০৬ এপ্রিল ২০১৪

গুচ্ছ কবিতা- ইন্দ্রাণী সরকার

 গুচ্ছ কবিতা- ইন্দ্রাণী সরকার

আমি সখা 

কোন এক সোনালী দুপুরে আমি শ্বেতপদ্ম 
তোমায় ডেকে নিয়েছিলাম পদ্মপাতা হয়ে 
আমায় ভাসিয়ে রাখতে, এই ডুবন্ত আমিকে |
তুমি হাজার পাতা হয়ে আমায় ভাসিয়ে দিলে 
কবিতার ঝিলে কি পরম আদরে ভালোবেসে |

কোনো এক মেঘলা সকালে আমি আহত পাখি 
তোমায় ডেকে নিয়েছিলাম আমায় উড়িয়ে দিতে |
তুমি গাছের ছায়া হয়ে আমায় ঢেকে দিয়েছিলে,
তুমি পাতা হয়ে ঔষধি নির্যাস সিঞ্চন করেছিলে 
আমার ক্ষতকে শুশ্রূযায় নিরাময় করে আবার 
নীল আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ফিরিয়ে দিতে |

তাই আমি পদ্ম হয়ে ভাসি তোমার কবিতার ঝিলে,
তাই আমি পাখি হয়ে উড়ি তোমার মনের আকাশে 
ওগো সখা, আমার চিরসখা ভালোবাসা কাকে বলে 
শুধু নীরবে মনের গহীনে আমায় রেখে শিখিয়েছ 
দিনদিন প্রতিদিন চিরদিন বিনা স্বার্থে ভালোবেসে |


তোমার চিঠি

সকালের মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়ায় তোমার চিঠি এসে 
আমার জানলার কাঁচে আটকে গেল
ঘুমে জড়ানো চোখে চেয়ে দেখি চিঠির গায়ে 
ছোট্ট দুটি ডানা হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে
আরও ভালো করে চেয়ে দেখি চিঠির গা থেকে 
ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে কাঁচে লেগে যাচ্ছে
আমি চিঠিকে হাত নেড়ে ডাকতেই জানলা ভেদ 
করে আমার ঠিক সামনে এসে বসল।
চিঠি হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম লেখা আছে,
বন্ধু, তোমার কষ্টে আমার চোখের জল এই 
চিঠিতে মুড়ে পরীদের ডানা গেঁথে দিলাম
তুমি যখন চিঠি পাবে তখন ভাববে তোমার 
কষ্টটা তোমার থেকেও আমার বুকে বেশি বেজেছে
তাই তুমি আর মনে কোনো দুঃখ রেখো না,
সব দুঃখ এই চিঠিতে মুড়ে আমার নাম করে পাঠিয়ে দাও,
তখন দেখবে তোমার চেয়ে সুখী আর কেউ নেই


চেরাপুঞ্জির মেঘ

ঘষা কাঁচের ফাঁক দিয়ে চেয়ে দেখি 
একটুকরো চেরাপুঞ্জির মেঘ,
বললো, সব জল আমার ফুরিয়ে গেছে,
একটু জল দাও না, বৃষ্টি দিতে চাই |

পথে পথে তৃষিত গুল্মলতা বৃক্ষরাজি 
মাঠে মাঠে শুকনো ঘাস, বনবিথী 
তাদের তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে আজ 
আমি রিক্ত, জলের অভাবে শুষ্ক |

সে বললো, দেখো ওই চোখের মাঝে 
ডুব দিয়ে, খুঁজে পাবে অনেক জল,

আঁজলা ভরে নাও....


শব্দ-জব্দ

শব্দের কারিগর কাজ খুঁজে পায় 
জনবহুল কোনো পল্লীতে কোন এক দিন |
পারিশ্রমিকে বোধ হয় পোষায় নি 
অথবা কোনো খুঁত ছিল কোথাও, 
অজানা সে সব তথ্যের হয় নি প্রকাশ্যে প্রকাশ |
তুখোড় কারিগর ফেরে দ্বারে দ্বারে 
আভিধানিক শব্দের মিছিল নিয়ে,
শব্দজব্দ অনেকেই মাথা ঠুকে যায় তার দরবারে |

হঠাৎই সে পেল এক নিষ্কলঙ্ক মন,
অগোছাল নিউরন আবেগে ভেসে গেল 
পদ্মা নদীর কোনায় কোনায়,
বাউল গানের পাল তোলা নৌকায় |
আবেগী নিউরন উল্লাসে মেতে ওঠে
মনটার কুত্সিত ছবি আঁকার খেয়ালে |
সুযোগসন্ধানী চোখ মনকে নিয়ে লিখে গেল
একের পর এক অনুভবী কল্পকথা |
মনটা সরে গেল অবাক চোখে চেয়ে দেখে 
কেমন বিশ্বাস ভেঙে ফেলে ঠুনকো কাঁচের মত !

ব্যাস ! অপমানিত কারিগরের দুশিন্তা ----
"
এমন ' হবার কথা ছিল না !
এতদিনের কারিগরী বিদ্যা কি বৃথা যায় !
"
লাগাও আরও কারিগর, ভেঙে ফেল,
তছনছ করে দাও শামুকের খোলস,
হিংস্র থাবায় টুঁটি চিপে ধরে
আপাত সরল তিলোত্তমা মনের ন্যাকামি |
তাই আজ ইতিহাস কথা বলে যায় 
পালাবদল হয় একই দৃশ্যের বিভিন্ন 
নাট্যমঞ্চের রঙ্গভূমিতে || 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন