০৪ আগস্ট ২০১৬

৩য় বছর ৮ম সংখ্যা





অভিজিৎ রায়

মিলন

পৃথিবীর কাছে যত
অন্ধকার আড়াল চেয়েছি,
আলো তত ফিরে গেছে
সঙ্গীহীন নিজস্ব জগতে,
আলোদের ভুলে থেকে
অন্ধকার শরীরে মেখেছি,
ক্ষোভহীন, দায়হীন
বেঁচে আছি বাঁচার নেশাতে।

কত শত অজুহাতে
আমাদের বাঁচার দলিল,
একদিন খুঁজে পাবে
আগামীর সবুজ ভ্রুণেরা,
পাতাদের খাদ্যাভাবে
নড়ে চড়ে বসে ক্লোরোফিল,
সূর্যালোক চুমু খায়,
জ্যোৎস্নায় বালির কনেরা।

মেঘ শুধু কেঁদে যায়,
মানুষের সুখে ও শোকে;
বৃষ্টি শুধু মেতে থাকে
নিজেদের নিজস্ব আবেগে,
আমি আজ আলো নয়,
ব্যস্ত থাকি আঁধার পরখে,
সঙ্গী তাই দূরে থাকে
নিছকই অভিমানে, রাগে।

আলো নিয়ে একা বাঁচা
অন্ধকার খুঁজে চলে মানে,
আলো আর অন্ধকার
মিলে যায় শরীরী মিলনে।




দেবাশিস সাহা

 অনবরত রাস্তা পার হচ্ছে মৃত্যু

অনবরত রাস্তা পার হচ্ছে মৃত্যু

তুমি সাজিয়ে রাখছো অপেক্ষা

পরের স্টেশনে বসন্ত

আদরের ধারাপাত ডিঙিয়ে
হেঁটে আসছে সেই অনাহুত বাস্তব

আনমনে বেজে যাচ্ছে জীবনের রিংটোন


তুমি শুনছো



ইন্দিরা দাস

চাঁদমামা

বাঁশ বাগানের মাথার ওপর
চাঁদ ওঠে না আর,
শোলোক বলা কাজলাদিদির
খোঁজ মেলাও ভার
চাঁদ ওঠে  আজ ফ্ল্যাটের ওপর
দেখা পাইনা তাই,
কাজলাদিদি পার্লারে যায়
বলে বাই বাই
চাঁদ যদি বা ওঠে তবু
ফুল ফোটে আজ কম
গাছ লাগাতে যাচ্ছি ভুলে
কেমন রকমসকম
টিপ দিতে আর আসে না মামা
কাজল পড়া বারণ,
সত্যি বাবা যুগে সব
অদ্ভূতুড়ে কারণ
অনেক কিছু বদল হল
হয়নি কতক কটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী আজও
ঝলসানো এক রুটি
মা আজও আদর করে
বলে চাঁদের কণা,
আয় আয় চাঁদ মামা

টিপ দিয়ে যা না



পলাশ ব্যানার্জী

শুকনো কবির লেখা পড়ে 

শুকনো কবির লেখা পড়ে আজ বৃষ্টি নেমে এলো
ফুটপাথে নয়, রাস্তাতে নয়, কলম ভিজলো ।

শরীরে জল নাই বা লাগুক, ভেজা কলমের টানে -
ছেঁড়া কাগজ ভিজিয়ে লিখি বৃষ্টি ভেজার মানে ।

বৃষ্টির জল কাগজ ভেজায় মন যে ভেজে না,
জলের তোড়ে সময় ভিজে, - লেখা থামে না ।

শুকনো কবির লেখা কখনো চলে যায় ক্যারিব্যাগে -
বৃষ্টিভেজা - ধুলো মাখানো নিয়তির ওই ত্যাগে ।



দেবাশিস বিশ্বাস মুরারি

আজন্ম
       
তাঁর মাঝে আমি আমাকেই দেখতে পাই,
সে আমার আত্মা থেকে জাত;
তাঁর চোখে মুখে দেহ সৌষ্ঠবের প্রতিটা শিরায় শিরায়,
আমারই উপস্থিতি;
আমি বিষ্ময়ে অবাক হই, আমি বেঁচে আছি -------!!!
চিরদিন থাকব , যতদিন ধরণী আছে ; তাঁর অঙ্গ ভঙ্গি বাচন ভঙ্গির
তালে তালে নির্ঝরিনী ঝর্নার মতো; আমার মন মাঝি আনন্দে নৃত্য করে ।
ক্ষুদে কণ্ঠের আধো আধো সঙ্গীত ধ্বনি, চিরল পাতার ঠোটে,
কুন্দ সন্নিভ দাঁতে, নির্ভুল লক্ষ্যে থেমে থেমে কবিতার প্রয়াস --
আমাকে হংস বলাকার মতো কল্পনার মানসলোকে পাখা মেলায়;
কচি সোনা হাতের এলো মেলো তবলা লহরী
আমার অনুভূতির বুকে যখন স্বর্গীয় পরশে দোলা দেয় ------
তখন ধরাকেই স্বর্গ মনে হয় ;
মনে হয় শত লাঞ্চনার জগতে
শত গঞ্জনার জগতে ---সার্থক আমি; সার্থক আমার পৌরুষ ।
এক অনিন্দ নিত্য সুন্দর প্রাণ;
যে প্রাণে মিষ্টি মধুর বাবা ডাকে ,
বাহু বন্ধনে কণ্ঠ ঘিরে, মিষ্টি আবেশে চুমু দেয় , আদর করে;
আমি একেইতো আনতে চেয়েছিলাম ,
আমার কল্পনার রানীর কোলে ।



০৩ আগস্ট ২০১৬

সৌরভ হোসেন

শেষপাতার অক্ষর

একটা কবিতাকে নৌকো বানিয়ে ভাসিয়ে দিলাম
তোমার উঠোন-নদীতে
বিকেলের গাভীন মেঘকে বলে দিও...
রাত্রির বালিশে আঁকব খাজুরাহোর মৈথুন
স্বপ্নঘুম আর শেষপাতার অক্ষর যেন এক্ষুনি কেটে না নেন
শেষ ট্রেনের টিকিট
পাঠশালার জীবন এখনও আমার চামড়ায় কষে যাচ্ছে--  নিঃশ্বাসের অঙ্ক
এবার থেকে শ্মশানের পুরাতত্ত্বকে বলে দিও --
ছাই এর আকাশেও ভাসিয়ে দেব কবিতার ক্ষত শরীরনাভীর চর্যাপদকিংবা 
শেষ বিকেলের খুনসুটি 
এসো জানালা খুলে দাও
শেষ হাওয়া-চুম্বনটা এক্ষুনি সেরে নি



দীননাথ মণ্ডল

বিবর্তন

ইতিহাসের আগে থেকেও
আমি তোমাকে চিনি
ছায়া-রৌদ্র খেলার
ছবিটার মতো
খনিগর্ভের কয়লাগুলো
গাছ হয়ে নড়ছিল বাতাসে
ডোডো পাখির কঙ্কালটি
শিস দিয়ে যেতো আকাশে

তোমার ঠোঁট চোখ
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কিছুই পালটাইনি
একটু দেখার জন্য
চেয়ে থাকতে ভাঙা জানলাটার সামনে
তাও আবার ঘোমটা টেনে
পাছে কেউ দেখে ফেলে
শান্ত অগ্নিগিরির ভেতরে
দুর্বার প্রলয় স্রোত
কপাল চুয়ে ঘাম হয়ে
পড়ত মাটিতে
শুষ্কমাটির বুকে আমিও
কোদাল চালাতে চালাতে শুঁকতাম
মাটিতে তোমার গন্ধ অতৃপ্ত হৃদয়ে
ভাঙা দেওয়ালে আঁকতে
গিরিমাটির শুকশারির আলপনা...

সময় জল হয়ে মিশেছে বাতাসে
শিশির ভেজা শিউলি
ঝড়ে পড়েছে গাছ থেকে
ব্যস্ত সময় মাড়িয়েছে পায়ে পায়ে
আজ তা আদিমবুদ্ধির ছেলেমানুষী
পাগলামি
এসেছে আমবাগানে পার্ক, সিনেমার নীল অন্ধকার, ডান্সবার
আরও কত কী...
পাল্টে গেছে তোমার চাওয়া পাওয়ার
ঠিকানাও ... 



কৌশিক গাঙ্গুলি

বৃষ্টি

গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি ঝরছে মনে
শেষ দেখার স্মৃতি এখনও অম্লান হয়ে তারপর একদিন
চাকরির সন্ধানে আমি ,
তুমি খুঁজতে চলেছো সংসার ,
এরপর হঠাৎ এক কালবৈশাখী
সব ওলট - পালট
আজকাল আর ভাবতে চাইনা
কিছু , তবু গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি
ঝরছে মনে -
আজও সেই বেকার বাউন্ডুলে
আপনমনে কবিতা লিখে চলি ,
পাখিরা যেমন আকাশ নিয়ে ওড়ে
নদীর জল ছলাৎছল নতুন যেন সুর ,
তোমার ছবি ভুলতে পারি নাগো
গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি ঝরছে মনে
আজও সেই বেকার বাউন্ডুলে
আপনমনে কবিতা লিখে চলি




খুশবু আহমেদ

রুপোলি ঘুম

       রাত আজ ডাকছে আমায়,
       ঘুম মিশেছে শিরায় শিরায়
       আকাশ খেলবে চাদে হোলি,
        রুপোলি রঙে স্বপ্ন মেখে
        তবু আছি আলোর অপেক্ষায়|

        জ্যোৎস্না রাতে তারার হাসি
       নি:ঝুম উল্কার পতন,
      কিংবা শতাব্দী পরে ধূমকেতুর আগমন!
      ঘুম আজ ছায়াপথের সঙ্গী হয়ে ,
      রাতের আলোর গন্ধে ভিজবে!




বুদ্ধদেব দাস

আমার বাংলা

বাংলা আমার মায়ের নাম গো
বাংলা আমার পিতা
বাংলা যে আমার বুকের বল
বাংলা মুখের কথা

বাংলা দুটি চোখের তারায়
বাংলা আমার লেখায়
বাংলা আমার জীবন মরণ
বাংলা মাঝির নায়

বাংলা আকাশে বাতাসে
বাংলা খুঁজি সাগরে
বাংলা ফুলে বাংলা সুতোয়
বাংলা মালা গাঁথরে

বাংলা গাছের সবুজ পাতায়
বাংলা রক্ত লালে
বাংলা সূর্য চাঁদের কিরণে
বাংলা চাষির লাঙ্গলে।।

বাংলা স্বাধীন সত্য সুন্দর
বাংলা ভূমি বন্দনা
বাংলা মাঠে বাংলা ঘাটে
বাংলা ফুল মন্দ না

বাংলা হাওয়া সবুজ ধানে
বাংলা দে দোল দে দোল
বাংলা স্বপ্ন জাগরণে
বাংলা মায়ের কোল

বাংলা মায়ের সোনার ছেলে
বাংলার বাড়ায় মান
বাংলা আমার মন ছঁইয়ে যায়
বাংলা ভাষার গান





চিরঞ্জিৎ সরকার

ব্রহ্মঞ্জান

শূন্য ব্রহ্ম দুটোই আঁধার হয়ে
তবু আছি কোন এক বিশ্বাসে
কি বিস্ময়! তারাদের মাঝে

সহজ হয়েপূর্বপুরুষ শুয়ে থাকে
সহজ হও সুলভ নয়
অথবা ভাঁঙো নিজেকে
এতো ভয় কেন?বাঁচো
অথবা বাঁচতে দিয়ে
দ্যাখো সহজ কত
সংসারে প্লাবন যে জলে
সে জলে তোমার
ভাসান নেই
শব্দের অধিন হয়ে
লিখি,শুনি,মুখস্থ করি
বসে শব্দ ষড়যন্ত্রে মাতি
শব্দের নেশায় বুনি মৃত্যু
প্রভু হাসেন অঙ্ক দেন গুঁজে
নীরব থাকি ,দেখি
নীরবতার সম্পদ হারিয়ে যায় নিঃশ্বাসে




পীতম চট্টোপাধ্যায়

কিপtale!

"কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায় - কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার ডানা?" এমন অসহজ প্রশ্নের সাথে হয়তো এমন পঙক্তি আসতে পারতো - 'কতটা টাকা জমালে কমে - 'হঠাৎ কিছুর' ভয়? কতটা দামে বিক্রি হবে  টলমল সময়? 'এপ্রশ্নের উত্তরে go as you like এর মস্তি আছে - " উফ বাঁচলাম "- ধরনের স্বস্তি আছে - হয় ব্যাঙ্ক নয় ব্যালেন্স আছে - কাঠ কয়লার আংরা আঁচে
বাতিকের  বৈজ্ঞানিক নাম- ক্রনিক অবসেসিভ ডিস অর্ডার! সেটা কারুকে আড়াই বালতি জলে ধোয়ার পরেও কড়ে আঙুলটা অপরিষ্কার দেখায় তো অন্য কারোকে হঠাৎ কিছুর ভয়ে - নিশ্চয়তার আলেয়ার পিছু ধাওয়া করায়! হৃদয়ে দৈন্যর চাষবাস করাও এক ধরনের বাতিক কৃপণ প্রসঙ্গে বলতে গেলেই প্রথমেই যথারীতি তিনি- অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ চলে আসেন " ঝুলি থেকে দিলেম তুলে একটি ছোট কণা"  ওই এক কণায় গাঢ় আকুয়াফরটিস  - ঠিক জায়গায় পড়লে স্রেফ গলিয়ে এঁফোড় ওফোঁড়
যদিও অনেক সময়েই কাব্যিক উপস্থাপনা বাস্তবের গায়ে হাল্কা সহানুভূতির পলেস্তারা চাপায়  উপসংহারে - আত্মউন্মোচণের মেলোড্রামার পাঁচফোড়ন - ফোঁস ফোঁস করলেই হাসি উলটে চাপা দিয়ে খানিকক্ষণ ভাপে রান্না কান্না! বাস্তবে কিপটে দের কোনো অভাবের কোয়ালিফিকেশন বা অনুতাপের হ্যাপি এন্ডিং থাকুক বা নাথাকুক - আনহ্যাপি স্পেন্ডিং বেবাক হাওয়া! সাধারনত খরচ করার সময় এলে এঁদের আঙুলে আর্থারাইটিস - পকেটের অতলাইসিস বা নিদেন খুচরোর ক্রাইসিস হয় অপাঙ্গে পুর্ব নির্বাচিত বৈতরণীর মানিব্যাগের দিকে খেয়াল রেখে ঠিক এক অনুপল পরে কুমীর ছানার মত মাস কাবারী নোট টা বার করে তিনি বলেন - " আহা - এবার নাহয়.....আমিই দিতাম"( এই আমিই দিতাম অংশটা শুনতে পেলে আপনার আগামী ২১ বছর কালা হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই) অথবা নিশব্দেই নোট ঢুকে যায় গুনগুনিয়ে - " তুমি রবে নিরবে....."
সত্যি বলতে কি কিপটে কোনো বিশেষণ নয় বরং অব্যয় আপনি যখন কৃপণ বলে গাল দিয়ে খরচের ঘায়ে  ফুঁ দিচ্ছেন - তিনি কিন্তু মনে মনে নিজেকে keep on শাবাশি দিচ্ছেন - আর জমাচ্ছেন আত্মশ্লাঘা আরে বাবা অশ্লেষা মঘা - এড়াবি ঘা?
কিপটে রা সব চাইতে কম খরচ করেন কোন জিনিষ এর উত্তরে আপনি যদি টাকা পয়সা ভাবেন তাহলে ডাহা ফেল -সঠীক উত্তর টা হল " লজ্জা" নিজের পকেট এর ডায়েট একচুল এদিক ওদিক হবেনা - জগতে রায়ট লাগলেও  কিন্তু অনায়াসে - অন্যের ঘাড় ভাঙা জমায়েতে  সামিল, কখনোবা বেহায়া আহ্বায়ক হয়েও ! মুখে অনাবিল হাসি - গান্ধীছাপ অন্ত:পুরবাসী  সাধারণ মানুষেরা টাকা তুলে - দরকারে কিছুটা সরিয়ে রাখেন - আলাদা করে! কিপটেরা অযথা নড়াচড়ায় নেই - স্রেফ তোলেন না- শর্টকাটের গলী ভোলেন না এবং  সর্বোপরি - চট করে মুখ খোলেন নানা না অভিমান নয় - এটাও স্ট্রাটেজি  দিনের শেষে - বালিশের বদলে গাঢ় হয়ে জড়ান পাসবই -মশারীর ভিতর নববধূর ঘোমটার মত আদুরে নেট ব্যাঙ্কিং - "ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা ছি: - এনইএফটি!"
আসলে ব্যায়কুণ্ঠ দের বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি ওই সংখ্যা দর্শনেই! "আমার এত জমল"- অনেক যেন টা সুন্দরী দের আদুরে আবদারের  - ব্রীড়াবনত-ভুঁড়ির মত "এই দেখোনা - একটু কমল? "!
কিপটে মূলত দুধরনের - সিলেকটিভ এবং কার্পেট! কার্পেট দের কেস টা আলাদা - তাঁদের কিপটেমি সার্বজনীন - কার্পণ্য করার সময় কার পণ্য - সেটা নিয়ে মাথা ঘামান না এঁরা এঁদের লিপ ইয়ারে কেনা জামা- কোমা ফেরত হাতঘড়ি - আর না কামানো দাড়িই হল সিগনেচারআর সিক নেচারের কিপটে রা কিন্তু বাড়ির বাইরে প্লাস্টার না করলেও ভেতরে প্যারিস নিজের জন্য পিজা হাট আর গিন্নীর জন্য মংলা হাট আর বাংলা তাঁত বিশ্বাসী বাড়িতে মাটির হাঁড়ি থাকলে এঁদের সর্বনামে ডাকাই শ্রেয়!
তত্ত্বগত ভাবে সঞ্চয়ের প্রধান উপাদান দুটি - প্রথম হল খরচ স্থগিতকরণ আর দ্বিতীয়টা হল রূপান্তর যোগ্যতার তারতম্য সেক্ষত্রে পরবর্তী জীবনের কোনো লক্ষ - বা বড় খরচের জন্য সঞ্চয় - অবশ্যই জরুরী এবং মেধাবী সিদ্ধান্ত কিন্তু যদি পাখির চোখই ফিক্সড ডিপোসিটে ফিক্সড হয়েযায়- তাহলে  উদ্দেশ্য বিধেয় মিক্সড হয়ে এক্কেরে হাঁড়িফাটা কেস
যতদিন অব্দি টাকা - শুধুমাত্র প্রয়োজনের নিক্তিতে মাপা হত - ততদিন পর্যন্ত একটা হিসেব ছিলউদাহরণস্বরূপ - আমার তিন ঘন্টা ভালো সময় কাটাতে - সিনেমা হলে গিয়ে পপকর্ন খেয়ে - কতটাকা লাগবে আমি জানি! কিন্তু যেটা জানিনা সেটা হল - বাইস বছর বাদে আমার বাঁ বগলের ফোঁড়াটা ম্যালিগন্যান্ট হবে কিনা? অতএব - জমদগ্নি - ঘি না ঢেলে পারছিনা! কৃপণ দের থেকে বেশি পরার্থপর এবং ভুয়োদর্শী কেই বা হতে পারে? এঁরা - বর্তমান - এই সময় বা কোনো বাজারেই আনন্দ পান না শুধু সিএনবিসি পিএনপিসি মন দিয়ে শোনেন - আর অবসরে টাকা গোনেন!
বছর পঁয়তাল্লিশ পেরোলে এমনি তেই ডাক্তার শশা, আর উপভোক্তা রা আমাশা উপহার দিলে এঁনারা স্বাদরে গ্রহণ করেন  আলমারি আধপাল্লা খুলে সঞ্চয়িতা অথবা সঞ্চিতা - বার করেন  এদুটি তো অমূল্য সঞ্চয়- তাই পরে পড়বেন বলে ফের তুলে রাখেন- আত্মশ্লাঘার চড়া ইন্টারেস্টে  কবিতা পিস পিস হয় - অমোঘ রেস্ট ! বাঁদিকের বুক পকেট টা সামলাতে সামলাতেই ইহকাল - পরকাল চলে যায়  তুঁহু তুঁহু করে জমিয়ে রাখা বিশাল সম্পত্তি দায়িত্ব  নিয়ে ফুটিয়ে দেয় প্যারাসাইট পুত্র - পৌত্র বা ভাইরাল ভাইপোরা
হিমালয়ের পথে কিছুদিন ঘুরলে যেমন গন্তব্য নয় পথচলাতেই আনন্দ পাওয়া যায়  ঠিক তেমনি - টাকা পয়সা, সঞ্চয়- কখন যে আনন্দ - সুখ - সাচ্ছন্দ্যের গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ থেকে নিজেই গন্তব্য হয়ে যায় - টের পাওয়া ভার! যে জল ছাড়া নৌকর এক পাও নড়ার উপায় নেই - সেই জলই যদি নৌকর ভিতরে খুব বেশী ঢুকে পড়ে তার পরিনতি কি জানান  এলিয়েটের সাইলাস মার্নার - বা ডিকেন্সের এবেঞ্জার!

"শারীরিক ভাবে চরম সুস্থতার লক্ষণ হল কিপ্টেমি - নাহলে অফিস ফেরতা হেঁটে বাসভাড়া বাঁচবে নাকি? কোনো ওলা বা উবের নয় - শীতকালে বোরলীন মাখি!" - উক্তি একজন বিখ্যাত কঞ্জুসের -মেপে খরচ করার প্রতিবর্ত ক্রিয়ার অনুপ্রবেশে যিনি এখন ক্রনিক কোষ্ঠকাঠিন্যর রুগী তিনি বলেন - খরচ করতে গেলে নাকি তাঁর আক্ষরিক অর্থেই " গায়ে লাগে" - মানে শারীরিক কষ্ট হয়
ইন্সিয়োরেন্স উপহার দিচ্ছে বহুমূল্য ডেডবডি হওয়ার নিশ্চিন্ততা মেডিক্লেম অপেক্ষা করছে - অসুস্থ হলেই এসি কেবিন আর ইংরেজি বলা দেশী বিদেশী সেবক সেবিকা নিয়ে! এফডির সুদ ট্যাক্সেবল যাতে না হয় তার জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে ফের বিনিয়োগ হাড়ে - পাঁজরে - মগজে ছড়িয়ে পড়ছে সঞ্চয়ের সুখ লুকোচুরি রোগ!
মনস্তাত্ত্বিক রা বলছেন - কৃপণতা - সঞ্চয়াধিক্যদিতে পারেনা কাঙ্ক্ষিত security বা নিশ্চয়তা বরং উলটো টাই এত টাকা জমে গেলেই নিশ্চিন্তি -এই ধরনের - মিছিমিছি মাইলস্টোন - ভুল হিসেব দেয় - দিকশূণ্যপুরের টাকার আড়তদারের জীবন কিন্তু অনেক সময়েই বিক্রি হয়ে যায় খুব কম দামে তার মানে এই নয় অবিমৃশ্যকারী খরচের জীবন সুখের হোল সেল মার্কেট! সেখানেও হঠাৎ খরচের হড়কা বাণে বিদ্ধ আধ সিদ্ধ ব্লাঁশফেমি আছে! এম আই এর লাল চোখ - হোঁচটাহত পায়ের নখ সবই আছে! কিন্তু টাকার কাগুজে হতাশা নেই! মগজে হিসেবি হাঁসফাঁস নেইকিপটে না হলে বিখ্যাত না হোন -সৎ শ্মশান যাত্রীর সংখ্যা কিঞ্চিত বাড়তে পারে! আর সুখ? সে তো অন্য চ্যাপ্টার- - সাদা কালো - গুটী সুটি মারা এক জোড়া গেঁয়ো সারল্যর ভরাট গলা - "......  যার ভাণ্ডারে রাশি রাশি "
মেনুহিনের বেহালা - চৌরাশিয়ার বাঁশী - এজীবন - ছাড়িয়া যায় - কৃপণ - বিপনন তবু আলোর প্রত্যাশী!

কয়েকটা প্রাসঙ্গিক তথ্য-
উৎস:-  Cognitive Psychology Synopsis
.কৃপণ দের মধ্যে হোর্ডার - বা জমানো প্রিয় আর বোর্ডার - বা দৃশ্যত কার্পণ্য প্রদর্শনে উৎসাহী দুই স্তর সম্পর্কে বলা হয়েছে!
.শুধু টাকা পয়সা নয় - কৃপণ রা হাসির ক্ষেত্রেও rationing করেন এঁদের মধ্যে একধরনের ' রাম সন্যা' - ধাঁচের ভীতি কাজ করে বেশি হাসলেই সামনে দুর্দিন আসবে
. এঁরা নিজেদের বঞ্চিত বা অবিচারের কেন্দ্র ভাবতে পছন্দ করেন এঁদের মধ্যে অন্য মানুষ কে ভরসা করার আগের দন্দ্ব ( sceptic attitude) - মাত্রা বেশি থাকে - যার জন্য মানসিক অবসাদ বা চাপ ( stress) সমস্যা উল্লেখ যোগ্য বেশি
. সম্পর্কের ক্ষেত্রে ৪৪% কৃপণ অনেকাংশে ব্যার্থ - বিচ্ছেদ পীড়িত
. শারীরিক এবং মানসিক সাস্থ্যের ক্ষেত্রে কৃপণ দের অসাম্য লক্ষ করা যায় শারীরিক ভাবে বেশ সমর্থ হলেও - কোন দায়িত্ব বা নেতৃত্বর ক্ষেত্রে এনারা চট করে যেতে চাননা - বরং wait and see পন্থায় বিশ্বাসী এবং খুব বাধ্য না হলে প্রকাশ্যে সমালোনা না করলেও - কোন বিপ্রতীপ মতবাদ মেনে নিতে এঁরা প্রায় সম্পূর্ণ অসমর্থ
. সাধারণ জীবনী সারণী সাপেক্ষে এনারা দীর্ঘায়ু হন - কিন্তু - আয় - উপভোগ সূচক ( productivity - consumption index) এর নীচের দিকে থাকার জন্য নিজের বা কাছের মানুষের জীবন প্রাপ্য সাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত থাকেন
সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতি ক্ষেত্রেও এঁদের প্রভাব ঋণাত্মক - কারন সাধারণত এঁদের সঞ্চয় - বাজারে - বা ঝুঁকিযুক্ত - equity থেকে দূরে থাকে - ফলত অর্থনৈতিক পটুত্ব বা economic efficiency প্রেক্ষিতেও লাভের ভাঁড়ার শূণ্য
আধ ডজন দিলাম - বাকি গুলো উৎসাহীরা চাইলে - আড্ডাতে পারি :)