০৩ নভেম্বর ২০১৬

৩য় বছর ১১ সংখ্যা







হাননান আহসান

খাতার পাতায় বিউটিফুল

আঁকতে পারি গোলকধাঁধা
আঁকতে পারি অচিনপুর--
আমার মামার মাসির ছেলে
আঁকতে পারে গানের সুর।

আঁকতে পারি উজানভাটি
আঁকতে পারি ডুমুর ফুল--
ছোটো দাদুর পিসশাশুড়ি
আঁকতো ভালো মনের ভুল।

আঁকতে পারি হুকুম কড়া
আঁকতে পারি বাঘের দুধ--
ঠাকুরদাদার মেজো কাকা
এঁকে ফেলতো সরল সুদ।

আঁকতে পারি গরহাজিরা
আঁকতে পারি ঝিকির ঝিক--
দিদির বড়ো ছেলের মেয়ে
আঁকতে পারে কোনটা ঠিক।

আঁকতে পারি ফন্দিফিকির
আঁকতে পারি চক্ষুশূল--
আজ এঁকেছি খাতার পাতায়
একটা ভালো বিউটিফুল।      


                  

নীলিমা সাহা

কাছের জানালা    

শাখায় শাখায় হেমন্ত
বৃক্ষশীর্ষে তবু
দুঃখলিপি

ফিরে  গেল চোদ্দটা বছর 
ধুলোর জানালা 
মোছা গেল না

কালো মেঘের আকাশ
সন্তর্পণে
চাঁদ ঢেকে দিল

-বাক অরণ্যকাণ্ড
শেষ হয়েও যুদ্ধ
হইল না শেষ

শব্দের শহর ফিরে দ্যাখে
আলোর উল্লাফ
সীতার বোবাদঋষ্টি দ্যাখে দাগ

অথবা আমি  দেখি সিক্সথ অ্যাভিনিউ
পথ বদলে পথ

হাঁটছে সন্ন্যাসিনী একা...




আশিস মিশ্র

বৃষ্টিভেজা ঠোঁট

মেঘ ঢেকেছে চাঁদ
উড়ে বসছে জোনাকি
বৃষ্টি মেলেছে ফাঁদ।

বৃষ্টিভেজা ঠোঁট
গভীর রাতে তুই
জটিল হয়ে ওঠ।

বুঝেছি তোর ভাষা
সোজা সাপ্টা হিসেব
আর শুধু প্রত্যাশা।

ওষ্ঠে মায়া লেখ
যে লেখা আজীবন
পদ্যে মেখে শেখ।

রহস্যময় থাক
বৃষ্টিভেজা ঠোঁট
পুড়ে যাচ্ছে যাক।



নরেশ মণ্ডল

কতটা টান টান হতে পার

বিষণ্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আছি
উলুখাগরার মতন জীবন
কে কখন কোথায় বিকিয়ে যাচ্ছে
ইচ্ছা অনিচ্ছায় 
নিয়ন্ত্রণ মানে না
নলের সামনে গরম সিসা
কার ইজ্জত রাখবে তুমি
বাবা, স্বামী না নিজের
সবই তো কপটতা নয়
যুদ্ধটা ক্রমশ কঠিন 
শিরদাঁড়া কতটা টান টান রাখতে পার
সেটাই এখন দেখার।



কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

মনিটর উপত্যকা 

ঘুম ভাঙতেই নদী এসে দাঁড়ায় প্রান্ত বিকেলে
হলুদ রোদের শেষ ছায়া শুষে নেয় পর্দা-সুখ,
রূপালি আলো ঘেরা বাগানে উদাস গাছেরা  
বেলাভূমি জুড়ে । বৃষ্টি আশায় সতত উন্মুখ ।

তারপর ভেতরের যত বনভূমি, যত উৎরাই
সব রৈখিক আবর্তনের গল্প মারা যায় মাঠে,
ন্যুব্জ সাংকেতিক অক্ষরের হয় নাকো ভোর
থাকে না কোনো যতিচিহ্নের ব্যবহার পাঠে ।

সুখ-দুঃখের মনোহর কাহানিয়া নিয়ে ঘর
ভোল্টেজ বাড়া-কমায় কাঁপে ব্যস্ত মনিটর ।




দেবাশিস সাহা

প্রসাধন

          আলোর ঘনত্ব অনুযায়ী
বাড়ি বদলে নেয় মানুষ
তুমি ঘর সাজাও
আয়না সাজিয়ে দেয় তোমাকে
চুলগুলো কখনো কখনো
 বেড়াতে যায় মেঘেদের সাথে
 পুকুরপাড়ে
অবেলায়  এলোমেলো যত্নের অঙ্গ
সময়ে সময়ে তেল দিয়ে
শাসন সোহাগ

হে বৃক্ষনাথ
কি গাছজন্ম দিলে

মানুষের মুখোশে মিথ্যে হাসি সাজাই




পত্রিকা সংবাদ

মোহম্মদ শাহবুদ্দিন ফিরোজ 

শারদ ছন্দ ১ 

আট থেকে আশির প্রিয় পত্রিকা "কিশোর ভারতী"। যদিও নামেই কিশোরদের, সব্বাই কিন্তু পড়ি উৎসাহ নিয়েই। দেখা যাক শারদীয়া ১৪২৩ সংখ্যায় কী আছে... প্রফুল্ল রায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, আনীশ দেব, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় সহ ১৩টি উপন্যাস। প্রয়াত সাহিত্যিক দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এঁর অপ্রকাশিত গল্প। নচিকেতা,  পি সি সরকার(জুনিয়র), চুমকি চট্টোপাধ্যায় সহ হাফডর্জন বড় গল্প। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ১৮জন কথাসাহিত্যকের গল্প। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙখ ঘোষ, শ্যামলকান্তি দাশ, শ্রীজাত, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনাকী ঠাকুর সহ একগুচ্ছ কবির কবিতা ও ছড়া। এছাড়াও ভ্রমন,খেলা, কমিক্স সব আছে। প্রচ্ছদ সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়।  এত কিছু মাত্র ১২০টাকায়। আপনি না পড়ে থাকলে আজই খবরের কাগজ বিক্রেতাকে আনতে বলুন...




শারদ ছন্দ ২

মুক্তিরাম মাইতি-র সুদৃশ্য প্রচ্ছদে প্রদীপ গুপ্ত সম্পাদিত "যুগ সাগ্নিক" শারদ সংখ্যা ১৪২৩। ত্রৈমাসিক এই পত্রিকা নিয়মিত ভাবেই প্রকাশিত হচ্ছে চার বছর ধরে। মূলত কবিতা প্রধান পত্রিকা হলেও গল্প, অনুগল্প, প্রবন্ধ, অনুবাদ সাহিত্য, নিবন্ধ, ইংরাজি সাহিত্য সবই থাকে। আশিস সান্যাল, পবিত্র মুখোপাধ্যায়, রত্নেশ্বর হাজরা, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রত চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত সহ প্রায় তিন'শ কবির কবিতা দুই মলাটের ভিতর আছে। স্বপ্নময় চক্রবর্তী, বিনোদ ঘোষাল, চুমকি চট্টোপাধ্যায় সহ প্রায় পঞ্চাশটি গল্প। প্রবন্ধে ড. অশোককুমার ভট্টাচার্য, পংকজ নাথ, লোটাস সরকার ও অন্যান্য। অনুবাদ সাহিত্যে জয়া চৌধুরী, অমল কর ও কয়েকজন অনুবাদক। সঙ্গে অতিরিক্ত পাওনা শারদ ক্রোড়পত্র। ৩৬৮পাতার এই পত্রিকার দাম মাত্র ৫০ টাকা। পত্রিকা পাবেন ধ্যানবিন্দুতে। আরো বিশদ জানতে যোগাযোগ করুন সম্পাদক প্রদীপ গুপ্ত, মোবাইল ৯০৮৮৩৮৪৮৯৬ 






গোপাল বাইন

দুলছে বিশ্বভুবন

মন ভাসালাম ফুল ভাসালাম তোমার স্রোতে
ছায়াপথে চলল তারা ভাসতে ভাসতে
কিনারা নেই ঘাটও নেই কেবল চলা চলা
ঢেউয়ে ঢেউয়ে উথাল পাথাল জড়িয়ে ধরি গলা

কেবল তুমি কেবল আমি কেবল আমরা  দুজন
এমনি করেই চলছি ভেসে দুলছে বিশ্বভুবন



বিশ্বজিৎ


দীননাথ মণ্ডল

হেমন্তের পর

হিম জড়ানো সকালবেলায়
সূর্যমামা হাসে
সোনার প্রদীপ জ্বলছে যেন
সবুজ মাঠের ঘাসে
ছড়িয়ে আছে হিরের দানার
বিন্দু বিন্দু ধারা
বুকের মাঝে শীতের আমেজ
দেয় একটু নাড়া
ধান পেকেছে মাঠে মাঠে
ভর্তি হবে গোলা
নবান্নের ক্ষীর-পায়েসে
দেয় আনন্দ দোলা
গাছের পাতায় বিষাদসিন্ধু
হলুদ রংয়ের সাড়া
হেমন্তের ওই শুষ্ক বাতাস
নাড়ছে শুধু কড়া



যোগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস

ক্যারামবোর্ড

লুকোচুরি চলছে খেলা
জ্বালাও অগ্নিকুন্ডু
কে কতটা আনলো দেশে
কত নরমুন্ডু ?

দুই ভাইয়েতে যুক্তি করেই
যুদ্ধ নামের খিচুড়ি
বুদ্ধ মোরা গিলছি ভায়া
ওপরওয়ালার জচ্চুরি

দেশটা হলো ক্যারামবোর্ড, আর-
ভিন্ন রকম গুটি
দুই পাড়ে'তে দুই খেলোয়ার
স্ট্রাইকার চলে ছুটি

পাকা মাথার চাটনি রে ভাই
হচ্ছে বসে রান্না ,
মাঝেমধ্যে তাই তো শুনি
গান স্যালুট, আর কান্না



সুদীপ্ত মন্ডল

জন্মের দাগ

জন্মের দাগ কবেই ভুলেছি
সুতো ছিড়ে ফেলেছি
নাড়ির টান নেই
সব ভুলেছি
নিজের মাকেও রেখে এসেছি
বৃদ্ধাশ্রমে
ভুলতে ভুলতে নিজের
দেশের নামও ভুলেছি


মায়ের কথা

মায়ের কথা মনে পড়লেই
সন্ধ্যাপ্রদীপের কথা মনে
পরে যায় আমার
তুমি প্রদীপের আলো ভুলে
নিয়ন আলোয় ঘর সাজালে
সত্যি কী আলোয় ভরেছে
কেমন আমায় মাতালে!






সুকান্ত ঘোষাল

মেঘের মতো

মাথাব্যথার ছদ্মবেশে যারা সামনে এসেছিল
বিস্তারিত পরামর্শের পাশাপাশি
আমি ধরে নিচ্ছি বিজয়ীর মনখারাপ

জনদরদি ছন্দের রোমাঞ্চে তুমি
             জানলার ধারে
অনেকটা মেঘের মতো ছোট
                              বাক্সে ঠাসাঠাসি

আর সব ভুল লোকের ফোন মনে করে
অনুমান সহজ হচ্ছে না
                          এই শুকনো পথের

নিশ্চিন্ত যেটুকু - পুনরায় লম্বা বাঁশি

আর আগের মতোটিকে এড়িয়ে যাওয়া । 



গার্গী মুখার্জী

ছড়াছড়ি

ছড়ার আমি ছড়ার তূমি
ছড়ার ছড়াছড়ি
ছড়ার মাঝে ভেসে বেড়াই
ছড়ায় খেলা করি।

ছড়া আমার ছড়া তোমার
সবার মনের রাজা,
ছড়া ছাড়া বেঁচে থাকা
সে যে বড় সাজা।

ছড়ায় হাসি ছড়ায় কাঁদি
ছড়ায় কথা বলি।
সুখ দুখে আনন্দেতে
ছড়ার সাথেই চলি। 

ছড়ার আমি ছড়ার তুমি
ছড়ার ছড়াছড়ি
ছড়া নিয়েই বেঁচে থাকি
ছড়ায় ভাঙি গড়ি।   


                     

কৌস্তভ

ব্যর্থ প্রেমী ...

মনে পড়ে না শেষ কবে কবিতা লিখেছি
তোমার জন্য তোমার প্রত্যেক চিঠির উত্তর
দ্বিতীয় লাইনের পর আটকে গেছে
বুঝতে পারি, তৃতীয় লাইনটাই সবথেকে
দামী! ছড়িয়ে থাকে একান্ত হবার ইচ্ছেগুলো
হয়তো তুমি আশা করেছো বারবার! আমি
তৃতীয় লাইনটাও দিতে পারিনি কখনো আমার
অনবরত দেরী হয়ে যাচ্ছে!

প্রত্যেকবার ভাবি, হলদিয়া বন্দর থেকে
কিছু আধফুটন্ত শিউলি আনবো উপহার
দেবো চিঠির বাণ্ডিল বা ব্যর্থ প্রেমের
বিজয়কাহিনী! প্রতিটা মুহূর্তে দুহাত ভরে
শব্দ দিয়েছো তুমি আমায় শব্দের কাছে
জমেছে পাহাড়প্রমাণ ঋণ! আমার রুমালে মাপা
জীবন শোধ করতে ছুটেছি বারবার মেঘের
আড়ালে উপকূলে! আমার সত্যিই দেরী
হয়ে যাচ্ছে নিজেকে ঘুমন্ত করছি
বালিশ কাঁথার সঙ্গমে!

আমি বুঝতে পারি না, কিভাবে প্রেম দেবো
তোমাকে! সমীকরণগুলো শুইয়ে রেখেছ
তুমি লঘু পায়ের ছন্দে আমার শরীরজুড়ে
নেমেছে অবসাদ সমতলের নদীতে শুদ্ধ
করেছি আমার হাতদুটো সেই হাতও ভাষা
হারিয়েছে , নাভিদেশের অদূরে! তোমার ঠিকানা
লিখতে গিয়ে থমকে গেছে কলমের আন্তরিকতা
আমি তোমাকে আমার অস্তিত্বের সবটুকু
দিতে ছুটেছি বারবার আটকে গেছি
ট্রাফিকের গিঁটে সর্বস্ব বাজী রেখেছি
কবিতার কাছে তারপর, গির্জার বৃদ্ধ ঘড়িকে
উদ্দেশ্য করে বলেছি সব
আমার অনবরতই দেরী হয়ে গেছে!