১১ জানুয়ারী ২০১৪

সম্পাদকীয়


সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা । নতুন বছর সবার জীবনে নিয়ে আসুক একগুচ্ছ সুখের বাতাস । ‘প্রতিচ্ছবি’ ব্লগজিনের এটি নতুন বছরের প্রথম সংখ্যা ।এই সংখ্যাতে ইচ্ছে ছিল ‘কবিলেখক’ প্রকাশের । ‘কবিলেখক’-এ বাংলা ভাষাতে যারা নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করছেন তাঁদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেল থাকবে । সেই সাথে ‘পত্রপত্রিকা’- তে থাকবে নিয়মিত যেসব পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয় তার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেল । পরবর্তীতে সেই কাজ করার চেষ্টা করা হবে । আপনাদের সহযোগিতা এতে প্রয়োজন । আপনার এবং পরিচিত কবি ও লেখকদের নাম, ঠিকানা পাঠাবেন । ‘প্রতিচ্ছবি’ আয়োজিত ‘সারা বাংলা স্বরচিত কবিতা ও ছড়া প্রতিযোগিতা’-র ফলাফল এই সংখ্যাতে দেওয়া হল । সবাই ভালো থাকুন সবখানে সবসময় । সবার শুভ হোক ।

কাব্যিক অভিনন্দনসহ---

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক 






যোগাযোগ : pratichchhabi@gmail.com

অলংকরণ : প্রীতম দাস  

নাসের হোসেন


পাতা 


কখন যে ঝরে পড়েছে পাতা
এখন কুড়িয়ে নিচ্ছি, পাতার উপরে
কত কিছু লেখা রয়েছে, কিন্তু সব লেখা কি 
সবসময় পড়া যায়, পড়া কি সম্ভব
তবু পড়ে যাচ্ছি, হয়তো শেষ পর্যন্ত
কোনোকিছুই বোঝা যাবে না
শুধু এই পড়ার আনন্দ



কবিরুল ইসলাম কঙ্ক


আমাদের গৃহকোণ



সন্ধিযুক্ত বেমানান অস্তরাগ, স্বাভাবিক ভূকম্পন
ক্রমাগত ভেঙে দেয় বোশেখের মজবুত জোড়
স্বপ্নের জানালায় চিরাচরিত রঙিন রুমাল
নদীর উজানে দিশেহারা প্রতিশ্রুতির মোড়

ঘোরে আছি । ঘরে আছি । আছি খোলা আকাশে
বিপ্লব চেতনায় আকাঙ্ক্ষার বিকল্প অর্থনীতি
কাকে দেব রাজার পার্ট ? ভাবতেই হঠাৎ সূর্য
বুকের বোতাম খুলে দেখায় রোদের পিরিতি

জমি-জমা-জামা সব একই মুদ্রা । বদলায় পিঠ
এবং সেখানে আবহমানকালের চাবুক দাগ
মেনে নিয়েছি শাসন, গোলা শূন্য উদাসি দুপুর

আমাদের গৃহকোণে নিরন্ন খুদের অন্তরীন ফাগ 




সৈকত ব্যানার্জী


মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে...



মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে...
হাড়গোঁড় জুড়ে জুড়ে...
হাতে পায়ে বারে...
ইতিহাস...।
কারো কোন ভুলে...
গলা মোমে জ্বলে...
কেউ অবশেষে পায়...
মুক্তির আশ্বাস...।
তবু ফাটা চামড়াতে...
ফাঁকা ফুটপাতে...
বেঁচে থাক...
ফুলকি আগুন...।
আরও কিছু শীত...
বাঁচিয়ে অতীত...
জড়িয়ে ধরুক তোমায়...
নিয়ে-যা কিছু নতুন.. .


গোপাল বাইন

নৌকা ও ধনুক

নৌকা থেকে অনেক সময়
তীব্রগতিতে তির বেরিয়ে যায়
আর ধনুক তখন নৌকা হয়ে
নদী পারাপারের দায়িত্ব নেয়

এসব অসম্ভব সম্ভব হয়
তবে তার আগে জানা দরকার
মানুষ নৌকা না ধনুক
কোনটার বেশি প্রয়োজন
আগে অনুভব করেছিল





১০ জানুয়ারী ২০১৪

গার্গী মুখার্জী

রাঙামাটি 

এই মাটিতে জন্ম আমার
এই মায়েরই কোলে,
প্রথম সেদিন কেঁদেছিলাম
তাকেই মা মা বলে ।
হামাগুড়ি পায়ে চলা
সবই যে তার বুকে, 
খেলাধূলা নাচ গান
কেটেছে দিন সুখে ।
ছোটবেলার পুতুলখেলা
ঝালঝাপ্পার গাছ,
বাঁশবাগানের মর্মর সুর
মাটিগন্ধের কাছ ।
রাখালছেলের গরুর সাথে
নগ্ন পায়ে চলা,
রাঙামাটির রঙিন উড়ান
সকাল সন্ধ্যেবেলা ।
রাঙামাটির পথের ধারে
আকন্দ হাসি ফুল,
তুলতে যাওয়ার তাড়ায়
পড়াশোনায় ভুল ।
সারা গায়ে ধুলো মেখে
খেয়েছি খুব বকা,
এসব কথা মনে পড়ে

যখন থাকি একা ।  



সৈকত ঘোষ

সপ্তম তরঙ্গ 

জীবন থেকে ইতিহাসটা বাদ দিলে 
তারকাটা টেলিফোনের মতো  
পড়ে থাকে যৌবন 

রক্ত মাখা স্ট্রেফ্রি গ্রিটিং কার্ড নয় 

পৃথিবীর সবকটা জানালার ওপারে 
মুখগুলো একই 

চায়ের কাপে কথারা বাষ্প হয় 
কথারা কি দায়বদ্ধ ?

সরকার ক্লিনচিট না দিলেও 
নাভির নীচ থেকে পৃথিবী আঁকা হয় 



ইন্দ্রনীল

খেয়ালী / ৩৩ 




মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে রং 
সুধু ইউনিফর্মের রংটা বেঁচে আছে এখনো 
বহু বছর আগে ছিল শিকড়ে লেগে থাকা মাটির ঘ্রাণ
যেভাবে নদী সাগরে মিশে হারিয়ে যায় নিজের নাম 
সেভাবেই আমিও হারিয়েছি আমার নাম 

আমাদের তাঁবুতে আলো জ্বালা মানা 
কখনো কখনো রাতের রঙ্গমঞ্চে 
অজান্তে ঢুকে পড়ে কিছু অবাধ্য আলো
তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াই আয়নার সামনে 
বৃথা খুঁজি, চেনা ঘ্রাণ 
এখানে শুধুই বেঁচে আছে আমার ইউনিফর্মের রংটা  





পলিন কাউসার


ঋষি



নিষ্প্রদীপ ঘাটে,
শান বাঁধানোর আলো খুঁজে বেড়ায় জনৈক হরহরি দাস,
ভগবান ভৈরবের পুজোয় নির্দিষ্ট করা  
তামসীর রং চিনতে ভুল হয় না যার অবেলাতেও,
পবিত্র তুলসীর আহ্নিক সূচিতে কোনদিনও
সময়ের পারদ উঠানামা করেনি এই নমস্য জনের,
দাসত্বের সবটা উজাড় করে তিনি ধনেশের অঞ্জলি গাঁথেন,
আশ্বাস শূন্য, উপবাসী আর নিরালম্ব হরহরি,
ঠাকুরের চাতালেই স্বর্গের বোধ পান যেন,    

জীবাত্মার গৃহীত পেশায় ধ্যানরত তিনিই একজন লৌকিক ঋষি।    



রইসউদ্দিন গায়েন

কবিতায় আন্দামান   


এখানে সবুজের ভিড় --
ঘননীল সাগরপারে
নারকেল সুপুরির নাচ
ঝোড়ো বাতাসের ডাক
শ্যামল বনভূমি
বর্ষারানীর খেলা
ধূসর বালুকাবেলা
ঝিনুকের মেলা
রংবাহারি মাছের খেলা
নিমগ্ন প্রবাল-কোরালের দেশে।
পাহাড়ি ঝর্নাতলা, উর্বর সমতট
কিষান-কিষানী, ফসলের হাতছানি
ঘনঘোর বাদলা মেঘ
বনান্তরে সন্ধ্যালগ্ন, দীপশিখা
শঙ্খধ্বনি,আজান, কল-কাকলি
বাঁশের বনে।
ওপারে রূপসীর উজান বাঁকে
ভেসে যায় মনুয়ার জেলেডিঙি
সুখের নেশায় দুটি পাখি
দোল খাওয়া ঝাউয়ের ডালে
আলো আঁধারে, পূবাকাশে চন্দ্রিমা
পশ্চিমে উজ্জ্বল দুটি তারা
ছলছল নদীজলে রূপালী সাজ
ভেসে যায় কোন্ অজানায়!
মায়াবী রাত, নিবিড় স্নিগ্ধতা ---
শান্ত আবেশে স্বপ্নপুরী আন্দামান


তানিয়া চক্রবর্তী

নারীচিত্র


যতদিনে তুমি তুমি হবে

বাঁচিয়ে দেবে ভেজা খড়
নিঃশব্দে ভাববে রাতের  একা কুকুরের কথা
ততদিনে বিচ্ছিন্ন ঘরের বিছানায় জেগে থাকা
একা মেয়ে নিজেকে ছাপাতে শিখে যাবে
তার দায়িত্বের বোতাম কেন  পড়ে থাকে রাস্তায়!
              --- ভাববে না সে আর
ততদিনে তুমি তুমি হবে  না
আসলে আমরা প্রত্যেকে শুধু জীব
অনুভূতি গাড় হলে মাছি ওড়ে  বিছানায়
যে মেয়ের অর্ধেক মুখ 
তোমার ক্যানভাসে ভ্রূণ মাপছে
তাকে তুমি হারাচ্ছ---হারাচ্ছ  জন্মের সময়কে
শুধু ভ্রূণ আর স্তন দিয়ে নারীচিত্র ফোটে না
যতদিনে তুমি তুমি হবে
ততদিনে একটা লিঙ্গ- নির্ধারণ যন্ত্র

বিলুপ্তির আগে জেহাদ শিখে যাবে---