কবিতা ভাবনা
১
ইদানীং বাঙালীর মধ্যে কবি হবার শখ যত বাড়ছে তত ছন্দ, মাত্রা বিষয়ে অনিহা বাড়ছে। মানেটা কী দাঁড়াল? ব্যাকরণ না শিখেই ভাষাবিদ হিসাবে যশ লাভ করার ইচ্ছা। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রি যেমন সভার মধ্যে সিধু, কানুবাবুর পাশাপাশি ডহরবাবুকে খুঁজে বেড়ান তেমনি আজকাল কেউ কেউ ব্রা, যোনি, বাল ইত্যাদি এক একটি শব্দ লিখে নিজেকে বিষ্ণু দে কিম্বা বিনয় মজুমদারের সমকক্ষ ভাবতে শুরু করেন। শুধু কবিতা নয়, ভাল গদ্য লিখতে গেলেও যে ছন্দের উপর দখল থাকা দরকার সে কথা শোনামাত্র তাদের মনে ভীষণ ক্ষোভের সঞ্চার হল। কেউ বললেন, ছন্দ পুরনো ব্যাপার। আজকের কবিতায় সেটা প্রাসঙ্গিক নয়। বলতে ইচ্ছে হল, দাদা কবিতা ব্যাপারটাই তো পুরনো, ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করছেন কেন? কেউ বললেন, আপনি ছন্দে লেখেন বলে সবাইকে কেন লিখতে হবে? ইচ্ছে হল বলি, লিখতে হবে না কিন্তু শিখতে হবে। শেখা শব্দটিতে বড্ড অনিহা এইসমস্ত স্বঘোষিত কবিকূলের। নিজেদের পারস্পরিক পিঠ চুলকে দিতে এরা এমন মজেছেন যে শিল্পের ব্যাকরণ চুলোয় যাক একথা দম্ভের সংগে বলছেন। যে কোনোদিনই এক লাইন কবিতা লেখেনি কিন্তু রবীন্দ্রনাথ থেকে বিনয় মজুমদার পড়ে ফেলেছেন সেই পাঠককে গুরুত্ব দিতে কবে শিখবেন কবিতার ডিঙিতে বসে থাকা কবিরা তা অবশ্য তারাই জানেন। ডিঙিতে বেশি লোক চড়ে বসলে সে ডিঙা যে ডুববেই তা বলার মধ্যে আমি কি কোন অপরাধ করে ফেললাম?
২
কেউ কেউ শব্দের আঁশ ছাড়িয়ে সন্তুষ্টিতে ভোগেন। আমি কবিতার আঁশ ছাড়াই। তারপর ভিতরে শাঁস না পেলে আমলাদের কবি হওয়ার বাসনাকে খিস্তি দিই। যে সমস্ত সম্পাদক তাদের গরুর মতো দুইয়ে বছরের পর বছর পত্রিকা চালান আর নিজের জন্মদিন পালনের খবর বড় বড় করে নিজের পত্রিকায় ছাপেন সেই সম্পাদকদের কাপড় খুলে উলঙ্গ করার বাসনা জাগে মনে।
হে স্বাধীনতা, তুমি আমাকে উচ্ছৃঙ্খল কোরো না। ছন্দ ভাঙবো বলে যেন ছন্দ শিখতে ভুলে না যাই। যেন দাবি না করি যা লিখছি, যা লিখবো তাই কবিতা। তোমার দায়, দায়িত্ব সামলে আমি যেন বছরের পর বছর বাংলাকে কবিতাকে পাঠকের কাছে আর কবিতার পাঠককে কবিতার কাছে নিয়ে যেতে পারি। স্বাধীনতার দায় বড় বালাই, যে যে ক্ষেত্রে কাজ করছে তারা যেন সেই দায় ও দায়িত্ব বোঝে এবং ফাঁকি দিয়ে ফাঁক বড়ো করার চেষ্টা থেকে বিরত হয়--- এটাই স্বাধীনতা দিবসের প্রার্থনা।
৩
আজকাল বড় অশান্তিতে আছি। কবিতার নামে যা খুশি তাই নাকি করা চলে? বাংলা হরফে লিখবেন, বাংলা ভাষায় লিখবেন কিন্তু বাংলা ব্যকরণ মানা চলবে না। তাহলেই নাকি আধুনিকতা ঝাড় খেয়ে যাবে। অতএব, আধুনিকতার স্বার্থে, উত্তর আধুনিকতার স্বার্থে যা খুশি তাই করে লিখে যাওয়াটাই রেওয়াজ। এমনই অভিমত এক বহুল প্রচারিত কবির। অধিকাংশ কাগজ খুললেই যার নাম নিয়মিত দেখা যায়। অতএব তিনি বড় কবি। তিনি যদি নতুন কিছু লিখতে গিয়ে লেখেন 'সে যাই', বা 'আমি যাই' তাতে নাকি ভুলের কিছু নেই। অসাধারণ হতে হবে বাংলা কবিতাকে তাই যত এক্সপেরিমেন্ট আঙ্গিকে। বিষয়ের বিষে নিজে না ভুগে, আঙ্গিকের ভাইরাল ফিভারে পাঠককে ভোগানোর দুর্দান্ত চেষ্টা। আর পাঠক বেচারি কি করে? না ভুগতে চেয়ে ভেগে পড়ে পাঠের দুনিয়া থেকে।
আর, কবি বড় থেকে বৃহৎ হতে থাকেন বিভিন্ন পুরস্কারে আর পিঠ চুলকানির প্রচুর পত্রিকায় নিজের কবিতা ছাপার অক্ষরে দেখে।
বাংলা কবিতা জিন্দাবাদ। এখন দেখার এই যে চেয়ার না মুছেই কোন কবি কোন চেয়ার বাগিয়ে নিতে পারছেন।
১
ইদানীং বাঙালীর মধ্যে কবি হবার শখ যত বাড়ছে তত ছন্দ, মাত্রা বিষয়ে অনিহা বাড়ছে। মানেটা কী দাঁড়াল? ব্যাকরণ না শিখেই ভাষাবিদ হিসাবে যশ লাভ করার ইচ্ছা। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রি যেমন সভার মধ্যে সিধু, কানুবাবুর পাশাপাশি ডহরবাবুকে খুঁজে বেড়ান তেমনি আজকাল কেউ কেউ ব্রা, যোনি, বাল ইত্যাদি এক একটি শব্দ লিখে নিজেকে বিষ্ণু দে কিম্বা বিনয় মজুমদারের সমকক্ষ ভাবতে শুরু করেন। শুধু কবিতা নয়, ভাল গদ্য লিখতে গেলেও যে ছন্দের উপর দখল থাকা দরকার সে কথা শোনামাত্র তাদের মনে ভীষণ ক্ষোভের সঞ্চার হল। কেউ বললেন, ছন্দ পুরনো ব্যাপার। আজকের কবিতায় সেটা প্রাসঙ্গিক নয়। বলতে ইচ্ছে হল, দাদা কবিতা ব্যাপারটাই তো পুরনো, ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করছেন কেন? কেউ বললেন, আপনি ছন্দে লেখেন বলে সবাইকে কেন লিখতে হবে? ইচ্ছে হল বলি, লিখতে হবে না কিন্তু শিখতে হবে। শেখা শব্দটিতে বড্ড অনিহা এইসমস্ত স্বঘোষিত কবিকূলের। নিজেদের পারস্পরিক পিঠ চুলকে দিতে এরা এমন মজেছেন যে শিল্পের ব্যাকরণ চুলোয় যাক একথা দম্ভের সংগে বলছেন। যে কোনোদিনই এক লাইন কবিতা লেখেনি কিন্তু রবীন্দ্রনাথ থেকে বিনয় মজুমদার পড়ে ফেলেছেন সেই পাঠককে গুরুত্ব দিতে কবে শিখবেন কবিতার ডিঙিতে বসে থাকা কবিরা তা অবশ্য তারাই জানেন। ডিঙিতে বেশি লোক চড়ে বসলে সে ডিঙা যে ডুববেই তা বলার মধ্যে আমি কি কোন অপরাধ করে ফেললাম?
২
কেউ কেউ শব্দের আঁশ ছাড়িয়ে সন্তুষ্টিতে ভোগেন। আমি কবিতার আঁশ ছাড়াই। তারপর ভিতরে শাঁস না পেলে আমলাদের কবি হওয়ার বাসনাকে খিস্তি দিই। যে সমস্ত সম্পাদক তাদের গরুর মতো দুইয়ে বছরের পর বছর পত্রিকা চালান আর নিজের জন্মদিন পালনের খবর বড় বড় করে নিজের পত্রিকায় ছাপেন সেই সম্পাদকদের কাপড় খুলে উলঙ্গ করার বাসনা জাগে মনে।
হে স্বাধীনতা, তুমি আমাকে উচ্ছৃঙ্খল কোরো না। ছন্দ ভাঙবো বলে যেন ছন্দ শিখতে ভুলে না যাই। যেন দাবি না করি যা লিখছি, যা লিখবো তাই কবিতা। তোমার দায়, দায়িত্ব সামলে আমি যেন বছরের পর বছর বাংলাকে কবিতাকে পাঠকের কাছে আর কবিতার পাঠককে কবিতার কাছে নিয়ে যেতে পারি। স্বাধীনতার দায় বড় বালাই, যে যে ক্ষেত্রে কাজ করছে তারা যেন সেই দায় ও দায়িত্ব বোঝে এবং ফাঁকি দিয়ে ফাঁক বড়ো করার চেষ্টা থেকে বিরত হয়--- এটাই স্বাধীনতা দিবসের প্রার্থনা।
৩
আজকাল বড় অশান্তিতে আছি। কবিতার নামে যা খুশি তাই নাকি করা চলে? বাংলা হরফে লিখবেন, বাংলা ভাষায় লিখবেন কিন্তু বাংলা ব্যকরণ মানা চলবে না। তাহলেই নাকি আধুনিকতা ঝাড় খেয়ে যাবে। অতএব, আধুনিকতার স্বার্থে, উত্তর আধুনিকতার স্বার্থে যা খুশি তাই করে লিখে যাওয়াটাই রেওয়াজ। এমনই অভিমত এক বহুল প্রচারিত কবির। অধিকাংশ কাগজ খুললেই যার নাম নিয়মিত দেখা যায়। অতএব তিনি বড় কবি। তিনি যদি নতুন কিছু লিখতে গিয়ে লেখেন 'সে যাই', বা 'আমি যাই' তাতে নাকি ভুলের কিছু নেই। অসাধারণ হতে হবে বাংলা কবিতাকে তাই যত এক্সপেরিমেন্ট আঙ্গিকে। বিষয়ের বিষে নিজে না ভুগে, আঙ্গিকের ভাইরাল ফিভারে পাঠককে ভোগানোর দুর্দান্ত চেষ্টা। আর পাঠক বেচারি কি করে? না ভুগতে চেয়ে ভেগে পড়ে পাঠের দুনিয়া থেকে।
আর, কবি বড় থেকে বৃহৎ হতে থাকেন বিভিন্ন পুরস্কারে আর পিঠ চুলকানির প্রচুর পত্রিকায় নিজের কবিতা ছাপার অক্ষরে দেখে।
বাংলা কবিতা জিন্দাবাদ। এখন দেখার এই যে চেয়ার না মুছেই কোন কবি কোন চেয়ার বাগিয়ে নিতে পারছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন