১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
গার্গী মুখার্জী
ভাষার টানে
ক্যালকাটা হল কলকাতা
আজ মাতৃভাষার টানে,
মায়ের ভাষা বড়ই খাসা
সবাই সেটা জানে ।
দুঃখ সুখে পরম সহায়
ভাষায় মন ভরে,
অন্য ভাষায় বলতে কথা
প্রাণটা হু হু করে ।
রফিক জব্বার আর বরকত
স্বাধীন ছিল তারা,
মাতৃভাষায় বলতে কথা
বাধ সাধল কারা ?
রক্তে ভেজা রাস্তাঘাট
ঢাকা শহরময়,
প্রাণ দিল ভাষাপ্রেমিক
যুব শক্তির জয় ।
দিনটি ছিল বাহান্ন সাল
ফেব্রুয়ারি মাস,
একুশ তারিখ দেখল সবাই
ভয়াবহ সেই ত্রাস ।
সেদিন থেকেই ভাষাদিবস
শ্রদ্ধায় পালনীয়,
রফিক বরকত আর জব্বার
সবার স্মরণীয় ।
ক্যালকাটা হল কলকাতা
আজ মাতৃভাষার টানে,
মায়ের ভাষা বড়ই খাসা
সবাই সেটা জানে ।
দুঃখ সুখে পরম সহায়
ভাষায় মন ভরে,
অন্য ভাষায় বলতে কথা
প্রাণটা হু হু করে ।
রফিক জব্বার আর বরকত
স্বাধীন ছিল তারা,
মাতৃভাষায় বলতে কথা
বাধ সাধল কারা ?
রক্তে ভেজা রাস্তাঘাট
ঢাকা শহরময়,
প্রাণ দিল ভাষাপ্রেমিক
যুব শক্তির জয় ।
দিনটি ছিল বাহান্ন সাল
ফেব্রুয়ারি মাস,
একুশ তারিখ দেখল সবাই
ভয়াবহ সেই ত্রাস ।
সেদিন থেকেই ভাষাদিবস
শ্রদ্ধায় পালনীয়,
রফিক বরকত আর জব্বার
সবার স্মরণীয় ।
জোকস
সংগ্রহীত
এক জায়গায় জোরদার বক্সিং ম্যাচ চলছে... . পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে চিৎকার চেঁচামেচি... . দর্শকরাও দু'ভাগে ভাগ হয়ে যার যার ফেভারিট বক্সারকে সমর্থন করছে... .
এরই মাঝে একজন শুধু রিং-এর বাইরে ছুটে ছুটে দুই বক্সারকেই উৎসাহ দিচ্ছে... . একবার এক বক্সারের পেছনে গিয়ে চিৎকার করছে, " মার্ শালাকে, আরো জোরে মার্, মেরে বদন বিগড়ে দে , দাঁত খুলে নে..." .
আবার পরক্ষনেই ছুটে ছুটে রিং-এর উল্টো দিকে অন্য বক্সারের পেছনে গিয়ে চেঁচাচ্ছে , '' মার্, পিটিয়ে লাট করে দে, দাঁতগুলো ভেঙ্গে দে, দাঁত ভাঙ্গা চাই কিন্তু..." .
যাই হোক, লড়াই তো শেষ হলো... .
সকলে জিজ্ঞেস করতে লাগল লোকটাকে, '" উফ ! মশাই, আপনি তো লড়াই একেবারে জমিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু আপনি আসলে কোন বক্সারের সাপোর্টার ছিলেন ? "
ভদ্রলোকের উত্তর , " আমি তো কারো সাপোর্টার নই ! কাউকেই সাপোর্ট করিনি !" .
বাকিরা : " তাহলে অমন করে চেঁচাচ্ছিলেন কেন ?" .
তিনি : '' আসলে আমি তো দাঁতের ডাক্তার.......স্টেডিয়ামের উল্টো দিকেই আমার চেম্বার I ''
এক জায়গায় জোরদার বক্সিং ম্যাচ চলছে... . পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে চিৎকার চেঁচামেচি... . দর্শকরাও দু'ভাগে ভাগ হয়ে যার যার ফেভারিট বক্সারকে সমর্থন করছে... .
এরই মাঝে একজন শুধু রিং-এর বাইরে ছুটে ছুটে দুই বক্সারকেই উৎসাহ দিচ্ছে... . একবার এক বক্সারের পেছনে গিয়ে চিৎকার করছে, " মার্ শালাকে, আরো জোরে মার্, মেরে বদন বিগড়ে দে , দাঁত খুলে নে..." .
আবার পরক্ষনেই ছুটে ছুটে রিং-এর উল্টো দিকে অন্য বক্সারের পেছনে গিয়ে চেঁচাচ্ছে , '' মার্, পিটিয়ে লাট করে দে, দাঁতগুলো ভেঙ্গে দে, দাঁত ভাঙ্গা চাই কিন্তু..." .
যাই হোক, লড়াই তো শেষ হলো... .
সকলে জিজ্ঞেস করতে লাগল লোকটাকে, '" উফ ! মশাই, আপনি তো লড়াই একেবারে জমিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু আপনি আসলে কোন বক্সারের সাপোর্টার ছিলেন ? "
ভদ্রলোকের উত্তর , " আমি তো কারো সাপোর্টার নই ! কাউকেই সাপোর্ট করিনি !" .
বাকিরা : " তাহলে অমন করে চেঁচাচ্ছিলেন কেন ?" .
তিনি : '' আসলে আমি তো দাঁতের ডাক্তার.......স্টেডিয়ামের উল্টো দিকেই আমার চেম্বার I ''
কৌশিক গাঙ্গুলি
২১ শে ফেব্রুয়ারী
একুশে মানে পদ্মা গঙ্গার পবিত্র অবগাহন
একুশ মানে বাংলা ভাষার বিজয় উদযাপন ।
একুশ মানে বাংলাদেশের উজ্জ্বল শাহবাগ,
একুশ মানে ভুলে যাওয়া দুই বাংলার ভাগ ।
মলিন কুয়াশা মাখা আজ আমার এই জন্মভূমি
মাযে আমার দুখিনী বর্ণমালা চরণ তোমার চুমি ।
আমার জীবনে শঙ্খধ্বনি , তোমার ভোরের আজান
তোমার প্রিয় রবিঠাকুর , আমার বাউলগান ।
লাঠি চলেছে , চলেছে অনেক গুলি -
তবেই পেয়েছি মুখের ভাষা , কিকরে তা ভুলি ।
শহিদ হয়েছিল আমার ভাই , তোমার দাদামনি
পলাশ ফুলেতে ঢেকেছিলো পথ , হৃদয় সন্ধানী ।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারী
আমরা কি ভুলতে পারি ?
আমারা মাতৃভাষার জয়ধ্বনি করি ।
একুশে মানে পদ্মা গঙ্গার পবিত্র অবগাহন
একুশ মানে বাংলা ভাষার বিজয় উদযাপন ।
একুশ মানে বাংলাদেশের উজ্জ্বল শাহবাগ,
একুশ মানে ভুলে যাওয়া দুই বাংলার ভাগ ।
মলিন কুয়াশা মাখা আজ আমার এই জন্মভূমি
মাযে আমার দুখিনী বর্ণমালা চরণ তোমার চুমি ।
আমার জীবনে শঙ্খধ্বনি , তোমার ভোরের আজান
তোমার প্রিয় রবিঠাকুর , আমার বাউলগান ।
লাঠি চলেছে , চলেছে অনেক গুলি -
তবেই পেয়েছি মুখের ভাষা , কিকরে তা ভুলি ।
শহিদ হয়েছিল আমার ভাই , তোমার দাদামনি
পলাশ ফুলেতে ঢেকেছিলো পথ , হৃদয় সন্ধানী ।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারী
আমরা কি ভুলতে পারি ?
আমারা মাতৃভাষার জয়ধ্বনি করি ।
দীননাথ মণ্ডল
ফুটপাতে ওরা
কেউ বলে ওরা বিদেশী কেউ বলে আদিবাসী
তাই ওরা ফুটপাতে
দয়া হলে দু'চারানা দেয় কেউ বা কখনও হাতে ।
মাথার উপর নীল চাঁদোয়া মুড়া বিশাল ছাদ
দিনে সূর্য রাতে আলো দেয় চাঁদ ।
উচ্ছিষ্টের আঙিনায় জীবন খুঁজে দিনরাত
কুকুরের সাথে মিলেমিশে চাটে সভ্যতার পাত ।
জীবন দুয়ারে দাঁড়িয়ে কেউ বলতে পারে না ওরা কী জাত
নাকে রুমাল চেপে রাস্তা পেরোয় সভ্যতায় বাজীমাত ।
নগ্ন দেহে কয়লা পুড়া
মানবের পান্ডুলিপি ওরা ।
কেউ বলে ওরা বিদেশী কেউ বলে আদিবাসী
তাই ওরা ফুটপাতে
দয়া হলে দু'চারানা দেয় কেউ বা কখনও হাতে ।
মাথার উপর নীল চাঁদোয়া মুড়া বিশাল ছাদ
দিনে সূর্য রাতে আলো দেয় চাঁদ ।
উচ্ছিষ্টের আঙিনায় জীবন খুঁজে দিনরাত
কুকুরের সাথে মিলেমিশে চাটে সভ্যতার পাত ।
জীবন দুয়ারে দাঁড়িয়ে কেউ বলতে পারে না ওরা কী জাত
নাকে রুমাল চেপে রাস্তা পেরোয় সভ্যতায় বাজীমাত ।
নগ্ন দেহে কয়লা পুড়া
মানবের পান্ডুলিপি ওরা ।
সৌরভ হোসেন
রাজপথের চুম্বন
জীবনের খেজাল ফেলে যাচ্ছে যে সমস্ত নিশ্বাস
নিশ্বাসের পলস্তারা আর বিকিকিনির বাউলজল...
তাদের সবাই আজ আলপথ ছেড়ে রাজপথে
মিথ্যার বেলুনে বেলুনে ভরে গেছে আকাশ , আকাশের দিকশূন্যপুর
ল্যামপোস্টের আলো কবেই বা আকাশ ছুঁতে পেরেছে ?
অন্ধকারের বাজারে আর যাইই বিক্রি হোক....
প্রেম বিক্রি হতে পারে না
আমি এখন রাজপথে
তুমিও চৌকাঠ পেরিয়ে রাজপথে এসো
পৃথিবীতে প্রথম বোমাটা বিস্ফোরণের আগেই ...
আমাদের প্রথম চুম্বনটা রাজপথের সকালকে উপহার দিতে হবে
রাজপথে যে আজ চুম্বনের বড়ো অভাব ।
জীবনের খেজাল ফেলে যাচ্ছে যে সমস্ত নিশ্বাস
নিশ্বাসের পলস্তারা আর বিকিকিনির বাউলজল...
তাদের সবাই আজ আলপথ ছেড়ে রাজপথে
মিথ্যার বেলুনে বেলুনে ভরে গেছে আকাশ , আকাশের দিকশূন্যপুর
ল্যামপোস্টের আলো কবেই বা আকাশ ছুঁতে পেরেছে ?
অন্ধকারের বাজারে আর যাইই বিক্রি হোক....
প্রেম বিক্রি হতে পারে না
আমি এখন রাজপথে
তুমিও চৌকাঠ পেরিয়ে রাজপথে এসো
পৃথিবীতে প্রথম বোমাটা বিস্ফোরণের আগেই ...
আমাদের প্রথম চুম্বনটা রাজপথের সকালকে উপহার দিতে হবে
রাজপথে যে আজ চুম্বনের বড়ো অভাব ।
কৃষ্ণা দাস
গন্তব্যে যেতে যেতে
কালের চাকায় ঘুরতে ঘুরতে থমকে দাঁড়াই,
পাশাপাশি অত্রি, ক্রতু থিসিউস ধুম্রাক্ষ বা প্রেট্রাক,
কেউ চন্দ্রবংশীয়, কেউ সূর্যবংশীয়, কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শুদ্র ।
শুধু আমার কোন জাত নেই , আমি নিরাকার জল ,
ওরা পাত্র ধরে, নিশ্চিন্ত সুস্বপ্নের আবিলতায়
তারই আকারে আমি বনভূমি, শস্যখেত, নদী , আকাশ অথবা মাটি,
ভোরের আলো এসে ধুইয়ে দেয় পৃথিবীর ক্লেদ,
বাতাস এসে মাটির প্রতি রন্ধ্র্রে রন্ধ্র্রে মেশায় অক্সিজেন,
আকাশ ধারণ করে উড়ন্ত পাখির আবেগ, আর নদী জীবনের গান গায় ।
এভাবেই প্রেমময়তা পবিত্র করে জীবন্ত করে আবেগী করে ,
রোদ্দুরে প্রেম পুড়িয়ে কখনো রোদচরা
শৈত্য থেকে ছুটে এসে ওম নেওয়া বিদগ্ধ শ্বাসে
বৃষ্টিতে প্রেম ভিজিয়ে ভেজা শ্রাবণ
সাহারার হাহাকারে বৃষ্টি হয়ে মন জুড়ে সবুজাভ খেত
এভাবেই ছায়াপথ পার হয়ে কৃষ্ণগহ্বরে গন্তব্যের দিকে …..।
কালের চাকায় ঘুরতে ঘুরতে থমকে দাঁড়াই,
পাশাপাশি অত্রি, ক্রতু থিসিউস ধুম্রাক্ষ বা প্রেট্রাক,
কেউ চন্দ্রবংশীয়, কেউ সূর্যবংশীয়, কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শুদ্র ।
শুধু আমার কোন জাত নেই , আমি নিরাকার জল ,
ওরা পাত্র ধরে, নিশ্চিন্ত সুস্বপ্নের আবিলতায়
তারই আকারে আমি বনভূমি, শস্যখেত, নদী , আকাশ অথবা মাটি,
ভোরের আলো এসে ধুইয়ে দেয় পৃথিবীর ক্লেদ,
বাতাস এসে মাটির প্রতি রন্ধ্র্রে রন্ধ্র্রে মেশায় অক্সিজেন,
আকাশ ধারণ করে উড়ন্ত পাখির আবেগ, আর নদী জীবনের গান গায় ।
এভাবেই প্রেমময়তা পবিত্র করে জীবন্ত করে আবেগী করে ,
রোদ্দুরে প্রেম পুড়িয়ে কখনো রোদচরা
শৈত্য থেকে ছুটে এসে ওম নেওয়া বিদগ্ধ শ্বাসে
বৃষ্টিতে প্রেম ভিজিয়ে ভেজা শ্রাবণ
সাহারার হাহাকারে বৃষ্টি হয়ে মন জুড়ে সবুজাভ খেত
এভাবেই ছায়াপথ পার হয়ে কৃষ্ণগহ্বরে গন্তব্যের দিকে …..।
কিছু কথা
সংগ্রাহক - সুমন হাসান
সাহিত্যিক নারায়ণ স্যান্যাল মহাশয়ের একটি স্মৃতিকথনের পাতা থেকে
“ এবার একেবারে হাল-আমলের কথা বলি। পঁচাত্তর সালে ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। বড় মেয়ের বিয়েতে আচার্য সুনীতিকুমার এসেছিলেন আমার বাড়ীতে পদধূলি দিতে। সেই গল্পই বলব এখন।
বর আসার কথা গোধূলি-লগ্নে, মানে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ। প্রথম ব্যাচ নিমন্ত্রিত খেতে বসবে আন্দাজ সাতটায়। সেই মর্মেই আমরা তৈরী হচ্ছি। আমি সম্প্রদান করব, উপোস করে আছি। এমনিতেই আমার লো-ব্লাডপ্রেশার। বয়স, আগেই বলেছি, পঞ্চাশোর্ধে। হঠাৎ কে যেন এসে বলল, নিচে একটা গাড়ি এসেছে। তাতে আচার্য সুনীতিকুমার এসেছেন। বেলা পাঁচটা তখন।
আমি থাকি তিনতলায়। তাড়াতাড়ি চটিটা পরে নিচে যাবার উপক্রম করি। আবার কে এসে খবর দিল নামতে হবে না – উনি নিজেই উপরে উঠে আসছেন। তাই এলেন উনি। হাতে মোটা লাঠি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কোন ল্যান্ডিং-এ না থেমে গট্গট্ করে একেবারে উঠে এলেন ত্রিতলে। আমাকে দেখতে পেয়েই বললেন, সন্ধ্যা সাতটায় একটা ‘বক্তিমে’ আছে ; অথচ একবার ‘ঢু’ মেরে না গেলেও চলে না। কই, মেয়ে কোথায় ?
ওঁর হাতে খানদুই বই, ফিতে দিয়ে বাঁধা। ওঁরই লেখা গ্রন্থ। আশীর্বাদ করবেন বই দিয়ে। আমি ওঁকে বসিয়ে ভেতরে খবর দিতে গেলাম। কিন্তু অন্দরমহলে এসে বুঝতে পারি কাজটা অত সহজ নয়। বুলবুলের বান্ধবীর দল – স্বাতী, শান্তা, রাখীরা বসেছে কনে সাজাতে। কনের ছোট ভাই রাণা নাকি তুলির কাজে সুনাম অর্জন করেছে – যাকে বলে ‘বর্ণিকাভঙ্গ’ আর কি। তুলি চন্দন নিয়ে সে অপেক্ষা করছে। খোঁপা বাঁধা শেষ হলে তার কাজ শুরু হবে। আমি ভয়ে ভয়ে বললুম, বুলবুল একবার বাইরের ঘরে আসতে হবে। প্রণাম করতে।
হাঁ হাঁ করে উঠল সবাই। এ কী অনাসৃষ্টি কথা ! আধ-সাজা কনে কখনও ঘর ছেড়ে বের হয় নাকি ? আমি আমতা আমতা করি, মানে আচার্য সুনীতিকুমার এসেছেন। বেশীক্ষণ বসবেন না ; তাহলে ওঁকেই এঘরে নিয়ে আসি ?
তাতেও আপত্তি ওদের ! সাজ শেষ না হলে সে কেমন করে বাইরের লোকের সামনে দাঁড়াবে ? বুলবুলের বান্ধবী বললে, তা হয় না। বৌদি নলল্রন, বাহাত্তর তো তোমার হইয়নি ঠাকুরপো, এর মধ্যেই ভীমরথী ধরেছে !
অগত্যা আবার ফিরে এলাম বাইরের ঘরে।
ভাগ্য ভাল। এসে দেখি আমার দাদা, ভায়রাভাই ইত্যাদি সবাই সুনীতিকুমারকে ঘিরে জমিয়ে বসেছেন। উনিও দিব্যি জাঁকিয়ে গল্প ফেঁদেছেন। দাদা ওঁকে বললেন, রান্না এখনো সব হয়নি, যা হয়েছে সামান্য কিছু নিয়ে আসি ?
-- আনুন ! অল্প অল্প করে চেখে দেখি !
দাদা আমাকে চোখের ইঙ্গিত করলেন।
ভোজের রান্নার হাঙ্গামা আমি নিজের স্কন্ধে রাখিনি। সাতাশ বছর ‘ব্যান্ডো সাহেবে’র কাছে ট্রেনিং পেয়েছি – বাজার করতে জানি না। তাই ও দায়িত্বটা দিয়েছিলাম একটি ক্যাটারিং এজেন্সিকে। দক্ষিণ কলকাতার সবচেয়ে নাম করা ক্যাটারার – বিজলী গ্রিলকে। তাঁরাই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করেছেন ছাদে। সেখানেই প্যান্ডেল। লোকজন খাবেও সেখানে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলাম। বিজলী গ্রিল-এর ম্যানেজার ভদ্রলোক অতি অমায়িক। দুপুর থেকেই রান্নার তদারকী করছেন। তাঁকে বলা ছিল প্রথম ব্যাচ খেতে বসবে সন্ধ্যা সাততায়। আমাকে উঠে আসতে দেখে ভদ্রলোক নিজেই এগিয়ে এলেন, বলুন স্যার ?
- দেখুন, আমার একজ্জন অতি বিশিষ্ট নিমন্ত্রিত ভদ্রলোক এসে পড়েছেন। আপনার কী কী রান্না হয়েছে বলুন তো ? একটা প্লেটে সাজিয়ে দিন আমি নিয়ে যাই।
উনি বললেন, পাঁপড় ভাজা ছাড়া সবই তৈরী হয়েছে। আপনি নিচে যান। আমি প্লেট সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
আমি বলি, না না, ঐসব ছ্যাঁচড়া-ট্যাঁচড়া ওসব কিছু নেবার দরকার নেই। মেন আইটেম কয়েকটি ---
-- তবে স্যার খানকয় রাধাবল্লভী, মাংস আর ফিশ্ ওলী নিয়ে যাই ?
-- ফিশ্-এর কী ?
-- আজ্ঞে ‘ফিশ্ ওলী’ !
সেটা কি বস্তু জানা ছিল না। মেনুটা ঠিক হয়েছে আমার অজান্তে। ‘ফিশ ওলী’ নিশচয় কোন আধুনিক সুখাদ্য হবে। অজ্ঞতা প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে আমি হেসে বলি, ও ফিশ, ওলী। তাই বলুন !
একটু পরে একটি থালায় আহার্য সাজিয়ে ভদ্রলোক নিচে নেমে এলেন। মেজদি নিরামিষ হেঁশেল থেকে পৃথক পাত্রে দই-মিষ্টি নিয়ে এলেন। সুনীতিকুমার বললেন, এত কে খাবে ?
তারপর যেমন হয়ে থাকে। এ পক্ষের পীড়াপীড়ি আর ও পক্ষের ব্যাঘ্র ঝম্পন !
বিজলী গ্রিল-এর স্যুট-পরা ম্যানেজার ভদ্রলোক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। কখন কি লাগবে, জলের গ্লাসটা খালি হল কিনা ! ঐ মওকায় আমি একবার অন্দরমহলটা পাক মেরে এলাম। কনের ‘কনে-চন্দন’ পরানো শুরু হয়েছে। আহারপর্ব মিটতে মিটতেই সজ্জাপর্ব সারা হয়ে যাবে আশা হচ্ছে। এদিকে বরের গাড়িও যে কোন মুহূর্তে এসে পড়তে পারে ; আবার ওদিকে যে কোন মুহূর্তে ঝেঁপে বৃষ্টিও নামতে পারে। আকাশ আছে মুখ কালো করে সেই ফেব্রুয়ারির পনেরো তারিখে।
হঠাৎ সুনীতিকুমার একটি ভোজ্যদ্রব্যের দিকে তর্জনী নির্দেশ করে বললেন, ওটা কি ?
দাদা, মেজদা দুজনেই মুখে চাওয়া-চাওয়ি করেন। আমি সদ্যলব্ধ জ্ঞানটা বিতরণের এমন সুযোগ হেলায় হারাতে রাজি নই। বললুম, ওটা ইয়ে স্যার, ফিশ্ ওলী !
-- ফিশ্-এর কী ?
-- আজ্ঞে ফিশ্ ওলী ! ... মানে ও’লী ! ফিশ্-এর ওলী আর কি !
সুনীতিকুমারের চর্বনকার্য বন্ধ হল। সোজা হয়ে বসলেন তিনি। বললেন, ‘ফিশ্-এর ওলী’ মানে কী ? কোন দেশী খাবার ?
আমার বিদ্যে ফুরিয়েছে। বিজলী গ্রিলের ম্যানেজারের দিকে করুণনেত্রে আমাকে তাকাতে হল। সে ভদ্রলোক বললেন, ভেটকি মাছের ফিশ্ ওলী স্যার ! ইয়ে... মানে, ফিশ্ ও’লি !
-- বানান কী ?
ম্যানেজার ভদ্রলোক গলার টাইটা একটু আলগা করে দিয়ে বললেন, ‘ও’ আর ‘লয়ে দীর্ঘঈ’।
সুনীতিকুমার গম্ভীর হয়ে বললেন, সেটা তো সাঁত্রাগাছীর ওল ‘স্ত্রীয়াম্ ঈপ্’। আমি রোমান হরফে বানানটা জানতে চাইছি।
ম্যানেজার এবার নিজেই অফফতা স্বীকার করে বললেন, ঠিক জানি না। বোধহয়, OLEE. । শুনেছি জার্মান,......নয় ; ফ্রেঞ্চ্ ডিশ্।
সুনীতিকুমার হাত গুটিয়েছেন। বলেন, উহুঁ। জার্মান ভাষায় ভাজাকে বলে gebacken অথবা gebraten ; ফরাসি ভাষায় ভাজা মাছ হচ্ছে frit poisons । ‘ওলী’ তো জার্মান-ফরাসী খাদ্য তালিকায় নেই। ‘ওলী’ শব্দটা কোথা থেকে এল ?
মাথায় উঠল খাওয়া। উনি আরও ভেবে বললেন, স্প্যানিশ ভাষায় যতদূর মনে পড়ছে মাছ ভাজা হচ্ছে frito pescado – ইতালিয়ান ভাষায় Fritte pesce । OLEE কোথা থেকে এল ?
আমার মেজদা নিরুপায় হয়ে বললেন, আজ্ঞে আপাতত এল রান্নাঘর থেকে। স্রেফ ‘মাছ ভাজা’ বলেই ধরেই নিন না। ব্যুৎপত্তিগত না হক, উৎপত্তিগত হদিসটা তো পেলেন।
সুনীতিকুমার ওঁর সরল রসিকতায় খুশি হলেন। জবাবে বললেন, তাই বলুন ! মাছ ভাজা ! ওলী নয় ! তাহলে ও-পিঠটা খাওয়া যেতে পারে। ওলীর এ-পিঠ ও-পীঠ কিছুই চিনি না, কিন্তু ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানি !
একটু পরেই বুলবুলি এসে প্রণাম করল ওঁকে। আশীর্বাদ করলেন উনি। মনে মনে। জোরে জোরে বললেও বুঝতুম না অবশ্য। হিব্রু-গ্রিক-লাতিন কী ভাষায় বলতেন কে জানে ?
উনি রওনা হবার পর ‘বিজলী ফ্রিল’-এর ম্যানেজার ভদ্রলোক এসে আমাকে প্রশ্ন করেন, উনি কে স্যার ?
বললুম, আমাদের জাতীয় অধ্যাপক আচার্য সুনীতিকুমার। ভাষাবিদ ! ম্যানেজার বললেন, আর ক’জন এমন ভাষাবিদ আপনার নিমন্ত্রিত আছেন স্যার ?
বললুম, না, আর কেউ নেই। আপনি এরপর নির্ভয়ে ‘ফিশ্ ওলী’ চালাতে পারেন।
ভদ্রলোক রসিক। বললেন, আজ্ঞে না, আর ভয়ের কি আছে ! এখন তো আমার জানাই হয়ে গেছে – উৎপত্তিগত হদিস ; রান্নাঘর ! আর ব্যুৎপত্তিগত ; সাঁত্রাগাছীর ওল ‘স্ত্রীয়াম্ ঈপ্ ! ’
সাহিত্যিক নারায়ণ স্যান্যাল মহাশয়ের একটি স্মৃতিকথনের পাতা থেকে
“ এবার একেবারে হাল-আমলের কথা বলি। পঁচাত্তর সালে ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। বড় মেয়ের বিয়েতে আচার্য সুনীতিকুমার এসেছিলেন আমার বাড়ীতে পদধূলি দিতে। সেই গল্পই বলব এখন।
বর আসার কথা গোধূলি-লগ্নে, মানে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ। প্রথম ব্যাচ নিমন্ত্রিত খেতে বসবে আন্দাজ সাতটায়। সেই মর্মেই আমরা তৈরী হচ্ছি। আমি সম্প্রদান করব, উপোস করে আছি। এমনিতেই আমার লো-ব্লাডপ্রেশার। বয়স, আগেই বলেছি, পঞ্চাশোর্ধে। হঠাৎ কে যেন এসে বলল, নিচে একটা গাড়ি এসেছে। তাতে আচার্য সুনীতিকুমার এসেছেন। বেলা পাঁচটা তখন।
আমি থাকি তিনতলায়। তাড়াতাড়ি চটিটা পরে নিচে যাবার উপক্রম করি। আবার কে এসে খবর দিল নামতে হবে না – উনি নিজেই উপরে উঠে আসছেন। তাই এলেন উনি। হাতে মোটা লাঠি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কোন ল্যান্ডিং-এ না থেমে গট্গট্ করে একেবারে উঠে এলেন ত্রিতলে। আমাকে দেখতে পেয়েই বললেন, সন্ধ্যা সাতটায় একটা ‘বক্তিমে’ আছে ; অথচ একবার ‘ঢু’ মেরে না গেলেও চলে না। কই, মেয়ে কোথায় ?
ওঁর হাতে খানদুই বই, ফিতে দিয়ে বাঁধা। ওঁরই লেখা গ্রন্থ। আশীর্বাদ করবেন বই দিয়ে। আমি ওঁকে বসিয়ে ভেতরে খবর দিতে গেলাম। কিন্তু অন্দরমহলে এসে বুঝতে পারি কাজটা অত সহজ নয়। বুলবুলের বান্ধবীর দল – স্বাতী, শান্তা, রাখীরা বসেছে কনে সাজাতে। কনের ছোট ভাই রাণা নাকি তুলির কাজে সুনাম অর্জন করেছে – যাকে বলে ‘বর্ণিকাভঙ্গ’ আর কি। তুলি চন্দন নিয়ে সে অপেক্ষা করছে। খোঁপা বাঁধা শেষ হলে তার কাজ শুরু হবে। আমি ভয়ে ভয়ে বললুম, বুলবুল একবার বাইরের ঘরে আসতে হবে। প্রণাম করতে।
হাঁ হাঁ করে উঠল সবাই। এ কী অনাসৃষ্টি কথা ! আধ-সাজা কনে কখনও ঘর ছেড়ে বের হয় নাকি ? আমি আমতা আমতা করি, মানে আচার্য সুনীতিকুমার এসেছেন। বেশীক্ষণ বসবেন না ; তাহলে ওঁকেই এঘরে নিয়ে আসি ?
তাতেও আপত্তি ওদের ! সাজ শেষ না হলে সে কেমন করে বাইরের লোকের সামনে দাঁড়াবে ? বুলবুলের বান্ধবী বললে, তা হয় না। বৌদি নলল্রন, বাহাত্তর তো তোমার হইয়নি ঠাকুরপো, এর মধ্যেই ভীমরথী ধরেছে !
অগত্যা আবার ফিরে এলাম বাইরের ঘরে।
ভাগ্য ভাল। এসে দেখি আমার দাদা, ভায়রাভাই ইত্যাদি সবাই সুনীতিকুমারকে ঘিরে জমিয়ে বসেছেন। উনিও দিব্যি জাঁকিয়ে গল্প ফেঁদেছেন। দাদা ওঁকে বললেন, রান্না এখনো সব হয়নি, যা হয়েছে সামান্য কিছু নিয়ে আসি ?
-- আনুন ! অল্প অল্প করে চেখে দেখি !
দাদা আমাকে চোখের ইঙ্গিত করলেন।
ভোজের রান্নার হাঙ্গামা আমি নিজের স্কন্ধে রাখিনি। সাতাশ বছর ‘ব্যান্ডো সাহেবে’র কাছে ট্রেনিং পেয়েছি – বাজার করতে জানি না। তাই ও দায়িত্বটা দিয়েছিলাম একটি ক্যাটারিং এজেন্সিকে। দক্ষিণ কলকাতার সবচেয়ে নাম করা ক্যাটারার – বিজলী গ্রিলকে। তাঁরাই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করেছেন ছাদে। সেখানেই প্যান্ডেল। লোকজন খাবেও সেখানে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলাম। বিজলী গ্রিল-এর ম্যানেজার ভদ্রলোক অতি অমায়িক। দুপুর থেকেই রান্নার তদারকী করছেন। তাঁকে বলা ছিল প্রথম ব্যাচ খেতে বসবে সন্ধ্যা সাততায়। আমাকে উঠে আসতে দেখে ভদ্রলোক নিজেই এগিয়ে এলেন, বলুন স্যার ?
- দেখুন, আমার একজ্জন অতি বিশিষ্ট নিমন্ত্রিত ভদ্রলোক এসে পড়েছেন। আপনার কী কী রান্না হয়েছে বলুন তো ? একটা প্লেটে সাজিয়ে দিন আমি নিয়ে যাই।
উনি বললেন, পাঁপড় ভাজা ছাড়া সবই তৈরী হয়েছে। আপনি নিচে যান। আমি প্লেট সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
আমি বলি, না না, ঐসব ছ্যাঁচড়া-ট্যাঁচড়া ওসব কিছু নেবার দরকার নেই। মেন আইটেম কয়েকটি ---
-- তবে স্যার খানকয় রাধাবল্লভী, মাংস আর ফিশ্ ওলী নিয়ে যাই ?
-- ফিশ্-এর কী ?
-- আজ্ঞে ‘ফিশ্ ওলী’ !
সেটা কি বস্তু জানা ছিল না। মেনুটা ঠিক হয়েছে আমার অজান্তে। ‘ফিশ ওলী’ নিশচয় কোন আধুনিক সুখাদ্য হবে। অজ্ঞতা প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে আমি হেসে বলি, ও ফিশ, ওলী। তাই বলুন !
একটু পরে একটি থালায় আহার্য সাজিয়ে ভদ্রলোক নিচে নেমে এলেন। মেজদি নিরামিষ হেঁশেল থেকে পৃথক পাত্রে দই-মিষ্টি নিয়ে এলেন। সুনীতিকুমার বললেন, এত কে খাবে ?
তারপর যেমন হয়ে থাকে। এ পক্ষের পীড়াপীড়ি আর ও পক্ষের ব্যাঘ্র ঝম্পন !
বিজলী গ্রিল-এর স্যুট-পরা ম্যানেজার ভদ্রলোক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। কখন কি লাগবে, জলের গ্লাসটা খালি হল কিনা ! ঐ মওকায় আমি একবার অন্দরমহলটা পাক মেরে এলাম। কনের ‘কনে-চন্দন’ পরানো শুরু হয়েছে। আহারপর্ব মিটতে মিটতেই সজ্জাপর্ব সারা হয়ে যাবে আশা হচ্ছে। এদিকে বরের গাড়িও যে কোন মুহূর্তে এসে পড়তে পারে ; আবার ওদিকে যে কোন মুহূর্তে ঝেঁপে বৃষ্টিও নামতে পারে। আকাশ আছে মুখ কালো করে সেই ফেব্রুয়ারির পনেরো তারিখে।
হঠাৎ সুনীতিকুমার একটি ভোজ্যদ্রব্যের দিকে তর্জনী নির্দেশ করে বললেন, ওটা কি ?
দাদা, মেজদা দুজনেই মুখে চাওয়া-চাওয়ি করেন। আমি সদ্যলব্ধ জ্ঞানটা বিতরণের এমন সুযোগ হেলায় হারাতে রাজি নই। বললুম, ওটা ইয়ে স্যার, ফিশ্ ওলী !
-- ফিশ্-এর কী ?
-- আজ্ঞে ফিশ্ ওলী ! ... মানে ও’লী ! ফিশ্-এর ওলী আর কি !
সুনীতিকুমারের চর্বনকার্য বন্ধ হল। সোজা হয়ে বসলেন তিনি। বললেন, ‘ফিশ্-এর ওলী’ মানে কী ? কোন দেশী খাবার ?
আমার বিদ্যে ফুরিয়েছে। বিজলী গ্রিলের ম্যানেজারের দিকে করুণনেত্রে আমাকে তাকাতে হল। সে ভদ্রলোক বললেন, ভেটকি মাছের ফিশ্ ওলী স্যার ! ইয়ে... মানে, ফিশ্ ও’লি !
-- বানান কী ?
ম্যানেজার ভদ্রলোক গলার টাইটা একটু আলগা করে দিয়ে বললেন, ‘ও’ আর ‘লয়ে দীর্ঘঈ’।
সুনীতিকুমার গম্ভীর হয়ে বললেন, সেটা তো সাঁত্রাগাছীর ওল ‘স্ত্রীয়াম্ ঈপ্’। আমি রোমান হরফে বানানটা জানতে চাইছি।
ম্যানেজার এবার নিজেই অফফতা স্বীকার করে বললেন, ঠিক জানি না। বোধহয়, OLEE. । শুনেছি জার্মান,......নয় ; ফ্রেঞ্চ্ ডিশ্।
সুনীতিকুমার হাত গুটিয়েছেন। বলেন, উহুঁ। জার্মান ভাষায় ভাজাকে বলে gebacken অথবা gebraten ; ফরাসি ভাষায় ভাজা মাছ হচ্ছে frit poisons । ‘ওলী’ তো জার্মান-ফরাসী খাদ্য তালিকায় নেই। ‘ওলী’ শব্দটা কোথা থেকে এল ?
মাথায় উঠল খাওয়া। উনি আরও ভেবে বললেন, স্প্যানিশ ভাষায় যতদূর মনে পড়ছে মাছ ভাজা হচ্ছে frito pescado – ইতালিয়ান ভাষায় Fritte pesce । OLEE কোথা থেকে এল ?
আমার মেজদা নিরুপায় হয়ে বললেন, আজ্ঞে আপাতত এল রান্নাঘর থেকে। স্রেফ ‘মাছ ভাজা’ বলেই ধরেই নিন না। ব্যুৎপত্তিগত না হক, উৎপত্তিগত হদিসটা তো পেলেন।
সুনীতিকুমার ওঁর সরল রসিকতায় খুশি হলেন। জবাবে বললেন, তাই বলুন ! মাছ ভাজা ! ওলী নয় ! তাহলে ও-পিঠটা খাওয়া যেতে পারে। ওলীর এ-পিঠ ও-পীঠ কিছুই চিনি না, কিন্তু ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানি !
একটু পরেই বুলবুলি এসে প্রণাম করল ওঁকে। আশীর্বাদ করলেন উনি। মনে মনে। জোরে জোরে বললেও বুঝতুম না অবশ্য। হিব্রু-গ্রিক-লাতিন কী ভাষায় বলতেন কে জানে ?
উনি রওনা হবার পর ‘বিজলী ফ্রিল’-এর ম্যানেজার ভদ্রলোক এসে আমাকে প্রশ্ন করেন, উনি কে স্যার ?
বললুম, আমাদের জাতীয় অধ্যাপক আচার্য সুনীতিকুমার। ভাষাবিদ ! ম্যানেজার বললেন, আর ক’জন এমন ভাষাবিদ আপনার নিমন্ত্রিত আছেন স্যার ?
বললুম, না, আর কেউ নেই। আপনি এরপর নির্ভয়ে ‘ফিশ্ ওলী’ চালাতে পারেন।
ভদ্রলোক রসিক। বললেন, আজ্ঞে না, আর ভয়ের কি আছে ! এখন তো আমার জানাই হয়ে গেছে – উৎপত্তিগত হদিস ; রান্নাঘর ! আর ব্যুৎপত্তিগত ; সাঁত্রাগাছীর ওল ‘স্ত্রীয়াম্ ঈপ্ ! ’
জৈদুল সেখ
রক্তাক্ত শব্দ
চারদিকে কী ভয়ংকর অন্ধকার!
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চার কান্নাও শোনা যায়না!
মা স্নিগ্ধ বুকে পরম আদরে জড়িয়ে ধরেছে
অজানা আতঙ্কে...
সাতচল্লিশের নিরাশ্রয় ; একাত্তরের অনাহার
কী ভাবে ঘুমায়!
মরতে মরতে যেন অন্তিম নিঃশ্বাস চিৎকার করে উঠে!
শব্দ নেই, কেবল ফাঁপরে উঠে ...
কে, কারা? তাকে হরণ করে নিয়ে যায় কালো আকাশের কোণে!
এ সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ কী এই ভাবে বেঁচে থাকে!
খুঁজে পাচ্ছিনা স্বপ্ন, তার মানে ...
সন্তান হারা মা দিনের পর দিন চোখের জলে চেয়ে থাকে ...
সে ফিরবে, সে ফিরবে ...
আদর করে বকুনি দিয়ে আঁচলে মুছিয়ে দেবে কান্না ...
সে আর ফিরে আসেনা ...
কিন্তু অজানা পথে এক শব্দ এলো - মৃত্যু ...!
কানে বাজতেই ঘোর অন্ধকার আবার মৃত্যু ....
চারদিকে কী ভয়ংকর অন্ধকার!
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চার কান্নাও শোনা যায়না!
মা স্নিগ্ধ বুকে পরম আদরে জড়িয়ে ধরেছে
অজানা আতঙ্কে...
সাতচল্লিশের নিরাশ্রয় ; একাত্তরের অনাহার
কী ভাবে ঘুমায়!
মরতে মরতে যেন অন্তিম নিঃশ্বাস চিৎকার করে উঠে!
শব্দ নেই, কেবল ফাঁপরে উঠে ...
কে, কারা? তাকে হরণ করে নিয়ে যায় কালো আকাশের কোণে!
এ সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ কী এই ভাবে বেঁচে থাকে!
খুঁজে পাচ্ছিনা স্বপ্ন, তার মানে ...
সন্তান হারা মা দিনের পর দিন চোখের জলে চেয়ে থাকে ...
সে ফিরবে, সে ফিরবে ...
আদর করে বকুনি দিয়ে আঁচলে মুছিয়ে দেবে কান্না ...
সে আর ফিরে আসেনা ...
কিন্তু অজানা পথে এক শব্দ এলো - মৃত্যু ...!
কানে বাজতেই ঘোর অন্ধকার আবার মৃত্যু ....
ইন্দ্রনীল
অবসর
কত গাছ পথের ধারে নিশ্চুপ
যারা অবসরে আজ,
মন্থনে যদি উঠে আসে
বেঁচে থাকার বীজমন্ত্র
তবে অবসরেও
মৌন মিছিল করা যেতে পারে ।
বেঁচে থাকার তাগিদ বেড়ে যায়
অবসরে,
ভোগ আর ভোগান্তির মাঝে
যেটুকু দীর্ঘশ্বাস....
সেটুকু বাদ দিলে শুধু নকল দাঁত
শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তখন
অবসরের হিমেল হাওয়া ।
গতিজাড্য থেকে স্থিতিজাড্য ,
চলমান পৃথিবীতে লেগে যাওয়া গ্রহণই
অবসরের সংজ্ঞা.... জানি ---
কত গাছ পথের ধারে নিশ্চুপ
যারা অবসরে আজ,
মন্থনে যদি উঠে আসে
বেঁচে থাকার বীজমন্ত্র
তবে অবসরেও
মৌন মিছিল করা যেতে পারে ।
বেঁচে থাকার তাগিদ বেড়ে যায়
অবসরে,
ভোগ আর ভোগান্তির মাঝে
যেটুকু দীর্ঘশ্বাস....
সেটুকু বাদ দিলে শুধু নকল দাঁত
শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তখন
অবসরের হিমেল হাওয়া ।
গতিজাড্য থেকে স্থিতিজাড্য ,
চলমান পৃথিবীতে লেগে যাওয়া গ্রহণই
অবসরের সংজ্ঞা.... জানি ---
সম্পদ ব্যানার্জী
খেরোর খাতা
ও গিন্নি এসো এসো
ডিম পেড়েছে তোমার মেসো
ডিম নয় তা পাটের ফেঁসো
নাচছে দেখো সকল খোসো
ভাগ হবে তা সমান ভাবে
কালো টাকা আসবে যবে
রাস্তার কুকুর বিস্কুট খাবে
পাটের ফেঁসো দেশেই রবে
সত্য ধ্রুব জেনে রাখো
কালো টাকা আসবে নাকো
সব ঊচ্ছেই সমান তেতো
গরিব চাষি সুখে থেকো
মন্ত্রীরা সব বেজায় খুশি
সান্ত্রীগুলোর পাশাপাশি
আরও আছেন ব্যবসাদার
শ্রেণীশত্রু ডাইনোসর
ঢেঁকিভাঙার দেশেতে
সিম পাচ্ছে ফিরিতে
সরকার চালান দেনার দোকান
বোধঽয় বিদেশ থেকেই ভর্তুকি পান
সুদীপার রান্নাঘর
দেখছে কত বাধ্যবর
কিন্তু পিকচার ডার্টি
ভীষণ খাঁটি অন্যরকম ঝড়
আক্রাবাজার ভারতজোড়া
খোঁজার পরেও সস্তা না তা
মৃণাল মানিক বুড়ো খানিক বিনোদোনে শ্রৗকান্ত মেহেতা
জনগন হারাধন
জানা সকল কমপোজিশন
অ্যামাজনে দাঁতের মাজন
ভীষণ ঠান্ডা সিয়াচেন
তবু হিঞ্চে পালং পুঁই
রাতে বৌ-এর পাশেই শুই
শুধু বিঘে দুই
সেটাও গোবর জলে ধুই
গন্ধের মামা নন্দসেন
সব ঠাকুরেই কাঠি দেন
পাপেপূণ্যে করে স্নান
সমানভাবেই আশীষ পান
খেরোর খাতা কথকতা
প্রাচীন কালের আদিখ্যেতা
আস্তে পড়িস আমার ছড়়া
আমার ছড়া অশ্লৗলতা
হরির লুটে পুরস্কার
ফেরত্ দিলেই তিরস্কার
তিনটে শালিক ঝগড়াকার
পা পরিস্কার নমস্কার....
ও গিন্নি এসো এসো
ডিম পেড়েছে তোমার মেসো
ডিম নয় তা পাটের ফেঁসো
নাচছে দেখো সকল খোসো
ভাগ হবে তা সমান ভাবে
কালো টাকা আসবে যবে
রাস্তার কুকুর বিস্কুট খাবে
পাটের ফেঁসো দেশেই রবে
সত্য ধ্রুব জেনে রাখো
কালো টাকা আসবে নাকো
সব ঊচ্ছেই সমান তেতো
গরিব চাষি সুখে থেকো
মন্ত্রীরা সব বেজায় খুশি
সান্ত্রীগুলোর পাশাপাশি
আরও আছেন ব্যবসাদার
শ্রেণীশত্রু ডাইনোসর
ঢেঁকিভাঙার দেশেতে
সিম পাচ্ছে ফিরিতে
সরকার চালান দেনার দোকান
বোধঽয় বিদেশ থেকেই ভর্তুকি পান
সুদীপার রান্নাঘর
দেখছে কত বাধ্যবর
কিন্তু পিকচার ডার্টি
ভীষণ খাঁটি অন্যরকম ঝড়
আক্রাবাজার ভারতজোড়া
খোঁজার পরেও সস্তা না তা
মৃণাল মানিক বুড়ো খানিক বিনোদোনে শ্রৗকান্ত মেহেতা
জনগন হারাধন
জানা সকল কমপোজিশন
অ্যামাজনে দাঁতের মাজন
ভীষণ ঠান্ডা সিয়াচেন
তবু হিঞ্চে পালং পুঁই
রাতে বৌ-এর পাশেই শুই
শুধু বিঘে দুই
সেটাও গোবর জলে ধুই
গন্ধের মামা নন্দসেন
সব ঠাকুরেই কাঠি দেন
পাপেপূণ্যে করে স্নান
সমানভাবেই আশীষ পান
খেরোর খাতা কথকতা
প্রাচীন কালের আদিখ্যেতা
আস্তে পড়িস আমার ছড়়া
আমার ছড়া অশ্লৗলতা
হরির লুটে পুরস্কার
ফেরত্ দিলেই তিরস্কার
তিনটে শালিক ঝগড়াকার
পা পরিস্কার নমস্কার....
মহম্মদ সামসুর রহমান
একুশ শতক কিংবা আধুনিক
সেই বনলতার সবুজ দ্বীপ দেখার চোখ আমার নেই;
আসতে দেরি হলে তুমি আর অপেক্ষা করোনা,
ভালোবাসার মেধাবী পাঠে এখন শুধু খামখেয়ালি ডেটিং
ফেসবুক,ওয়াটস্অ্যাপ,চাটিং
মুড ভালো নেই কবিতার,আঁতেল মার্কা পদ্যেরও
তোমার প্রেম বড্ড বেলাল্লাপনা;
আমি কনফিউজড;নিদারুণ প্রশ্রয় দিতে গিয়ে
আকাশ ভরা সূর্য তারার মাঝেও এমন সর্বনাশা আশকারা;
বেয়াড়া ঈশ্বরের বুক ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে রোমশ ভালোবাসা;
নিজেকে খুঁতহীন করতে গিয়ে যে নোংরা হাতে পূজা করি,
গুরুতরভাবে তাকে ধুয়ে দিই তরল গন্ধে;
‘নো স্মোকিং’ ফলকের সামনে উৎকট ভাবে নাড়ছি
নগ্ননির্জন_একাকী;
চুমু-বিষের তফাৎ খুঁজতে নির্মাণ থেকে বিনির্মাণে ।
সেই বনলতার সবুজ দ্বীপ দেখার চোখ আমার নেই;
আসতে দেরি হলে তুমি আর অপেক্ষা করোনা,
ভালোবাসার মেধাবী পাঠে এখন শুধু খামখেয়ালি ডেটিং
ফেসবুক,ওয়াটস্অ্যাপ,চাটিং
মুড ভালো নেই কবিতার,আঁতেল মার্কা পদ্যেরও
তোমার প্রেম বড্ড বেলাল্লাপনা;
আমি কনফিউজড;নিদারুণ প্রশ্রয় দিতে গিয়ে
আকাশ ভরা সূর্য তারার মাঝেও এমন সর্বনাশা আশকারা;
বেয়াড়া ঈশ্বরের বুক ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে রোমশ ভালোবাসা;
নিজেকে খুঁতহীন করতে গিয়ে যে নোংরা হাতে পূজা করি,
গুরুতরভাবে তাকে ধুয়ে দিই তরল গন্ধে;
‘নো স্মোকিং’ ফলকের সামনে উৎকট ভাবে নাড়ছি
নগ্ননির্জন_একাকী;
চুমু-বিষের তফাৎ খুঁজতে নির্মাণ থেকে বিনির্মাণে ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)