০৭ জুন ২০১৬

৩য় বছর ৫-৬ম সংখ্যা







অভিজিৎ রায়

যুগলবন্দী 

অন্য আমি বন্য হয়ে মনের ভিতর দিচ্ছি ডাক, 
এই সময়ে কোথায় তুমি যাচ্ছ রেখে মনের ফাঁক! 
ইচ্ছে হলেই হালুম ডাকি, আঁচড় কাটি ক্যানভাসে, 
মুখ ঘুরিয়ে তোমার ছবি, দেখছি তোমায় ক্যাকটাসে, 
অন্য তুমি বন্য হয়ে কামড়ে ধরো আমার কান, 
শরীর জুড়ে শিরার তারে শুনছি দুজন এ কোন গান! 
বর্ষা জুড়ে ভিজবে জানি মেঘ বাদলে গাছপাতা; 
আজকে বুঝি ভিজছে মাটি, যৌবনেরই মৌনতা । 
অন্য আমি অন্য তুমি'র যুগলবন্দী সুর খোঁজে, 
মন শরীরে যায় মিলিয়ে , দেহের হৃদয় সুর ভাঁজে। 




দেবাশিস সাহা

সার্কাস জীবন 
        
হে ঈশ্বর 
সার্কাসের তাঁবু থেকে বলছি 

তাঁবুর সারা শরীরে 
বড় বড় আইহোল 

ঝড় এসে উকিঁ দেয় 
দ্যাখে 
জোকারেরা কষ্ট আর কান্নাগুলোকে 
ধর্মান্তরিত করছে হাসি আর মজা 

বিদেশী শরীরের জ্যোতস্না 
কুড়িয়ে নিচ্ছে দর্শক 

হাতি-ঘোড়া-কুকুর আর পাখি 
কসরত ফেরি করছে 
কংক্রিটের জঙ্গলে 

একটা দুখি খিদে 
ট্রাপিজের খেলা দেখাতে দেখাতে 
এগিয়ে আসছে আমার দিকে 

সেই আদিম যুগের ছেঁড়া জাল 
আজো ব্যালান্স করছে মানুষের 

হে ঈশ্বর 
এই সার্কাস জীবন আর 
জীবনের সার্কাস 
মেলাবো কোন অংকে.... 




                

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

মাটি এবং মাটিগন্ধ ছুঁয়ে 

প্রত্যহ চুরি যায় মন 
অসাধারণ কোনো বিগ্রহ সামনে এসে দাঁড়ায় 
ছুটছে.... ছুটছে রেসকোর্সের জুয়াঘোড়া 
কলুঘানির পকেটে পুরে হন্যি আমাকে তাড়ায় 

এবার বলেছি, আর যাব না সাগরস্নানে 
সব ইচ্ছা রেখেছি শক্ত খুঁটিতে 
মাটিগন্ধের সখ্যতায় প্রলাপী দেহ 
খাঁটি মাটি.... প্রেম রেখেছি মাটিতে  




সুদীপ্ত বিশ্বাস

আঁকিবুঁকি 

শালুক ফোটা বিল এঁকেছি 
পাশে কাশের বন 
বাগান ভরা গোলাপ দেখে 
নাও ভরিয়ে মন। 

মাটির উঠোন, ধানের গোলা? 
হাঁ, এঁকেছি তাও 
ছোট্ট একটা  নদীর বাঁকে 
ভাসিয়ে দিলাম নাও। 

রং তুলিতে গাছ এঁকেছি 
গাছে সবুজ পাতা 
উথালপাতাল সাগর এঁকে 
ফেলছি ভরে খাতা। 

আলোর খোঁজে সূর্য এঁকে 
গাছে দিলাম পাখি 
বন্ধু তোমার লাগবে ভাল 
তাই ত এঁকে রাখি। 

নীল আকাশে মেঘের পাশে 
উড়ছে দেখ ঘুড়ি 
ঘুড়ির বুকে স্বপ্ন অনেক 
মন গিয়েছে চুরি। 

মেঘের পাশে চাঁদ এঁকেছি 
চাঁদটা ভীষণ প্রিয় 
ইচ্ছে হলেই বন্ধু তুমি 
এই ছবিটা নিও। 




খুশবু

সংকেত 
আমার সভ্যতা কৃষ্ণকালো অন্ধকারে নিমজ্জিত 
শালীনতা বিবস্ত্র,শুধু নিরীহ মুখ; 
যৌবনের তর্জনী সংকেতে বিরহ। 

বুকের ভেতর স্নিগ্ধ শূন্যতা, 
বিশ্ব-ভুবন চারদিকে খাঁ-খাঁ 
শান্তির মলিন বাতাস বয় না, 
ধর্ম আর রাজনীতির কলে 
পিষ্ট শুধু অবহেলিত মানুষ। 

বিষাক্ত বাতাসে শুধু পোড়া গন্ধ, 
চারদিকে অরা পুড়ছে আর পোড়াচ্ছে। 

তবু কত রঙিন প্রতিশ্রুতি 
পোড়া বাতাসের অগ্নিলাভায় 
তোমরা ভেজা বাতাস পাবে ! 



জৈদুল সেখ

অপ্রত্যাশিত যন্ত্রণা 

থাক না সে রূপের বাতি, তা হৃদয় থেকে দিয়েছি, 
সব ভুলের ব্যথা, বেদনা, যন্ত্রণা মাথা পেতে নিয়েছি। 
আমার এ অন্ধকারের হাত ধরে তুমিই বরং আলোকিত হও 
শুকতারা মতো দিশাহারাদের দিশা দেখাও। 
চেয়ে থাকা চাতক চাইছে এক পশলা বৃষ্টি 
ঘনোঘোর কালো আকাশের পানে একপলক দৃষ্টি  
পড়ার অপেক্ষা, তুমি ফিরবে, হয়তো বা নিরবে 
এখন আমার শরীর অসাড়, কিন্তু তুমি ডাকলেই যাগবে! 
সকাল থেকে সন্ধ্যা আগের মতোই উপাসনা  করি 
বসন্ত আসবেই আসবে, কৃষ্ণচূড়া জাগবে, তাতে বাঁচি আর মরি। 






কৌশিক গাঙ্গুলি

গুচ্ছ কবিতা 

(১) 
হাজারজনের মধ্যে বসে 
একা আমি অক্ষর খুঁজে চলি 
চরিত্রের সন্ধানে, যেন নাটক, 
এই মুক্তমঞ্চে ঈশ্বর ,আমি আর শয়তান 
অভিনয় করছি ।  

(২) 
অন্ধকারে হারিয়েছি পথ 
এ আমার পান্হনিবাসের দরজা নয়, 
চলেছি নরকের পথ ধরে অনন্ত গন্তব্যে 

(৩) 
তাপ উত্তাপ বেড়ে যায় সমাজের, 
দিশেহারা জীবন বাঁচার উপায় খোঁজে, 
সবকিছু যেন ভয়ের আড়ালে থাকে । 

(৪) 
আমি শুয়ে থাকি, শুয়ে থাকে সময়,  
বৃশ্চিক রাশির মতন কামড়ায় বিপদসংকেত, 
দুঃস্বপ্নরা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে । 




ইন্দ্রনীল

অবসর 

কত গাছ পথের ধারে নিশ্চুপ
যারা অবসরে আজ,
মন্থনে যদি উঠে আসে
বেঁচে থাকার বীজমন্ত্র
তবে অবসরেও
মৌন মিছিল করা যেতে পারে

বেঁচে থাকার তাগিদ বেড়ে যায়
অবসরে,
ভোগ আর ভোগান্তির মাঝে
যেটুকু দীর্ঘশ্বাস....
সেটুকু বাদ দিলে শুধু নকল দাঁত
শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তখন
অবসরের হিমেল হাওয়া

গতিজাড্য থেকে স্থিতিজাড্য ,
চলমান পৃথিবীতে লেগে যাওয়া গ্রহণই
অবসরের সংজ্ঞা.... জানি --- 






সৌরভ হোসন

রাজপথের চুম্বন 

জীবনের খেজাল ফেলে যাচ্ছে যে সমস্ত নিশ্বাস
নিশ্বাসের পলস্তারা আর বিকিকিনির বাউলজল...
তাদের সবাই আজ আলপথ ছেড়ে রাজপথে
মিথ্যার বেলুনে বেলুনে  ভরে গেছে আকাশ , আকাশের দিকশূন্যপুর
ল্যামপোস্টের আলো কবেই বা আকাশ ছুঁতে পেরেছে ?
অন্ধকারের বাজারে আর যাইই বিক্রি হোক....
প্রেম বিক্রি হতে পারে না

আমি এখন রাজপথে
তুমিও চৌকাঠ পেরিয়ে রাজপথে এসো
পৃথিবীতে প্রথম বোমাটা বিস্ফোরণের আগেই ...
আমাদের প্রথম চুম্বনটা রাজপথের সকালকে উপহার দিতে হবে
রাজপথে যে আজ চুম্বনের বড়ো অভাব   





কৌশিক বড়াল

প্রেয়সী তোমায়

দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আন্তরিক
চাতক পিপাসা, পুড়ে যায়
ভিতরে কামনা
অস্থির আদল ভেঙে মনপাখি উড়াল দেয়
হাজারো আকালি রঙ মুছে ন্যুব্জ গোধূলি
স্বপ্নিল সম্পর্কে তোলপাড়, খরতাপ শেষে
বৃষ্টি নামে অনাবাদী জমিতে

প্রসংসা কৃতজ্ঞতায় মোড়া রোজনামচা
জ্যোৎস্নাগড়া পেলব সুখস্মৃতি, মনের কোণে
উঁকি দেয় এক চিলতে প্রেম

উদ্বেগের স্বরলিপি পাঁজরে আত্তীভূত
প্রতীকি ভালবাসায় খাতাভর্তি কবিত, হিমেল বাতাসে
নগ্ন নির্জন হাত

নিবিড় সান্নিধ্য খুঁজে নেয় অলৌকিক মৌনতা
নিরাকার বায়ু নিষ্কাম নির্বিকার, আশার ডিঙ্গিতে
বেঁচে রয় টুকিরো সংলাপ, প্রেয়সীর ঈপ্সিত
মনোবাসনার স্মৃতি হয়ে।






মহম্মদ সামসুর রহমান

একুশ শতক কিংবা আধুনিক

সেই বনলতার সবুজ দ্বীপ দেখার চোখ আমার নেই
আসতে দেরি হলে তুমি আর অপেক্ষা করোনা,
ভালোবাসার মেধাবী পাঠে এখন শুধু খামখেয়ালি ডেটিং
ফেসবুক,ওয়াটস্অ্যাপ,চাটিং
মুড ভালো নেই কবিতার,আঁতেল মার্কা পদ্যেরও
তোমার প্রেম বড্ড বেলাল্লাপনা।
আমি কনফিউজড;নিদারুণ প্রশ্রয় দিতে গিয়ে
আকাশ ভরা সূর্য তারার মাঝেও এমন সর্বনাশা আশকারা;
বেয়াড়া ঈশ্বরের বুক ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে রোমশ ভালোবাসা।
নিজেকে খুঁতহীন করতে গিয়ে যে নোংরা হাতে পূজা করি,
গুরুতরভাবে তাকে ধুয়ে দিই তরল গন্ধে;
‘নো স্মোকিং’ ফলকের সামনে উৎকট ভাবে নাড়ছি
নগ্ননির্জন_একাকী;
চুমু-বিষের তফাৎ খুঁজতে নির্মাণ থেকে বিনির্মাণে। 










গার্গী মুখার্জী


স্মৃতিপট


হারিয়ে গেছে রাঙা পথে
উদাস বাউল সুর,
চড়া রোদে গাছের ছায়ায়
ভরপুর দুপুর ।

হারিয়ে গেছে রাখাল বাঁশি
গরু ভরা মাঠ,
হারিয়ে গেল জল টলটল
দিঘির বড় ঘাট ।

কোথায় গেল বাঁশের বনে
পাতার শন শন,
বৈশাখী সেই সন্ধে বেলার
সুরেলা কীর্তন ।

হারিয়ে গেছে বাগদি বুড়ি
সেই গ্রাম্য সুখ,
বুকের মাঝে উথালপাতাল
অতৃপ্তি অসুখ ।

হারিয়ে গেল ছোট্টবেলার
সুখের স্মৃতি  যত,
বুকের মাঝে বেদনা জাগায়
ঝরা ফুলের মতো ।