০৯ মে ২০১৪

গুচ্ছ কবিতা - ইন্দ্রাণী সরকার

চিরমুক্তি 

আমরা বসবাস করি এক কঠিন বাস্তবে
যেখানে চলন্ত বাসে বাসে ধর্ষিতা রমনী 
রাতের পর রাত অঞ্জলি দেওয়া বিপন্ন অস্তিত্ব 
যেন আদিম বর্বতার পোশাক এখনো অটুট

যোনি থেকে ঝরে অবিশ্রান্ত রক্তের ধারা 
অন্ধকারে হারিয়ে যায় কত না তরুণী 
যারা কোনদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল |
প্রতিবাদের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে সমাজ |

হিংস্র শ্বাপদের লোভাতুর চোখ এড়িয়ে 
ওরা কি খুঁজে পাবে এক বিশ্বস্ত ঈশ্বর ?
এক নির্লোভ জগতের প্রতিশ্রূত আচ্ছাদন ?
বিকৃত কামনার হাত থেকে চিরমুক্তি ?



পরিব্রাজক 

অনুশোচনার রৌদ্র আগুন স্পর্শ দেয় না আর
যতটুকু মধুর সম্পর্ক দিয়ে বিপন্ন অস্তিত্ত্ব
পুনরুজ্জীবিত করা যায় ঠিক ততটুকুই অমরত্ত্ব 
শীতলপাটিতে চন্দন প্রলেপে লাগানো ছিল |
কিন্তু শুধু ছলনার দাঁড়িপাল্লায় কথার ওজনে 
উদ্ভূত হয়েছিল রঙ বেরঙের কাব্য ফোয়ারা |
বিষুবরেখা, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ খুঁড়ে খুঁড়ে 
এসেছিলো পাতাল ফোঁড়া অক্ষৌহিনী সেনারা
চক্রবুহ্যে কবিতা তীরে আবদ্ধ করতে কুমারী 
সৌদামিনীর বিলম্বিত কৌমার্য্য সিঁথি হরণে;
আবিষ্ট রণক্লান্ত অক্লান্ত পথিক সেনাবাহিনী 
একের পর এক ক্লেদাক্ত বলয়ের পরিব্রাজক |



হোলির রঙিন কবিতা 

রঙ দাও ওগো রঙ দাও 
ওই নিরন্ন, বুভুক্ষু 
বিবর্ণ মুখে রঙ দাও |

রঙ যদি দিতে হয় দাও
ওই শীর্ন জীর্ণ মলিন 
মায়ের মুখে রঙ দাও |

রঙ যদি দিতে চাও দাও 
ওই ক্লান্ত, শ্রান্ত, ঘর্মাক্ত 
পিতার মুখে রঙ দাও |

অনেক অনেক রঙ দাও 
যত অনাথ রুগ্ন অভুক্ত 
শিশুদের  মুখে রঙ দাও |

হ্যাঁ হ্যাঁ দাও, আরও দাও 
ওই রঙহীন মেঠো দেওয়ালে 
রঙের বন্যা ছড়িয়ে দাও



নদীর গন্তব্য 

নদীর গন্তব্য নিয়ে আজকাল 
আর মাথা ব্যথা করেন না 
আমাদের ভূগোলের স্যার |

নদী চলে আপন খেয়ালে 
জল ভেঙে ভিজে যায় 
মানচিত্রের খোলা খাতা |

পাড়েতে নোনা বালি 
রোদে চিকমিক করে |
মিমি ম্যাডাম মাথা চুলকে 
ভাবেন  গনিতে কিছু 
ভুল আছে কি না |

নদীর গতিপথের বর্ণনা 
দিতে গিয়ে ম্যাডামের 
বারে বারে ভুল হয় |

ভূগোলের স্যার ব্যস্ত 
থাকেন হিসেব নিকেশে 
আবহাওয়া মেপে মেপে 
জরিপ করে যান উত্তরের 
অন্তর্গত বিন্যাসের পরিধি



অবয়বহীন শব 

চতুর্দিকে শুধু অবয়বহীন শব 
কেউ হাত নাড়ে, কেউ পা নাড়ে,
কেউ চুপিসারে উঁকি দিয়ে যায়....
গেরস্ত বাড়ি আছে , তুমি জানো না 
তোমাকে রাগিয়েই আমার আনন্দ !
খুনসুটি খেলতে খুব ভালো লাগে আসলে,
তাই ছায়া কায়া নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরি 
যদি মিলে যায় তার দেখা,  যদি এই অবয়বহীন 

শরীরের ঝুলিতে অজান্তে কিছু মনিমানিক্য মেলে




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন