০৪ ডিসেম্বর ২০১৬

৩য় বছর ১২ সংখ্যা







প্রতিচ্ছবি


মৃণালকান্তি দাশ





কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

নোট

রোদদুপুরে দাঁড়িয়ে মানুষ
নয়কো কোনো জোট,
গলদ ঘেমে বদলে নেবে
বাতিল হওয়া নোট।

গরম মাথা, গায়ের ব্যথা
ভুলেছে সব চোট,
যেন তেন প্রকারেণ
বদলাতে চায় নোট।

সাদা টাকা, কালো টাকা
টাকার কত ঘোট,
টাকার জন্য টাক-টাকালি
টাকার জন্য খোট।

টাকা মাটি, মাটি টাকা
যতই বলো ভাই,
এই বাজারে টাকা ছাড়া
কোনো দামই নাই।

সকাল থেকে লাইন দিয়ে
ধৈর্য আখরোট,
লাইন দেখে হচ্ছে মনে
নোটের জন্য ভোট।

কাজ সিঁকেয়, লাভক্ষতির
পাই না হিসেব মোট,
যা-ই করো, যা-ই বলো
নোট আসলে নোট।



দেবশিস কোনার

নির্বাসন

দরজা বন্ধ যদি নির্বাসনে
সামাজিক ফিরে আসা বড় কঠিন
চুলোচুলি ভালবাসা ক্ষণে ক্ষণে
কোলাকুলি গন্তব্য সম্মুখ পানে

প্রতিটি ঘরের চৌকাঠ সেতুবিহীন
দুঃখ – নীরবতার কুয়াশা চাদর
তির্যক দৃষ্টি দিয়ে দেখ রঙিন
বাতাসে কেনাবেচা চলছে ভাদর

সন্ধ্যা শহর জুড়ে গ্লোসাইন বোর্ড
ক্ষমতার মধ্যে থেকেও হাত – পা বাঁধা
মিথ্যে মামলা দিয়ে চাকরি চ্যূত
আমরা সকলে কি কৃষ্ণ রাধার

শূন্য রক জেনেছে সময়ের দাম
শপিং মলের পাশে মিলছে কুলো
জেলখানা গালভরা নাম সংশোধনে
অসুখে পথ্য দিয়ো জ্বালিয়ে চুলো !



শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়

শীতের ছড়া

দুপুরের রোদে আদর জড়ানো--
সকাল-সকাল সন্ধে,
ভোরের কুয়াশা মিঠে হয়ে যায়
খেজুর রসের গন্ধে।

লেপমুড়ি দেওয়া আলসেমি রাতে
মায়ের আদর ঘুম-ঘুম,
সন্ধে পেরোলে হিমেল হাওয়ায়
পথঘাট হয় নিঝঝুম।

গলির ক্রিকেট,টিউশন কেটে
বন্ধুরা মিলে পিকনিক--
বছর শেষের রেজাল্টে কারও
চোখের কোনায় চিকচিক।

ছুটির মেজাজে,নেহাত অকাজে
শীতের দুপুরে ভাতঘুম--
বাঙালির কাছে বড় প্রিয় এই
কমলালেবুর মরশুম।




বিশ্ব জিৎ





রাখি বিশ্বাস

অনিবার্য ধ্বংস

সৃষ্টির আদিতে কোন ভেদ ছিলনা
তোমার আমার l
ভেদ ছিলনা বুদ্ধিতে আর  মানবিকতায় l
ভেদ ছিলনা জঠরের ক্ষুধায় l
ভেদ ছিলনা প্রবৃত্তিতে l
ভেদ ছিলনা ইচ্ছের ডানা মেলাতে
টেনে দেওয়া ভেদ অর্ধেক বাগিচায় বিষ দিয়েছে ঢেলে l
যদি না উজ্জীবিত হও -
আমার ধ্বংসেই তোমার ধ্বংস অনিবার্য l



তন্ময় দেব

জলপ্রপাত

মাটিতে বুক ঠেকিয়ে হেঁটে গেলে
                                     পারদর্শিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে...
ঝরাপাতার মতো উড়ে যাওয়ার আগে
বাতাসকে শেষ সম্বল হিসাবে আঁকড়ে ধরলে ঠকতে হয়

যে বীজ খোলস ভেঙে আলোর মুখ দেখে
                                     তাঁর অঙ্কুরোদ্গম অবশ্যাম্ভাবি
তীব্র কাষ্ঠল অনুভূতি রেচিত প্রতিটি ঘরোয়া আবহে

জলপ্রপাত,
আমাদের প্রকৃত পরিচয়

তাহির


পৃথক দীপ

দুটি কবিতা

                      অনুভব ১

আড্ডা যদি তুঙ্গে ওঠে বক্তা যখন আমি
ঠোঁটের উপর ফুটতে থাকে শব্দ দামি দামি
তখন যদি মন দিয়ে দিস আমার কথার মনে
জিভের ডগা কাঁপতে থাকে শূন্য অভিধানে।

                          অনুভব ২

মুখোমুখি বসে দুজন, তোমার গায়ে জ্বর
পানসে মুখের কাশির গন্ধ উপচে এল নাকে
কিন্তু সব ঘেন্না উধাও ঘেন্না দুধের সর
মুখের থুতু নিমেষেই গিলেছি একঢোকে। ।

আকাশদীপ


পবন বর্মন

ভাববার কথা
           
হারানো স্মৃতিতে আপষোস করা ছারা আর কিছুই মিলেনা ?
যদি মিলতো সেই সুখ ,সেই সময় , সেই কথা ,তাহলে আজব কিছু হতো |
নাকি কান্নার মতো ছলচাতুরিতে ছেঁয়েযেত এই জগত ?
বিশ্বময় জলন্ত কুণ্ডে আবদ্ধ থাকতো |
সবার কর্তারূপে আছেন যিনি দৃশ্য গোচরে
তিনি সবমিলিয়েই  নির্মাণ করেছেন জগৎ|
ভাবলে অসম্ভব লাগে কিন্তু এই দয়ার জগতে সবকিছুই সম্ভব |

নিল হাসান

মাতাল প্রণয়

তোমার ঐ তপ্ত ঠোঁটে
যখন ভালোবাসা উঠেছিল জেগে

বনফুলের সুবাসে এমন
মৌন মাতাল প্রণয় ছোটেনি আগে।

দখলের নেশায় ঢেউ
জেগে ওঠে রক্ত নদীতে

ডুবে যেতে যেতে ডুবি নাই
নেশার ঘোরে ঘোর লেগেছে সুখের গদিতে।

বিবর্ণ বিষাদ ধুয়ে
অলিক স্বাদ লুঠছো অধরে

হঠৎ ঘুম ভাঙতেই ভীষণ তৃষ্ণা পায়
মধ্য রাতের আদরে।

নবনীত


ab


খুশবু আহমেদ

তুমি আমার শ্রাবণ

    জীবন বসন্তের শেষ প্রতীক্ষার পর
    শীতল হাওয়ার টানে ছুটছিলাম!
     রক্তাক্ত হিয়া দৌড়োচ্ছিলো
     মুর্ছমান শরীরের আনাচে- কানাচে...

       অনন্তকাল থেকে অলিগলি হেঁটে,
       অপেক্ষায় ছিলাম একফোঁটা প্রেমের
        সহস্র স্রোতের টানে ভাসিয়ে,
        মনের সব ফাগুন মুছে গেছিলো |

      বড়ো অসময়ে ধরা দিয়েছিলে,
      কালো মেঘে একপশলা বৃষ্টি হয়ে...
      তুমি যে আমার শ্রাবণ !
      শুধুই উথলে ওঠো দুচোখে |



০২ ডিসেম্বর ২০১৬

অরুণিমা মন্ডল দাস

জলে ডোবা প্রেম

আবেগ
সাইকেল চালিয়ে বাজার থেকে বাড়ি যেতে মাঝপথে ক্লান্ত ফেরিওয়ালা---
এক লস্যি ঠান্ডা বরফ গোলা ভালোবাসার সরবত খেয়ে --
সুস্থ সামাজিক রঙিন চশমা আঁটানো ফেবিকল চটিভদ্র।
চুম্বকের লোহা আকর্ষন ,অটোতে চটকানো সিন্নি প্রেম।
#
ছেলেটি,
আস্ত ইলিশ মাছের গন্ধে খাওয়ার টেবিলে কুপোকাত সাদা বিড়াল---
লক্ষীপূজোর খই ছিটকে হাতের এনগেজমেন্ট রিং।
পঁাচালীর স্তবক হয়ে যায় করুন প্রেম নিবেদনের কাতরতা ---
তৃস্নার্ত কাকের জলহীন ডোবায় বসে তাকিয়ে থাকা যাযাবর সন্ন্যাসী ,ভরা কলসির দিকে ---
#
মেয়েটি,
শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে ছোট্ট টপের চলাফেরা ---
কেঁচো - মন প্রসাদে ভিজে চিড়ে ও গুড়ের মিলন ¡
ঘন্টা বাজলেই পূজো আরম্ভ, ভক্তিতে দরদর ঘাম ---
আলপনাতে ধানের শিষের কাটা ছেঁড়া ---
সিঁদুর মাখা ঘটের টগবগে রক্তের ঢেউ।
হাতে তুলসীপাতা মাথায় চন্দন ---
পূজো শেষে আসন উঠলেই হবে ঘট বিসর্জন?
#
লাল সিঁথির সিঁদুর দুদিকে লাল ,চারিদিকে লাল ,দেখতে লাল, দেখাতেও লাল
পরতে লাল পরাতেও লাল¡
ঘট ডুবল, বেলপাতা ,আমশাখা, গাঁদাফুল ডুবল---
পূজোর স্মৃতি ভক্তির স্পর্শ আলিঙ্গন ডুবল না।
পোড়া মাটির পাত্রটি অসহায় কুরুক্ষেত্রের ভীষ্ম তাকিয়ে জলের নীচে একদৃষ্টিতে বিরহী মজনু। 

স্নেহাশীষ আলম

আত্মবিশ্বাস

টুপটাপ শিশির ঝরে পড়ছে,
শিউলি ফুল গুলিও ---
একটি একটি করে ঝরে পড়ছে।
ঝরে পড়ছি আমিও,
তবু আমার বিশ্বাস আমি ঝরবনা--
         আমি রব।

আমি এক প্রবল বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছি
মানুষের মুখে মুখে,শ্বাসত বিশ্বাসে।
জেনেছি সত্য মানুষের সৃষ্টি
পালন করতে হয় মানুষেরই।
       তাই আমি রব।

আমি আবিষ্কার করি-
বেঁচে থাকার গান আর আদিম আনন্দ।
         তাই আমি রব।

আবার এসেছে কঠিন সময়
ফাঁকা মাঠ, মরা নদী, চাতকের ডাক,
আমি সঙ্গ নিব তারই।
তবু আমি ঝরব না আমি রব।
      আমি রব। 

মন্দিরা ঘোষ

উপন্যাসের মতো

প্রতিটি দিন এখন উপন্যাসের মতো,
সিনেমার কিছু না বলা সংলাপ;
সকালের রোদের মত স্পষ্ট  নয় যদি
সবুজ মাঠের নষ্টালজিয়ায় হারানো রাজপ্রাসাদ।

আমি দেখি বা না দেখি তোমার হাত
আমার চোখ  তবু দেখে,
পথ জুড়ে পড়ে থাকে মায়া মায়া আলো,
শিশিরে ধুয়ে দেয় জোনাকির সুখ।

আমি দেখি বা না দেখি তোমার মুখ
আমার চোখ তবু দেখে,
ধূসর  নির্মোক  ছেড়ে উঠে এলো
সুখ টুকু  শুষে  নিয়ে তিতিরের ঠোঁট।

তবু আমি দেখি বা না দেখি তোমার চোখ,
চোখ তবু দেখে যায়  অনন্ত অসুখ।

ইমন


মাসুদ সেখ

শান্তি পথযাত্রা

"নির্দোষী হয়ে এসেছিলাম, দোষী হয়ে যাব,
ভাবিনী এই ধরণীতে এত দুখ-কষ্ট-যন্ত্রনা পাবো,"
পাপী হই যাই হই,
পারিব না আমি নিস্পাপ হইতে,
এই সুন্দর পৃথিবীতে,
পাপী হলেও আমি চাই যেতে,
নদীর ওই পারেতে।।
যেখানে নাই কোনো ভেদাভেদ,
নাই কোনো শ্রেনি বিভাগ,
রয়েছে, জাতি-ধর্ম-বর্ন-নির্বিশেষে সকলই সমান,
যেখানে নাই কোনো অ-সমান,
নাই অন্যায় অবিচার,
রয়েছে ন্যায়, রয়েছে সুবিচার,
যেখানে লাগেনা ইনাম বিচার চাইতে,
আমি যেতে চাই নদীর ওই পারেতে,
লাগে না ভালো এ-পারেতে।।
কোটি কোটি মানুষ যাইতেছে ও-পারাতে,
না জানি কী সুখ আছে সেখানেতে,
আমি যেতে  চাই নদীর ওই পারেতে।

আমি বলি,
ও মাঋি তুমি আমায় নিয়ে চলো ও-পারেতে,
আর লাগেনা ভালো মোর এ-পারেতে।
মাঝি বলে,
টিকেট ছাড়া এই নৌকা তো চলে না ভাই,
আপোনার তো টিকেট নাই,
আমি গোলাম, হুকুম নাই
টিকেট ছাড়া নিয়ে যায়।।
কাউন্টারে গিয়েছিলাম টিকেট কাটিতে,
টিকেট তো কনফার্ম নাই,
ছিল বহুত ওয়েটিং,
এখোনো হয়নাই ক্লিয়ার,
আামি অপেক্ষা করিতেছি বসে ঘাটেতে,
কবে টিকেট পাব,
আমি পারিব যেতে নদীর ওই পারেতে,
লাগে না ভালো এ-পারেতে,
আমি যেতে চাই ওই পারেতে।।

অনীশ