১৯ অক্টোবর ২০১৮

মাসুদুর রহমান

মৌনতা কিশোরীর 

আকস্মিক কোন রঙে রাঙাবে ভেবে তুমি
রাংতা কাগজ মুড়েছিলে, সস্তা রঙ্গের
মলাট বিবর্ণ হয়ে গেলে
রংধনুর কাছে কিছু কালো রঙ ধার নিয়ো
প্রতিবেশী কাক তোমার সঙ্গী হবে
তোমার ঠোঁটের সাথে পাখির ঠোট বড় মেলে
ঠুকরে দেয় বড় ভালবাসতে জানে।
পরমাণু প্রেম কখনো তার বেড়া ডিঙ্গায়নি
শ্যাওলা রঙ্গের শস্যে ঢেকে ছিল বুক
ওইখানে খোদাই করা ছিল কিশোরী প্রতিকৃতি
উদগ্রীব, ঘোমটার আড়ালে কোনও বধু ।
দগ্ধ ভাস্কর্যে গড়া আমি এমনি পাষাণ
কখনো ছুয়ে দেখিনি।
কখনো মৌনতা জন্ম দিয়েছিলো যৌনতার
শৈল্পিক কোন রঙও হয়তবা ছিল
মৌনতা বেখায়ালী এক কিশোরীর নাম 
মৌনতা জানেনা আমার চোখের জলের স্বাদ ।

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

এড়িয়ে যাওয়া রিপোর্টিং

হাতের মুঠোয় ধূসর অস্তিত্বের গলনাঙ্ক 
চেতনার অভ্যন্তরে ঘুণপোকার বাসা
পড়ন্ত রোদে সোনালি দিনের স্মৃতি আলাপন 
মননের ছত্রছায়ায় যাওয়া এবং আসা ।

বেবাক রশ্মি ধাঁধাঁ রাস্তায় হন্যি পাগল 
গোলমেলে হিসাবে উদ্ভ্রান্ত ক্যালকুলেটর ,
মহাকাশ গমনেচ্ছু সাজানো ভোগ রকেট 
জিরো আওয়ারের প্রতীক্ষায় সয় নাকো তর ।

সাগর ফেনায় ভাসে বাস্তবের তৈলচিত্র 
কল্প নোঙর ফেলে অচিন -দ্বীপ্‌ 
ঘুম নেই পৃথিবীর হাজার কোটি চোখে 
বেঁচে আছে সব আবেগে ... আক্ষেপ...

আলো আঁধারের নীরবতায় শতাব্দী বদল 
ভুলে যাই কোনখানে চুম্বন দিলাম ,
যেসব রিপোর্ট লিখতে বলা হয়েছিল 
সবাই এড়িয়ে গেছে আমিও এড়িয়ে গেলাম ।

শান্তা কর রায়

নিষ্ঠা কোথায়

মোহরগুলো কোথা থেকে এলো বলে যাই
সাপের মতো মেধায় ঢুকছিল মূর্ছিত মন্ত্রধ্বনি

একদা কবিতা অগ্নিকোণে ফিরছিল বাড়ি
তার নিজের ভাষায় ফিরছিল কিনা
জানার আগেই থেমেছিল

শেষদিনের কাজ ছিল অনুবাদ ঘিরে
পরজীবী আমি আমারই ভিতর উঠি আর বসি
বাঁশি বেজে বেজে ডেকে গেছে কতবার ঘুম ভাঙেনি
ঘুমের দেশে কোলাহল বলে গেছে
তেমনি আমার মতো গাছপালাদের জন্য
নতুন অভিধান কল্পনা করো
প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বপ্নদ্রষ্টা আগুন
সৃষ্টির ব্ল্যাকহোলে জমা হবে নিরর্থক কাব্য
যদি খুলে দ্যাখো অথবা বোলাও হাত
অন্ধও দৃষ্টি ফিরে পাবে সন্ধের পরে

তারপর দ্বন্দ্বকিলবিল দুচোখের বিষ
ওরা লেনিন ভেঙেছিল   ।
সঠিক দৃষ্টি ফোকাস করে রাখো
আমারই অন্তঃস্থলে
দেখতে পাবে থরেবিথরে সাজান
চেতনার স্তর থেকে অবচেতনে শুধু তোমরা আমাকে ভাঙো লেনিনের মতো

যেমন করে মন্দির, মসজিদ ভাঙো  ।

সানি সরকার

হাসপাতালে লেখা কবিতা : অক্টোবর-২০১৮

কখনো এমন হয়, ছায়াটির খুব কাছটিতে
ডানা ঝাপটে চলে যায় লক্ষ্মীপেঁচা
গোল থালার মতো একটি টিপ ফুঁড়ে ওঠে আপনার কপালে
নাতিদীর্ঘ ওই উদবেগ থেকে আমরা চুপিচুপি নেমে আসি...
উদ্বাস্তু ক্যাম্পে, সেখানে ঢোলক ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
পেরোন নদী, পেরোন নিঃঝুম চাষ মাঠ, আর
ঠিক তখন-ই নাচনীর পায়ের ঘুঙুরের শব্দে রোদটুকু ওঠে
#-
কখনো এমনও হয়, আমরা দীঘল কপাল পেতে রাখি
প্রেমিক-ঈশ্বরের খাঁচায়, ও-আমার নিশুতি বালিকা
ক্রমশ দ্বীপান্তর থেকে নেমে আসেন ধূর্ত-পাগলের বুকে
#-
জ্বরের বালক হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে  
দ্যাখেন ছবিগুলি জ্যান্তব, হেঁটে হেঁটে আসে
খুব স্পষ্ট নয়, তবু পড়ে নেয়া যায় ঠিক, আলগোছে

চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

শরৎ এলে

শরৎ এলে দোল খেয়ে যায়
সাদা কাশের বন,
তুলোর মত মেঘ গুলো সব
উদাস করে মন।

শরৎ এলে শিশির ভেজা
ঘাসের ডগাই হাসে,
মাঠে মাঠে পাগলা হাওয়ায়
সবুজ ফসল ভাসে।

শরৎ এলে শাপলা শালুক
নদীর জলে ফোটে,
দুষ্টু ছেলে সাঁতার কেটে
অমনি সেদিক ছোটে।

শরৎ এলে পাখীর গানে
জুড়ায় সবার প্রান,
অাকুল করে শিউলী টগর
জুঁই চামেলীর ঘ্রান।

শরৎ এলে জোনাক মেয়ে
ছড়ায় শুধু অালো,
এই শরতে অানন্দ ঢেউ।
তাইতো লাগে ভালো।

শুভ চক্রবর্তী

দৃশ্য-পট

                     ১
দীর্ঘ রাত্রির প্রতীক্ষায় ছিলাম-
                                    সহস্র যুগ...

তোমার শীর্ণ গুল্মলতায় অশ্রু পড়ছে চুঁয়ে;
ছায়ায় ছায়ায় বাঁধা আছে নক্ষত্রের পথ।

হে তিমির জলযান স্তব্ধ হও,
সম্মুখে প্রস্তাব প্রসঙ্গ রাখো।
                     ২
জীর্ণ প্রণয়ীর সাজে সেজে উঠুক উৎসব...

বসন্তের মত বাক্যালাপ করো
অনন্ত কক্ষপথ গ্রন্থিত
                       তোমার কণ্ঠে,
রুদ্র পলাশ ফুটে আছে
              তোমার মেদুর খোপাগুচ্ছে,

                                   স্নিগ্ধ সমীরণ
তোমার ধুলোময় হৃদয় হাতড়ে  ফিরে যায় নিশীথ সূর্যের দেশে।

তোমার বক্ষে 'গন্ধর্ব কবিতা গুচ্ছ' লিখেছেন স্বয়ং ব্রহ্মা…

                     ৩
তারই কিছু যখন পাঠ করি,
সেই মুহূর্তে থমকে যায় রাত!
চরাচর জুড়ে শুধু ম্লান জ‍্যোৎস্না আভা;
আতরের সুগন্ধ তোমার নিশ্বাসে...

উত্তাল মৃদঙ্গ-এ নাচে
              রুদ্র ভৈরব ;

শিশির ভেজা ঘাসে সমাহিত হওয়ার সময়ও ক্রমে ঘনীভূত হয়...

                      ৪
উদ্বায়ী প্রেম হৃদয়-এর জ্বালা সরিয়ে ক্রমে নেমে যায় নাভিমূলে।

ছোটগল্প - সুদীপ ঘোষাল

ত্রিনয়নী

স্কুলে গিয়ে প্রথম পিরিয়ডে রোল কল করার সময় রীতার মনে হলো, আজ সিলেবাসটা ছাত্রদের ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে।রোল কল করতে করতে এখন পাঁচ মিনিট লেগে যায়। একবার কল করে কমপ্লিট হয় না। কোনো ছাত্র বলবে,ম্যাডাম আমারটা প্রেজেন্ট হয় নি। প্লিজ করে দেবেন। আবার আর একজন বলবে,ম্যাডাম ভুলে গেছি। আমারটাও করে দেবেন। এইসব করতে করতে সময় কেটে যায় বেশ কিছুটা। তারপর সিলেবাস নিয়ে বোঝাবার পালা সাঙ্গ করে স্টাফরুমে এসে বসা। এবার একটু বিশ্রাম করে আবার তিন পিরিয়ডে ক্লাস।এই ফাঁকে রীতার মনে পড়ে তার ছোটোবেলার কথা। সে তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে।সে ভয় পেতো ম্যাডামদের।স্টাফরুমের দিকে সচরাচর যেতো না। একবার খুব পেট ব্যথা হয়েছিলো।কিছুতেই কমছে না। শেষে অনিমা এসে তাকে নিয়ে গেছিলো হেড মিষ্ট্রেস এর রুমে। সব কিছু শুনেও ছুটি মঞ্জুর হয় নি। রীতার ব্যাথা তারপরেই কমে গেছিলো।একটা মনের জোর তৈরি হয়েছিলো।হেড মিস্ট্রেস বলেছিলেন,ব্যথা কমে যাবে। অনেকটা জল খেয়ে ক্লাসে বস। বাড়ি গিয়ে কি করবি। বাড়ি গেলেই কি তোর ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। মনে জোর রাখবি। সহজে হেরে যাবি না। রীতার মনে আছে আজও অই কথাগুলো। মনের জোরেই সে এতদূর উঠে এসেছে।

ঠিক সাড়ে চারটের সময় স্কুল ছুটির ঘন্টা পড়লো।রীতা টোটো রিক্সায় শিবলুন হল্টে এলো। তারপর ট্রেনে চেপে কাটোয়া। কিছু বাজার করে বাসায় ফেরে রীতা। বাসায় ওরা তিনজনে থাকে। তিনজনেই স্কুলের শিক্ষিকা। সপ্তাহে এক এক জনের বাজার করার পালা পড়ে। কাজের, রান্নার মাসি আছে। তিনি এসে রান্না করে দিয়ে যান। ঘর ঝাঁট দেওয়া,মোছা,জল তোলা, কাচাকাচি সব মাসি করেন। মাসি বলেন,বাবা-মা কে ছেড়ে এই দূরে আছো। তোমাদের সময় কম। আমি সব কাজ করে দেবো।রীতা বলে,মাসি বাসন আমরা ধুয়ে নেবো। ওই একটা কাজ আমাদের করতে দিও। মাসি বললেন,বেশ তাই হবে।

রীতা বলে,মাসি তোমার বাড়িতে কে কে আছে?

মাসি বলেন,আমার কেউ নাই গো। আমি নবগ্রামে অজয় নদের ধারে থাকতাম। এক বানে ভেসে গেলো আমার ঘর, বাড়ি আত্মীয় স্বজন সবাই। শুধু আমিই কপালপোড়া বেঁচে রইলাম। আজও তাদের কান্না আমাকে পুরোনো স্মৃতি ভুলতে দেয় না।

রীতা ভাবে, কি অসহায় এই মাসি। এখন গতরে জোর আছে। কাজকর্ম করে খাচ্ছে। কিন্তু যখন ও বুড়ি হবে তখন ওকে কে দেখবে?বুড়ি বয়সে তো লোকবল প্রয়োজন। কিন্তু মাসির কেউ নেই।

মাসি চোখের জল মুছে বললো,কাজ হয়ে গেছে।আমি আসছি গো।আরও দুটো বাড়ির কাজ আছে। দরজাটা ভেজিয়ে দাও গো।

মাসি চলে গেলেই রীতার মনটা খালি হয়ে যায়। একজন অভিভাবক থাকা খুব প্রয়োজন।

স্কুলে এবার পুজোর ছুটি পড়বে। আঠারো দিন। মাসিকে টাকা,পয়সা সব বুঝিয়ে দিলো রীতা। কাপড়,সায়া,ব্লাউজ দিলো তিন জনেই। মাসি খুব খুশি। বললো মা দুর্গা তোমাদের মঙ্গল করুন।

রীতা দুই বান্ধবীকে নিয়ে খুব কেনাকাটি করলো।স্টাইল বাজারে গিয়ে মনের সুখে বাড়ির সকলের জন্য বাজার করলো তিন জনেই। তারপর রাত দশটার সময় বাসায় ফিরলো। আগামীকাল তিনজনেই গ্রামের বাড়ি যাবে। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লো তিনজনে।তিনজনেই অবিবাহিতা। এক সুন্দর ভবিষ্যতের চিন্তা করতে করতে তিনজনেই ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ এক শব্দে রীতার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।এখন রাত একটা বাজে। রীতার মনে হলো,কেউ ঘরে ঢুকেছে। চোর নয় তো? বুকটা ধরফর।করে উঠলো তার। সে একবার বাথরুমে গেলো। না কেউ নেই। সে বাথরেমের দরজার ফাঁক থেকে দেখতে লাগলো ঘরের এ কোণ থেকে ও কোণ। না কেউ কোথাও নেই। তবে হয়তো তার ভুল।তবু সে বাথরুম থেকেই সব কিছু লক্ষ্য করতে থাকলো।বান্ধবীরা দুজনেই হাল্কা পোশাকে, হাল্কা মনে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে। ভোরের ট্রেনে বাড়ি যাবে। সেখানে বাবা,মা,ঠাকুমা,ভাই,বোনেরা তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। কত মধুর স্বপ্নে বান্ধবীযুগল মশগুল।

দশ মিনিটের মধ্যেই দেখলো রীতা ঘরের দরজা খোলা। দরজা ভেঙ্গে ফেলেছে দুস্কৃতির দল। পরপর চারজন ঘরে ঢুকলো। সবার মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা। তার ঢুকেই বললো,আর একজন কই।পাষন্ড লোকটা বললো,তুই তো বললি তিনজন। তাহলে আর একজন কই।হাতে কালো বালা পড়া লোকটা বললো,তাহলে একজন গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। চলো এই দুজনকেই সাইজ করি।রীতা দেখেছে বাড়িওয়ালার বাড়িতে হাতে কালো বালা পড়ে থাকত বাড়িওয়ালার ছেলে । এটা সে নয়তো।কাছের লোক না থাকলে কোনো অপরাধ ঘটে না।

রীতা দেখলো চারজনে দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে দিলো বান্ধবীদের।তারপর মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো।তারপর চারজনেই হুমড়ি খেয়ে বিছানায় তাদের অত্যাচার শুরু করলো।

রীতার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো।তারপর বাথরুমের মেঝের কোণে শুয়ে পড়লো।একটা কাপড় ঝুলছিলো। সেটা ঢাকা নিলো।কিছুক্ষণ এভাবে কাটার পরেই তার ভয় কেটে গেলো। সে ভাবলো,বান্ধবীদের বাঁচাতেই হবে। তা না হলে বৃথা তার শিক্ষা দীক্ষা।সে দেখলো দরজা দুটো ভাঙ্গা। খোলা দরজা দিয়ে বাইরে লাইটপোষ্টের আলো দেখা যাচ্ছে। সাহসে ভর করে রান্নাঘরের পেছনের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো বাইরে।তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মোবাইলটা ফেলে এসেছে।কি করা যায়। সে পাশের বাড়ির মেসোমশাইকে ডাকলো।কেউ সাড়া দিলো না। ওর ডাকে তার পাশের বাড়ির বখাটে মস্তান রবি বেরিয়ে  এলো।

এসেই বললো,কি হয়েছে দিদি।

রীতা বললো,চারজান আমাদের ঘরে ঢুকে...

---;আর বলতে হবে না দিদি। এই রবি থাকতে আপনার কোনো ভয় নেই।
সঙ্গে সঙ্গে সে মোবইলে সব বন্ধুদের ডেকে নিলো।দলে দলে লোক চলে এলো।চারপাশ ঘিরে ঘরের ভিতরে ঢোকা হলো।

রবি বললো,কেউ নেই। কোথায় গেলো সব বদমাশগুলো।আর দুজন দিদিই বা কোথায় গেলো।রীতা ঘরে ঢুকলো,দেখলো কেউ নেই। পুজোর বাজারের ব্যাগ, টাকা, পয়সা কিছুই নেই।রীতা বান্ধবীদের শোকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।


পরের দিন দুই বান্ধবীর অভিভাবক এলেন। রীতার বাবা এলেন।রীতাকে বান্ধবীর অভিভাবকরা বললেন,তোমরা একসঙ্গে থাকতে। সুখে দুঃখে,ভালো মন্দের সাথী। তাহলে তুমি কি করে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেলে।
রীতা বললো,আমি শব্দ শুনে বাথরুমে ঢুকে রক্ষা পেয়েছি।

তারা এই কথায় সন্তুষ্ট হলেন না। থানায় গিয়ে ডায়েরি করলেন রীতার নামে।

রীতার বাবা থানায় নিয়ে গেলেন রীতাকে। পুলিশের প্রশ্নবাণে জেরবার রীতার মন।তবু শক্ত হয়ে সত্যি কথাগুলো বলে গেলো রীতা। রীতা এটাও বললো,ও কিন্তু কালো বালা পরা একটা লোমশ হাত দেখেছে। বাড়িওয়ালার ছেলেও কিন্তু ওরকম বালা পরে থাকে।

পুলিশ এই কথা শুনে বাড়িওয়ালার বাড়িতে হানা দিলো। বাড়িওয়ালা তখন তেল মেখে উঠে বাগানের দিকে যাচ্ছিলো।পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করলো,আপনার ছেলেকে একবার ডাকুন তো?

-----কেন?

----কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।

----ও তো এখন বাড়ি নেই।

-----কোথায় গেছে?

-----হয়ত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে গেছে।

----ফোন করে ডাকুন। শুধু বাড়িতে আসতে বলবেন। অন্য কিছু চালাকি করবেন না।

বাড়িওয়ালা ফোন করে ছেলেকে ডাকলো।দশ মিনিটের মধ্যেই ছেলে চলে এলো।পুলিশ দেখে বললো,কি বাবা, কি হয়েছে?

পুলিশ দেখলো হাতে কোনো বালা নেই। রীতাও দেখলো।সে বললো বাড়িওয়ালার ছেলেকে,দীপকদা,আপনার হাতের বালাটা কই?

দীপক বললো,কোন বালার কথা বলছেন?

দীপকের বাবা অতশত না বুঝেই বলে উঠলো,হূঁ,তোর মানসিকের বালাটা হাতে নেই তো?
দারোগাবাবু বললেন,কি রঙের বলুন তো?
বাড়িওয়ালা বলললন,কালো রঙের।

দারোগা বাবু তার দলবল নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো।খুঁজে খুঁজে রীতাদের ভাড়া ঘরে বালাটা পেয়ে গেলো। ব্যস, আবার কি চাই।

দারোগাবাবু দীপককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলো থানায়। রীতাকে আর থানায় যেতে হলো না। পরের দিন গিয়ে একটা সই করে এলেই হবে। এখন সাতদিন রীতাকে এখানেই থাকতে হবে।রীতার বাবাও থাকবেন।রীতা মাসিকে খবর দিয়ে ডেকে আনলো।সব কথা বললোমাসিকে রীতা। মাসি বললো, দেখবে ওরা সবাই ধরা পড়বে।তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। জানো তো, আইনের হাত অনেক লম্বা।

রীতা আজ রাতে স্বপ্নে দেখলো,তার দুই বান্ধবী বিয়ে করে মাথায় সিঁদূর ঢেলে সুন্দর হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।রীতার বাবা শুনলেন,মেয়ে ঘুমের ঘোরে কথা বলছে।তিনি শুনলেন রীতার কথা,অই দেখো  বাবা,অদূরেই দুটো রাধাচূড়া তার ফুল,ডাল ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের জয়গান গাইছে...

নিল হাসান

জানালায়

জানালায় ঝুলতে থাকা
এক টুকরো আকাশ তুমি
আমার ছিলে বলে,

কত রাত্রি দুপুর কাটিয়েছি হেলায়
তবু সময় করে রাখিনি
দু'চোখ কপাট খুলে।

বেলা শেষে ফিরে এসে দেখি
তুমি নেই আর আমার,
কোথাও নেই আর অন্যের আকাশ হয়ে গেলে।

এস.কে.এম মিজানুর রহমান

অজুহাতের টিকিটে

অজানা অজুহাত দেখিয়ে
দেশের নেতা মন্ত্রী সকল
কিরীট সম সমাহারের ইসু তুলে
মানুষ কে ভাঁওতা গিলাচ্ছে

লেপ্টানো চর্বি চাটিয়ে
মধ্য বৃত্ত ভরাট সমাজ কে
লাগাম পরিয়ে দিন'মান খাটাচ্ছে
সাধু ভণ্ডের দল।

এখানে এসে ঢেঁকেছে দেশ
ঠিক যেন পুকুরের শ্যাওলার ন্যায়
একটা কোন কেই বেছে নিতে হয়
এটাই বাধ্য করা,বেঁচে থাকার লোভ দেখিয়ে

সেথায় উৎপত্তি রাহাজানি, চুরি সম দোষ
সমাজের বুকে আর কতকাল রইবে এই বুনমোষ

শক্তিপ্রসাদ ঘোষ

মুখ

অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে অর্ধেক
বিকৃত,বিবর্ণ
  মুখমন্ডল
হিংসা,ক্রোধ,ধ্বংস
গিজগিজ মগজ
বিদঘুটে, বিষাক্ত ফুলের
জন্মদাতা পোগ্রেসিভ
খুজে কি পাবনা
সরল,শান্ত,স্নেহ শীলা
দয়াময়ী মুখ।

বিশ্বজিৎ প্রামাণিক

চোখবৃষ্টি

আকাশ ভরা বৃষ্টির শব্দে তোমার নাকি ঘুম আসে!
তবু চোখের বৃষ্টিতেই ছুটেছে আমার সমস্ত ঘুম!
হঠাৎ বৃষ্টির নামা জলের বুকে কাগুজে নৌকো দেব ছুড়ে!
দুই মনের কিলোমিটারের দূরত্ব দেব ঘুচিয়ে বিলক্ষণ।

আমারও পাঁজরের নীচে নাকি একটা হৃদয় আছে!
মহাকাল থেকে পেয়েছি যত বিশৃঙ্খলার নির্বাসন!
আঘাত বিষন্নতায় থার্মোমিটারের পারদ ছুঁয়েছে,
কান্নার রোল নাকি বৃষ্টির সুর কে জানে তা বিচক্ষণ!

ভেজা গোলাপের গন্ধ কৃষ্ণপক্ষের বিদঘুটে অন্ধকারে থমকে!
সোঁদা মাটির ঘ্রাণেও কী অদ্ভুত বিরক্তির চন্দ্রগ্রহণ!
যেখানেই থাকি দূরের বারান্দায় বিচ্ছেদের বন্দিতে এঁটে,
শুধু হৃদয় জানে আমার তোমার জন্য ভালোবাসা আছে সর্বক্ষণ।