১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

২য় বছর ১১সংখ্যা




কবিরুল ইসলাম কঙ্ক


সুহৃদ, ফিরে এসো


সুহৃদ, বাড়ি এসো
তোমার জন্য বুড়ো মা বাপ ঘুমায় নাকো রাতে
হুলো বিড়াল মুখ দেয় না ঢাকা দেওয়া ভাতে

কোথায় আছো, সুহৃদ
ভালো মন্দ জানিয়ে শুধু একটি লেখো চিঠি
পুনে গোয়া পাটনা না বোম্বে দিল্লি সিটি

সুহৃদ, ভালো আছো তো
খবরবিহীন আমরা সবাই সত্যিকারের পরিসান
থমকে গেছে দেওয়াল ঘড়ি, বন্ধ আছে টেপের গান

ফিরে এসো, সুহৃদ তুমি
আড্ডাতে যাও তাস খেলো, মন দিও না কারবারে
ঘরে আসুক মধুমিতাই--- চাইবে তুমি যারে

সুহৃদ, তুমি কেমন ছেলে গো
বুদ্ধুরামের বুদ্ধি তোমার, কবে হবে মতি
একবারও কি পড়ে না মনে ছন্নছাড়া স্মৃতি    



১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

মোজাম্মেল সেখ

ঘরে ফেরা


বুকে ধরে অনন্ত আকাশ – থই থই
চোখের সাগরে – গাঁয়ের বুনো ঘ্রাণে
চেনোনি আমায় –
বনসাই বানাতে চেয়েছিলে রঙিন ব্যালকনিতে ।
উদাসি হাওয়ায় ফুটছে স্বপ্নের ফানুস 
একতারা বুকে আমি এখন গৈরিক মানুষ ।

দুরন্ত রাজপথ পাগলা হাওয়া
পড়ন্ত বিকালে তোমার বেসামাল শাড়ি
মাথা কোটো লজ্জায় ---
ছিন্ন উত্তরীয় তোমার মান ভাঙায় ।

সকালের মেঠো পথ – ধুপধাপ
ঘরে ফেরো দুঃসাহসী মেয়ে
লাজুক ঘোমটায় ।



গোপাল বাইন

যাত্রী


একটি পালতোলা নৌকো যখন
নদীপথ ধরে তরতরিয়ে যায়
তখন নৌকো জানে না
পালের সাথে কত উদাসী
পাড়ের কত আনমনা-বিমনা রমণী
তার সাথে দূরে আরও দূরে
হারিয়ে যেতা চায় ।

নৌকো, নৌকোর পাল অথবা মাঝি
তারা এসব খবর রাখে না
যদি রাখতো
তাহলে আঘাটে নৌকো ভেড়ালে
কত কত যাত্রী পেয়ে যেত ।



সুদীপ্ত বিশ্বাস

ব্যর্থতা


তোকে দিয়েছি আলো ঝিকিমিকি
বাজাতে চেয়েছি দ্রিমিকি দ্রিমিকি

তুই পারতিস ঠিক পারতিস তুই
আমাকে দেখাতে ফসল সবুজ ভুঁই

আমারই তো ছিলি আমারই তো ছিলি
ভোল পাল্টালি রঙ বদলালি

ঘোরালি অনেক অন্ধ গলি ও লেন
হতে পারলি না সেই বনলতা সেন ।



কৌশিক বড়াল

সময়ের ডাক


বালুচরে ছড়ানো জীবন জোছনা
রোমাঞ্চকর নির্জনতা
অবাক করা .... চাঁদের আলোয়

অন্তবিহীন .... পাক খেয়ে

গোপনে নির্যাস ছড়ায় মুগ্ধতা
রহস্যে পূর্ণ জন রোলে গড়িয়ে যায় দিন

সোনা রোদ্দুরে গা মুড়িয়ে
উঠোন জুড়ে সময় ডাকে ....



সমীরণ

হাওয়ার গায়ে লেখা


সেদিন ভোরে আটকে ছিল হাওয়া
আঁজলা বেয়ে নামে বিষাদ জল
ভুবনডাঙাও ঝাপসা হয়ে আসে
স্তব্ধ হল শহর, কোলাহল ....

এইতো সেদিন গুনগুনিয়ে গান
ক’দিন আগেও ‘দুপেগ ঢালো গ্লাসে’
সেদিন রাতেও নীরার কথা ভেবে
উৎকণ্ঠা বুকের নীচে ভাসে

মধ্যরাতে পোশাক গায়ে তার
ভীষণ গভীর অন্ধকারে বাস
থামলো এসব চোখের কিনার ছুঁয়ে
মৌন হল শাসনপ্রিয় শ্বাস

প্রিয় শহর ধুলি বসন গায়ে
ব্যালকনিতে একলা হয়ে যাওয়া
ছাইদানিতে রইলো পড়ে ছাই
উড়তে থাকে আটকে থাকা হাওয়া ....



১০ ডিসেম্বর ২০১৪

মোহাম্মদ সৌরভ হোসেন

মানুষপোড়া ছাই-এ গড়া মানুষ


মানুষপোড়া ছাই দিয়ে মানুষ গড়েছো কখনও ?
রঙ তো কতই নড়াঘাটা করলে। রঙ বদলের পালা
কত ঢিলই না ছুঁড়ল । মানুষপোড়া ছাই-এর গন্ধটা
আর কত শুঁকবে ? নদীও আর কত সহ্য করবে ?
এত উর্বরতা দিল নদী । সভ্যতা । ফসল । ডিঙি । আর  
তোমরা দিলে ছাই । ছাই পুড়লে কী হয় ? তারও
একটা নাম দেওয়া দরকার । প্রজাতি এবং
গোত্র – দুটোরি সেক্স থাকতে হবে ।
লিঙ্গ নির্ধারণ করার দায়িত্ব বেশ্যাদের ।
এত খোসা উদড়ানোর পিঁয়াজ, রাঁধুনিরও নেই ।
শ্মাশানে ছাইয়ের ঘাটতি পড়লে – মধ্যপ্রাচ্যে যেও
ক্ষেপণাস্ত্রে পোড়া ছাই আরও বেশি মানুষ মানুষ মনে হবে
কলমাপড়া গর্ভে কতই তো মানুষের জন্ম দিলে । এবার
মানুষপোড়া ছাই দিয়ে একটা মানুষ গড়ো । আর
সে মানুষটাকে জিজ্ঞেস করো --
সে আর কখন ও পুড়তে চায় কি না ?
মানুষপোড়া ছাই-এ গড়া মানুষ সম্ভবত ‘না’-ই বলবে ।



ধীমান বসাক

শেষ বিদায়

বিদায়ের ক্ষণ সমুপস্থিত
প্রায় সাত বছর ধরে যে সম্পর্ক
তিলে তিলে গড়ে উঠেছিল,
এখন তা শেষ হয়ে যাওয়ার পথে
কত সুখ, দুঃখ, আনন্দ রাগ অভিমান,
হয়তো কোথাও লুকিয়ে ছিল একটু ভালবাসা
চলে যাবে তুমি কিম্বা আমি
পড়ে থাকবে স্কুল, মাঠ, গাছপালা সব
ওদের তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই !
যদি কখনো দেখতে আসো , স্মৃতিগুলো তাড়া করবে,
বলবে, ‘সব ঝুট হ্যাঁয়, তফাৎ যাও
আমরা নিজের নিজের পথে যাব
সে পথ চলা কেমন হবে জানিনা,
যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে হৃদয় জ্বলে গেলেও
সক্রেটিসের মত বলতে পারবো না,
প্লেটো, প্লেটো, আমায় আরেক পেয়ালা নীল দাও
সময়ের স্রোতে একদিন সব বিলীন হয়ে যাবে
শেষ বিদায়ের আগে সাথী আমার জেনে যাও
তোমার সৌভাগ্যে আমি ঈর্ষান্বিত !



০৮ ডিসেম্বর ২০১৪

সেলিম জাহাঙ্গির

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে ভর্তুকি

.... না হলে যে ফেলা যাবে না
এক পা-ও
সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে বিশ্ব
ঠিক, ঠিক .... , ঠি-ই-ক, ঠি-ই-ক ....
ভোগের তরলে ঠান্ডা হয়ে ওঠে
আগুন
লীনতাপকে বাজি রেখে
রাজকীয় খুনসুটি,
হালে পানি পায় না শীর্ণ নদী–স্রোত
যখন তখন পথ আগলায়
আগুনের হলকা
জনবিরল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে
অগত্যা ঢুকে পড়ে অচিন অনুঘটক





সেঁজুতি ভট্টাচার্য

মেঘ 


তোমার ঘরে মেঘ জমলে
আমার চোখে বৃষ্টি নামে
হৃদয়ের বুকে জমিয়ে রেখেছি জলপ্রপাত
মনে হয় আকাশের সূর্য নিভে গেছে
পায়ে মেঘ সন্তান পড়ে থাকে
আসব আসব করে আজ নেমে এলে
একটা পৃথিবী একটা জীবন
নিয়েছি তাই ভাগ করে
আর হার মানি এখানেই ।



জৈদুল ইসলাম

জ্যান্ত হতে চিঠি 


জীবনে কষ্ট ভরা যন্ত্রণা 
ও ভ্যাপসা অনেক স্বপ্ন কিন্তু এলোমেলো 
ধরে রেখো না
দেখে লাভ নেই ধ্বংস করো, পাথর করো 
বাঁচতে চাইছো, সংগ্রাম ছাড়াই 
চেষ্টাও করো না, মরে যাও নিজে থেকেই 
দেখবে মরবে না । 
তবে জ্যান্তও থাকবে না 
কেবল রয়ে যাবে  
সংগ্রামী রাতের কয়েকটা চুমু 
.... আর ....  
আর যার জন্য তুমি মরতে চাও 
সেই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে 
হতে পারে কবিতা অথবা 
আমার মতো এঁটো চায়ের গ্লাস ।



০৪ অক্টোবর ২০১৪

২য় বছর ১০ম সংখ্যা




মনসুর আজিজ


রঙিন প্রজাপতিগুলো


রঙিন প্রজাপতিগুলো উড়ছে ডানা মেলে
লাল নীল ফ্রক পরে
প্রজাপতির আঙুল ছুঁয়ে যায় সবুজ ঘাসের ডগা
ঘাসপরী জেগে ওঠে ঘুম থেকে
বর্ণিল প্রজাপতিনৃত্য শুরু হয় ভোরের রক্তিম আভায়
সোনালু হলুদের মতো, কৃষ্ণচূড়ার লালের মতো ফিতা পরে
মাঠ জুড়ে নাচতে থাকে কিশোরী প্রজাপতিগুলো
মধ্যদুপুরে, বিকেলের লালিমায় প্রজাপতি গান গায়
সুর তোলে প্রকৃতির ডাকে
কবিতার কোরাস কাঁপনে ছন্দে হাসে গাছের পাতারা
প্রজাপতির মেলা বসে গ্রামে-শহরে-শহরতলীতে
ইস্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে বহুবর্ণিল প্রজাপতি

ডাইনিরা জেগে ওঠে ঝোপের আঁড়াল থেকে
প্রজাপতি ধরার উন্মত্ত খেলায় মেতে ওঠে তারা
শকুনের দৃষ্টি খোঁজে কিশোরী প্রজাপতি
ধারালো নখর, বিষাক্ত ঠোঁট দেখে প্রজাপতির কচি মনে জেগে ওঠে ভয়
একসাথে হামলে পড়ে শকুনের ঝাঁক
ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে নরম প্রজাপতিগুলো
অশ্রুতে ভিজে যায় ঘাসের ডগা
প্রজাপতি বন্দি হয় অহরহ
প্রতিদিন কিশোরী প্রজাপতি চলে যায়
সংসদে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ... রাজনীতিকের গোপন কামরায়
দাঁতাল কামড় বসে প্রজাপতির তুলতুলে শরীরে
ভয়াল রাতের শেষে-
প্রজাপতির ছিন্নভিন্ন রঙিন ডানাগুলো
পুরাতন ফ্রকের মতো পড়ে থাকে ডাস্টবিনে





সুপ্রিয় মিত্র


আড়ালে আড়ালে 


দুপুর গুলো সারাটা দিনের দুরন্ত সন্তান পুরোদস্তুর যেন লায়েক সকালের স্মৃতি ,বিকেলের প্রতি অন্ধ পিরিত - কাউকে ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়না

আমি এসব বুঝতে শিখেছি তাই হৃদয় কে ক্লান্তির রুমালে ভাঁজ করে , সে সময় কলেজ যাই - ক্লাস করি - কবিতা লিখিনা কখনো

তাতে আরো 'টে গিয়ে অসম্পূর্ণ দহণে দুপুর , হলুদ হয়ে ওঠে তারপর , বিকেল গড়ালে নিজেরই অহং জ্বলেপুড়ে কমলা - লাল গোধূলি হয়ে যায়

ঘরে ফিরি দরজা খুলি বিবশ গতায়াতের দেখি ,-
কখন সে জানলা দিয়ে ঢুকে আমার জন্যে করে রেখেচে এককাপ লাল চা ...
বিদায় নেবার অপেক্ষায় নাজুক ঝরে পড়ছে
বারান্দায় রেলিং  সীমান্তে