২৩ আগস্ট ২০১৭

হামিরউদ্দিন মিদ্যা

অথৈ জল

"বাবা__ও বাবা,দাদা কেন মরেছিল বলোনাগো?"
উঠোনে বিছানো মাদুরটাতে বসে আছে ভূপতি,আর পল্টু হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় পড়তে বসেছিল।গ্রীষ্মকাল এলেই গ্রামে অধিকাংশ সময় লোডশেডিং। পল্টু একটু অমনোযোগী হয়ে পড়ছিল।হ্যারিকেনের আলোটাকে কেন্দ্র করে পোকা গুলো কেমন ঘুরে ঘুরে ঠোক্কর খাচ্ছে কাচটাতে,কেউ কেউ চিটপটাং।দাদার মৃত্যুর কথা মনে পড়ে,দাদা সু সাইড করেছিল।কেন মরেছিল সে কথা বার বার জিজ্ঞাসা করেও জানতে পারেনি।
আজ ভূপতি চিন্তা করে ছেলেটা বড় হয়েছে,ক্লাস সিক্স এ পড়ছে।এখন থেকে ছেলেটাকে চাষবাসের কাজটাই হাতেখড়ী করাতে হবে।পল্টুর মুখে বার বার এই প্রশ্নটা শুনেও কোনো জবাব দেয়নি,চুপকরে থেকেছে কিংবা কথা ঘুরিয়েছে।আজ আচমকা বুকটা হা হা করে উঠে।ভাবে,নাঃ ছেলেটার জানা দরকার,বুঝতে শিখবে।
ঘরের ভেতর টর্চ জ্বেলে কি যেন খুঁজে বেড়াই ভূপতি।পুরনো কাগজপত্তর ফাইলটা থেকে এক খন্ড কাগজ বের করে আনে।
"লে বাপ পড় দেখি এটা,কেমন পড়তে শিকেচিছ।"
ভাঁজ খুলে পল্টু পড়েঃ- আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছ বাবা,বহু কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছ,কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলামনা,বেকারই থেকে গেলাম।ছোট থেকেই তুমি বলতে মাঠে যেতে,চাষবাসের কাজটা শিখে রাখতে।আমি গ্রাহ্য করিনি তোমার কথা।আসলে বাবা,চাষবাস করতে আমার ভালো লাগতনা,এখনো লাগেনা।কত ঘাম ঝরিয়ে,দিনের পর দিন কষ্ট করে চাষিরা ফসল ফোলায়।অথচ চাষিদেরই দু'মুঠো ভাত জুটেনা।তাই ভাবতাম,কেন চাষ করব?
ভেবেছিলাম পড়াশোনা যখন করেছি,একটা চাকরী ঠিক পেয়ে যাব,কিন্তু বাবা সেই ধারনা আমার মিথ্যে।যাদের টাকা আছে,তাদেরই দুনিয়া।
আজ আমি সবথেকে বেশি দুঃখ পেয়েছি বাবা,দশ কাঠা জমিটা
আর ছাড়াতে পারবনা।ভেবেছিলাম টাকাটা দিয়ে দিলেই,কাজটা হয়ে যাবে,তাই তোমাকে বন্ধক দেওয়া করালাম,তখন তো জানতাম না বাবা,যে ওটা চিট কোম্পানী।এখন আমি অথৈজলে পড়েগেছি,বাঁচার কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিনা।বাবা তুমি পারলে জমিটা ছাড়িয়ে নিও....
কাগজটা পড়া হয়ে গেলে পল্টু জিজ্ঞেস করে,বাবা অথৈ জল মানে কি?
ভূপতি পল্টুর কচি মুখের দিকে তাকায়। বলে, অথৈ জল হল গিয়ে মাঝ সমুন্দুর। ওখানে পড়লে সবাই ফিরতে পারেনা। তাই বাপ একটা কথা বলি,যদি অথৈজলে পড়তে না চাস তাহলে পড়াশোনা করতে, করতেই চাষবাসের কাজগুলো শিখে রাখ, অন্তত দু'মুঠো খেতে পাবি।
পল্টু কি বুঝল বোঝা গেল না, তবে বাবার অসহায় মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন