০৫ ডিসেম্বর ২০১৩

সমীরণ ঘোষ


জলে লেখা লিপি 


এক.
ওড়াতে সচেষ্ট হই পাতার বিমান । নীচে এত তারাঝরা
বোঝেনি মাধুরী তার দর্পণের মোহে ।  বেলা মুছে
ক্রমশ রাত্রিভেলা অববাহিকার দেশেমাধুরী শীতের শ্বাস
ধোঁয়াচ্ছন্ন, কিছুটা জটিল । স্মৃতির রেশম থেকে প্রান্তরের
তীব্র কুয়াশায় । তখন আশ্চর্য ভোর । ফিরে যাচ্ছে
প্রেত পরি কুহেলী সকল
মাধুরী শীতের লিপি, হাওয়ায় পাতায় আর
গানের নিজস্ব কিছু গুপ্ত কোটরে

দুই.
বুঝিনি যদিও । ঢেউ ফিরে ফিরে সীমানার আঁধারশিখর
মাঠের পশ্চিমে ওই ধুলোমেঘ গোধূলিপ্রান্তর । বোবামানুষের
ভাষা, বাতাসে লিখেছি । বাতাসের স্নানে এসে অবাক নিশীথ
মাধুরী উধাও । শুধু তার ভেলা, নিহত সন্ধ্যার হাতে দড়িদড়া
এত রক্ত ও আকন্দ ফুল ঘরের দুয়োরে । শ্বাসের ঘর্ষণে জাগা
স্মৃতিমোম । মাধুরী ফেরেনি । শুধু তার ঘোড়া, দানাপানি
ভিক্ষে নয়, আনতমস্তক, আর নেমে আসা হাওয়ার উচ্ছ্বাস
শুধু ঢেউ আর রাত্রি এসে, চিত্তাকার মেঘ, বলেছে মাধুরি কথা
আর যত অলীক পরিণাম ।

তিন.
নষ্ট কিন্তু প্রকৃতির নিজের সাজানো এই জল, তার ওপর
ঝরে পড়া রমণীর ললাটরঞ্জনী । সহসা দেখেছি কিছু গ্রন্থ
আর পর্যটনমুখী ভ্রমে । উত্তরে দিয়েছি শিস । চকিতে
উড়ন্ত পাখি । পাতার প্রলয় । অন্ধকার যেভাবে পারে
বুজে যায় যেখানে যেটুকু ফাঁক

যে তারাভূমি মাধুরী ফেরত শুয়ে আছে জলে, পাশে
সাপ ভেসে যায় । গাছে গাছে যা কিছু সোনালি, রহস্যের
রক্তিম পোঁচ ওনুবাদ করি, ক্রমে অনূদিত হই
মাধুরী প্রেরিত মেঘ হাওয়া তোলে । আমার ভেতর শুধু
ছাই ওড়া দেখে যায় আমার মুকুর

চার.
নিহত ছিলাম । কিন্তু হাওয়া যেই প্রবেশ করেছে
ঘটনার মেঘ দুইপ্রান্ত থেকে আমাকে ওড়ালো
পাখিও কী উড়ে থাকে মুখে এত কালো লতাপাতা । যেন
মাছি, রহস্যের সেতু ও জানালা সমেত অগাধ সমুদ্রে
আমিও বুঝিনি, আর পলি ও কাঁকর ফেলে গেছি 
মাধুরীর ভেতর-বাগানে । 
মাধুরী জাগেনি, শুধু চাঁদ-ঘোষা তারা, আর সেই ঘোড়া 
দাঁড়ালো ফটকে । মুখে অন্ধকার-লাগা মাধুরীর চিঠি
সমস্ত লিপিই জলে লেখা, নীচে জলের স্বাক্ষর
বলেছিলো যাও, কিন্তু তস্করের মতো ফিরো কোনওদিন
তার পিঠের চাদরে উঠে পুনরায় শুয়ে পড়ি নৃত্যময় পায়ের ছায়ায় 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন