, বাইরে ঘরে
উৎসবেরই ছোঁয়া,
নতুন দিনের আনন্দেতে
সবার পাগল হওয়া

নতুন নিয়ে ভাবনা যত
নতুন নিয়ে গান,
নতুন এবার দিক ভরিয়ে
সবার তৃষি প্রাণ । 



দেবাশিস সাহা

আত্মা 

বেলুনের মধ্যে আত্মা চালান করছে 
বেলুনওয়ালা 
সে বেলুনের ঈশ্বর 

বেলুনের ঘাতক 
যে কেউ হতে পারে 

যে কেউ কেড়ে নিতে পারে 
বেলুনের আকাশ 

প্রতিটি ছেলেবেলা 
রঙীন বেলুনের বন্ধু 

আততায়ী আলপিন 
কখন যে কার হাতে এসে যায় 

আমাদের আত্মা আর আলপিন 
ছদ্মবেশী জাদুকরের দু-হাতে... 




সৌরভ হোসেন

কবরের অনুসঙ্গ ২ 

এখন আর পোশাক বদলে কী হবে
উঠোনের ছণ্চেতে ঝোলা পেতে বসে আছে কবর
একটা বিজ্ঞাপন বিরতির জন্য তুমি অপেক্ষা করছো
একটু ফুরসত পেলেই বদলে নেবে পোশাক

কিন্তু তোমার জেনে রাখা দরকার...
কবরসিরিয়ালে কোনও বিজ্ঞাপন বিরতি নেই । 






গার্গী মুখার্জী

ইচ্ছে পাখি 

ইচ্ছে পাখি ইচ্ছে পাখি আকাশময় ওড়ে, 
ইচ্ছে পুতুল জন্ম নিল দুঃখী মায়ের ঘরে। 

ইচ্ছে পাখি স্বাধীন তুমি ইচ্ছে ডানায় ভর, 
ইচ্ছে পুতুল আজকে আপন কালকে তুমি পর। 

ইচ্ছে পাখির ইচ্ছে আপন আপন মনের রাজা, 
কারও কথায় যায় না এসে কেউ দেয় না সাজা। 

এর ইচ্ছে তার ইচ্ছে সবার ইচ্ছে জেনে 
ইচ্ছেপুতুল ভুলেই গেছে আপন ইচ্ছে মানে 

ইচ্ছে দড়ির টান দিয়ে সব নাচায় পুতুল নাচ 
নাচতে পুতুল তৈরি সদাই এটাই যে তার কাজ। 

ইচ্ছে পুতুল ভুলেই গেছে ইচ্ছে ডানা তার 
সবার সাধ মিটিয়ে কেন বইবে জীবন ভার। 

ইচ্ছে পাখি ইচ্ছে পুতুল বাড়ুক না এক সাথে, 
স্বাধীন আকাশ উড়ে বেড়াক দিনে এবং রাতে । 




পবিত্র চক্রবর্তী

বাঘের গল্প 

এসো একটা গল্প বলি - 
হাউ মাউ করে এক বাঘ বলল , 
সৃষ্টির শুরু থেকে আমরা উলঙ্গ,
জৈবিক প্রবৃত্তির স্বাদ মেটাই নির্দিষ্ট সময়ে - 
ক্ষিদে পেলে আরেক নগ্ন জাতিকে খাই ! 

তখন,গর্জন শোনা গেল অপর প্রান্তে ! 
বাঘ বলল -ঐ যে আসছে মান-হুঁশ বাঘ; 
আদম-ইভের যুগে বা প্রসবের পরে -
নগ্ন থাকলেও হয়ত সিভিলাইজেশনের পোশাক পরে 
আর ক্ষিদে পেলে সব পেটে যায় - 
ফুটপাতের ময়লা মানুষ পশু অথবা ক্ষীণ-দুর্বল জাতভাইয়ের -
 চুকচুক করে পান করে টকটকে নোনতা শোণিত - 
            হাড়ও যায় না বাদ ! 

       আসলে পার্থক্য কি জানো ? 
     বুনো আর মানুষ বাঘদের মধ্যে! 
বুনোটা 'কথিত' সভ্য হয়নি ,তাই ষে উলঙ্গ মুখোশহীন,
লেজ টানলে মাথাটাও আসে;আর ' ওরা ' - 
বাঘের চামড়াধারী সেই গল্পের গাধার দল;
 সময়ে সময়ে হাঁক পাড়লে ' বাপস ' বলে ! 

দিই কানে আঙুল ! মুশকিলটা হচ্ছে - 
লেজ নেই বলে কান-মাথা আসে না ! 
     রাজত্ব চালায় বীর বিক্রমে  - 
কানে দিতে ভয় হয়,যদি তাও খুলে আসে তাই , 
জ্ঞান দিলেও আমরা তালা কিনি - 
   আর জমিয়ে চোখ বুজে কানে গুঁজি ! 




০৮ এপ্রিল ২০১৬

জোকস


বিশ্বজিৎ মণ্ডল

ডানার গন্ধ 

এভাবেই ভিজেছি  উদ্দাম বৃষ্টিতে 
শরীর জুড়ে হু হু শ্রাবণের গন্ধ 

এইবার বৈষ্ণবী তোর অলৌকিক ডাকে 
জেগে উঠেছি মধ্যরাত্রে 

আর বাধা দিস না প্রিয়ভাজন............ 

তোর উঠোনে অঢেল রোদ 
চল দু'জনে ভিজে চলি অনর্গল........ 




দীননাথ মণ্ডল

একুশের মা 

প্রাণ জুড়ানো মধুর কথা 
      দিল আমার ঠোঁটে 
গুছিয়ে রাখা স্নেহের পরশ 
      মায়ের আঁচল পুটে। 

কণ্ঠভরা মুখের সুধা 
       শব্দ তালের বোলে 
চক পেনসিল নাড়িয়ে শিখি 
       বসে মায়ের কোলে। 

বুলিয়ে মাথায় আলতো পরশ 
       কণ্ঠ কোকিল সুরে 
নীলপরীদের তেপান্তরে 
       গল্প আকাশ দূরে। 

রক্তচক্ষুর বিদ্ধ পেরেক 
      থোরাই করে কেয়ার 
বিশ্বমাঝে খুলল ওরা 
        বাংলা ভাষার দ্বার। 

প্রাণে ধরে তাই রেখেছি 
        মায়ের দেওয়া দান 
রক্তে গাঁথা স্মরণ স্মৃতির 
        একুশের সন্তান। 




সোহরাব উদ্দিন মণ্ডল

প্রথম চুম্বন প্রসঙ্গে ... 
                                     
তোমার ঠোঁট তোমারই আছে-
তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁট  মিলেছে,
একবার নয় বহুবার।
অস্থির ঠোঁটে জমাট রক্ত তোমার,

একবার নয় বহুবার।
তোমার ঘাড়ে-ঠোঁটে-গালে আমার উপস্থিতি,
একবার নয় বহুবার।
চাইনিতো অধিকার বলে-
গ্রাস করতে তোমার ঠোঁট,
তোমার ঠোঁট তোমারই আছে।
পড়ন্ত বেলার লিপিস্টিকে ভরেছে-
আমার ক্ষুধার্ত অন্ত্রাতিঅন্ত্র,
তোমার ঠোঁট তোমারই আছে।।

আজও কি তোমার ওই ঠোঁট
তোমারই আছে বন্ধু ?
শুনেছি, তোমার ওই ঠোঁটে
অধিকার ফলাতে এসেছে
কোন এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ?
শুনেছি তোমার ওই দেহে
রোজ রোজ থাবা হানে
বাঘনখ দিয়ে?
একবার নয় বহুবার।।

আজও আমার ঠোঁট,
আমারই আছে -- বেঁচিনি তো কাউকে।
এখন আমার অন্ত্র ভরে
লিপিস্টিকে নয়--
অ্যালকোহলের স্তরে,
একবার নয় বহুবার।
এখন আমার ঠোঁটে ঠোঁট মেলায়--
নিকটিনের জ্বলন্ত মশাল,
একবার নয় বারবার।।

আজও আমার ঠোঁট,
আমারই আছে --দিইনি তো কাউকে।
যে ঠোঁট ছুঁয়েছিল-তোমার ঠোঁটে,
প্রথম বারের জন্য এঁকেছিল--
সাদা ক্যনভাসে সন্তত চুম্বন,
একবার নয় বহুবার।
তবুও, আজও আমার ঠোঁট,
'তোমারি' আছে দেব না তো কাউকে ।




কৌশিক গাঙ্গুলি

কেয়ার করি না 

যাদের গা ভর্তি চুলকানি অথচ গায়ে তসরের পাঞ্জাবি , 
আমরা তাদের কেয়ার করি না । 
যারা দলবেঁধে দাদাগিরি করে আবার গ্রেফতারের ভয়ে লুকিয়ে থাকে, 
আমরা তাদের কেয়ার করি না । 

যারা কাজ ফুরিয়ে গেলে চিনতে পারেনা , 
আচরনে থাকে ঔদ্ধত্য , আমরা তাদের কেয়ার করিনা । 
যারা দেশের কথা বলে নোট কামায় , মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় , আমরা তাদের কেয়ার করিনা ।
 যে নারীরা মিথ্যা বদনাম দেয় , যে পুরুষেরা রেপকে বীরত্ব ভাবে আমরা তাদের কেয়ার করিনা । 
যে সন্তানেরা মা-বাবাকে অবহেলা করে , 
যে পিতা-মাতা সুসন্তানকে  অনাদর করে , আমরা তাদের কেয়ার করিনা , 
যারা মাতৃভূমির ক্ষতি করে , যারা অন্ধকার ভালোবাসে , আমরা তাদের কেয়ার করি না । 
যারা গুনীদের অপমান করে আর অপরাধীদের স্যালুট করে আমরা তাদের কেয়ার করিনা । 
যারা অর্থের জোরে মনুষত্যকে ছোটো করে ,ভন্ডামি করে , আমরা তাদের কেয়ার করিনা । 
যারা মানুষকে পুতুল ভাবে বা মৌলবাদী , ধ্বংসই নেশা - আমরা কেয়ার করিনা তাদের ।



যোগেন বিশ্বাস

বাঁচো  

জ্বালা ! বড্ড জ্বালা, আজ তীব্র বিষে 
সমাজ, আজ কঠিন নাগপাশে । 
আর কতদিন ? সহিবে সবে, 
সবই যে আজ ধ্বংসের পথে ! 

সমাজের মাঝে বাসা করছে ঘুন 
চারপাশে হচ্ছে কেন খুন ? 
জাগো আজ হে মহামানব 
ধ্বংস করো সব যন্ত্র দানব । 
মানবতা, আজ বেশি প্রয়োজন 
কিছু ক্ষেত্রে হচ্ছে আয়োজন । 
পেছনে ফেরার নাই সময় 
তোমাকে আজ সবারই প্রয়োজন । 
করুণা নয়, অর্জন করো 
ভিক্ষাবৃত্তি বর্জন করো ! 
নিজের হাতেই, হালটি ধরো 
সম্মুখেতে এগিয়ে চলো।