মনোবিকলন
মাসিমার সঙ্গে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেখা, তিনি আমাকে সুবিমলের ছেলেকে দেখতে যেতে বললেন। সুবিমল আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আমি একটা বিদেশী নার্সিং হোমের একজন স্পেসালিস্ট ডাক্তার। নিষ্ঠা, ধৈর্য ও অধ্যাবসায়ের ফলে গাইনোক্লোজিস্ট হিসাবে আমার যথেষ্ট সুনাম আছে। অন্যদিকে, আমার বন্ধু সুবিমল একটা গার্মেটস ফ্যাক্টোরীর এসিট্যান্ট ম্যানেজার। সুবিমল আর আমি এক সঙ্গে লেখাপড়া করেছি ইন্টার পর্যন্ত ।
ঢকেশ্বরী মন্দিরে মাসিমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরের শুক্রবারের সন্ধ্যায় আমি সুবিমলের
ছেলেকে দেখতে মাসিমাদের বাড়ি গেলাম। সুবিমল তখন বাড়ি ছিল না। মাসিমা আমাকে পেয়ে বেজায় খুশি। আমাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে রেখে তিনি ভেতরে গিয়ে রমলাবৌদিকে পাঠিয়ে দিলেন।
অনেকদিন পরে রমলাবৌদিকে দেখলাম। রমলাবৌদির গায়ের রঙ দুধে আলতায় মেশানো, শরীরের গড়ন আটোসাটো । সাজগোজ সাধারণই বলতে হয়। বাচ্চা হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের সময়ের চেয়ে রমলাবৌদির গা’গতরে একটু মোটাসোটা হয়েছে। নাকটা টিকোল, চোখদুটোতে যেন এক ধরনের মোহনীয়তা! এক কথায়, রমলাবৌদিকে সুন্দরী বলা যায়।
বিয়ের দু’বছরের মাথায় রমলাবৌদির একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। সুবিমল
নাকি ছেলে হওয়াতেও খুশি হতে পারেনি, রমলাবৌদির কথাবার্তায় মনে হল। সে বলল,‘ আপনার বন্ধুটির মনের নাগাল পাওয়া বেজায় কঠিন !’ রমলাবৌদি আরো কী যেন বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু মাসিমা এসে পড়ায় সে কথা বন্ধ করে ডিভান থেকে উঠে বলল,‘ মা, আপনি অনিমেশদার সঙ্গে গল্প করেন, আমি চা নিয়ে আসি।’ মাসিমা আমার পাশে বসলেন। আমি তাকে বললাম,‘ খোকাবাবু কোথায়? ঘুমুচ্ছে নাকি।’ ‘ হ্যাঁ, দোলনায় ঘুমুচ্ছে।’ ‘খোকাবাবুর মুখটা না দেখে ফিরে যাব নাকি, মাসিমা!’ ‘ তুমি একটু বসো, সুবিমল হয়তো এসে পড়বে। ’ সুবিমলকে ফোন করলাম, কিন্তু তার মোবাইল ফোন সুইজ অফ দেখাচ্ছে। ‘ মাসিমা, ওকে তো ফোনে পাচ্ছি না। ওর ফোন বন্ধ!’
রমলাবৌদি একটা ট্রেতে গোটা দুই প্লেট ও একটা বাটিতে পায়েস , আর এক পট চা নিয়ে এলে আমি বললাম ,‘ অত খাবার কেন, বৌদি! সন্ধেবেলা একটু চা হলেই যথেষ্ট!’ রমলাবৌদি আমার কথার জবাব না দিয়ে একটু হাসলেন।
‘ এত কী আর আনবে, বাবা! সুবিমল আর তুমি পায়েস খুব ভালবাস,তাই বৌমা ফ্রিজ থেকে পায়েসে এনেছে। ’ রমলাবৌদি আমার সামনের নিচু টেবিলটাতে ওগুলো রাখার পর মাসিমা বললেন,‘ বাবা খেতে থাক , দাদুভাই জেগে গেছে বুঝতে পারছি, আমি ওকে নিয়ে আসছি।’
সুবিমলের বিয়ের আগে ওদের বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত ছিল। তখন ওর বাবা বেঁচে ছিলেন। আমি ডাক্তার মানুষ আমাকে সব সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়। আগের মতো আমার পক্ষে কোথায়ও যাওয়া হয়ে উঠে না। সুবিমল বাড়ি না থাকলে তো আগের মতো ওদের বাড়িতে হুটহাট করে আসা যাওয়া করা এখন ঠিক নয় আমার মতে। কাকাবাবু বেঁচে থাকলেও একটা কথা ছিল।
সুবিমলের বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ায় মাসিমা ভেঙে পড়েছিলেন। সুবিমলের বন্ধু হিসাবে আমি মাসিমাদের যথাসাধ্য পাশে দাঁড়িয়েছিলাম । সুবিমল তাদের একমাত্র সন্তান। তার উপর তাদের অনেক আশা ভরসা। সুবিমলের বাউন্ডেলাপনার জন্যে ওর বাবা মাঝেমধ্যেই অস্বস্তিতে থাকতেন। অনার্স পরীক্ষা দেওয়ার পর ও রাত করে বাড়ি ফিরতে শুরু করলে ওর বাবা-মা মধ্যে বাবাই বেশি উদ্বিগ্ন হতেন। ‘ এখন রাত বারটা বাজতে চলল সুবিমলের বাড়ি ফেরার নাম নেই।’ সুবিমলের বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে ওর মাকে বলতেন। ‘ এত রাত পর্যন্ত তোমার ছেলে কোথায় থাকে তুমি কি জান? ওকে সকাল সকাল বাড়ি ফিরতে বলতে পার না!’ ‘ বলি না তো কী! বললে ও আমাকে বলে - এখন কি তোমার কোলে বসে থাকার বয়স আছে আমার । আমি রাত করে বাড়ি ফিরলেও দেখো অনার্স এ কী রেজাল্ট করি। ’ সুবিমলের মা এটুকু বলেই ক্ষান্ত হতেন। ওর মা সাবিত্রীদেবী ছেলেকে ভাল করেই চেনেন। তিনিও ছেলের কথা ভেবে শঙ্কিত।কিন্তু সুবিমলের বাউন্ডেলাপনার জন্যে স্বামীর মৃত্যু পর তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েন।
রমলাবৌদি টেবিলে খাবারগুলো সাজিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এখন শুরু করুন।’ ‘ আপনিও নিন।’ ‘ না না , সৌজন্য দেখাতে হবে না। আপনি খেতে থাকুন তো দেখি ’ ‘ঠিক আছে, আপনি সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার মুখে খাবার ---’ ‘ মেয়েদের সামনে ছেলেরা আসলেই খেতে লজ্জা পায়, এখন দেখছি কথাটা মিথ্যে নয়। আচ্ছা , তাহলে আমি ডিভানে আপনার পাশে বসছি। ’
রমলাবৌদি নার্সিং এ গ্রাজুয়েট । রমলাবৌদির বাবা চাননি মেয়ে চাকরী করুক। সুবিমলের বাবা’র ইচ্ছে ছিল তার একমাত্র সন্তান সুবিমলকে দেশ থেকে ডাক্তারী পাশ করিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে স্পেশালিস্ট বানানোর। কিন্তু বিধিবাম আই.এসসি পাশ করার পর সুবিমল বেঁকে বসল । সে এম.বি.বি.এস. পড়া জন্যে অ্যাডমিশন টেস্টে বসবে না। বাবার কথা অগ্রাহ্য করে অনার্সে ভর্তি হল।
ছেলের কীর্তিকলাপের কথা বাবার কানে যাওয়ার সুবিমলের বাবা ছেলের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ও তখন অনার্স পাশ করে এম.বি.এ. পড়ছিল।
সুবিমল ও রমলার সেটেল্ড ম্যারেজ। আমি কখনো কল্পনাও করিনি বাবা মার পছন্দ করা মেয়েকে সুবিমলের বিয়ে করবে। ও মেধাবী ছাত্র, তারপর সুদর্শন । মেয়েরা তার সান্নিধ্যে আসার জন্যে উৎসুক । সুবিমল সুযোগের সদ্বব্যাবহার করতে দ্বিধা করেনি।
রমলাবৌদি আমার পাশে বসে বলল,‘ আপনি কি চিরকুমারই থেকে যাবেন , নাকি প্রেম ভালবাসার মেয়েকে------ ’ ‘ তা থাকতে তো পারেই। আমি তো সুবিমলের মতো বাবা মার কথায় কুপোকাত হয়ে রাজি নই।’ আমি বানিয়ে বানিয়ে বললাম। ‘ বাবা মার কথায় রাজি না হয়ে ভালই করছেন। তা নইলে আপনিও আর একটা সুবিমল হয়ে যেতেন।’ রমলাবৌদির কথায় আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,‘ আর একটা সুবিমল হতাম মানে?’ ‘ আপনার বন্ধুর উচিত ছিল তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করা। আপনার বন্ধুটি ছাত্রজীবন থেকে মেয়েদের সঙ্গে প্রেম ভালবাসা কম করেনি, তাই তো?’ ‘সুবিমল বিয়ে আগে প্রেম করেছে, এখন বিয়ের পরে বৌয়ের সঙ্গে প্রেম করবে এটাই তো আমি মনে করি।আপনি তো সুবিমলের অযোগ্য নন। কথা বলার সময় আপনার গালে টোল পড়ে, শুনেছি যে সব মেয়ের গালে টোল পড়ে তারা নাকি স্বামী সোহাগিনী হয়। ’
রমলাবৌদি কি যেন বলতে যাচ্ছিল, মাসিমা খোকাবাবু কোলে করে নিয়ে ওখানে হাজির হওয়ায় রমলাবৌদি চুপ করে গেল। আমি মাসিমার কোল থেকে খোকাবাবুকে কোলে নিয়ে পাঁচ শ’টাকার একটা নোট তার হাতের মধ্যে গুজে দিলাম। ‘ না না, ওকে টাকা দেবেন না । ’ রমলাবৌদি বলে উঠল। ‘ আপনাকে তো দিচ্ছি না, খোকাবাবুর মুখ দেখতে-----’ ‘ ওহ, আমার ঘাট হয়েছে। ‘ আমি খোকাবাবুকে রমলাবৌদির কোলে দিয়ে সে দিনের মতে ওখান থেকে বিদায় নিতে উদ্যত হলে রমলাবৌদি ছেলেকে মাসিমার কোলে দিয়ে আমার পিছু পিছু গেট পর্যন্ত এল। ‘ তাহলে, আজ আসি বৌদি।’ ‘ আসুন, আবার এলে আপনার বন্ধুর কীর্তিকাহিনী বলব। তবে একটা কথা শুনে রাখুন আপনার বন্ধুর একটা কচি খুঁকি বিয়ে করা উচিত ছিল, তাহলে -----’ আমি রমলাবৌদির কথা না শোনার ভান করে ওখান থেকে চলে আসার সময় বললাম,‘ আর একদিন আপনার সব কথা শুনবো, কেমন? ’
পরদিন শনিবার ছিল। সুবিমলের অফ ডে। ডাক্তারদের অফ ডে বলে কিছু নেই, তবুও আমার মাঝেমাঝে অফ ডিউটি থাকে। আমি ভাবছিলাম, একদিন অফ ডিউটিতে একটু সকাল সকাল বের হয়ে সুবিমলকে পাকড়াও করব। রমলাবৌদির কথা থেকে যতটুকু আভাস পেলাম তা থেকে বুঝলাম সুবিমল মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত !
সুবিমল আর আমি ঢাকা শহরের নাম করা কো-এডুকেশন স্কুলে পড়তাম। ও আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু । আমরা দু’জন অন্তরঙ্গ বন্ধু হলেও অনেকক্ষেত্রে আমি আর সুবিমল দু’মেরুর মানুষ তা আমি স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই উপলব্ধি করতাম। ও আমার চেয়ে পড়াশোনায় একটু ভাল ছিল বলতেই হয়। ওর চেহারায় রমনীমোহন মোহনীয়তা থাকায় ক্লাসের মেয়েরা ওকে অন্যদৃষ্টিতে দেখতো বলে আমার মনে হত।
স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সুবিমল মেয়েদের সার্কেলে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে গড়ে তোলে। ক্লাসের বেশ কয়েকটা মেয়ে সুবিমল বলতে অজ্ঞান!
সুবিমল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হলেও কলেজ জীবন থেকে আমি সুবিমল থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম , তবুও ও আমাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই আসতো। এসে ও আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুমার সঙ্গে রঙ্গরসিকতা করতো। আমার ঠাকুরদা বহুদর্শী মানুষ ছিলেন, তিনি সুবিমলের কথাবার্তায় বুঝতে পারতেন ও সব সময়ই কেন যেন একটা ঘোরের মাঝে থাকে। আমার কথাবার্তা থেকে তিনি বুঝেছিলেন আমার বন্ধু সুবিমলের রমনীমোহন চেহারার জন্যে অনেক মেয়েই হয়তো ওকে সঙ্গ দিতে ভালবাসে। ঠাকুরদার ধারণাটা ঠিকই ছিল। আমার শোনার ইচ্ছে না থাকলেও বিমলেশ কিন্তু আমাকে সব কথাই বলত।
মাসিমার বাড়ি থেকে আসার কয়েকদিন পরে সুবিমলের সাক্ষাৎ হল নিউমার্কেটের একটা ক্যাফেতে । ভাবলাম , আমি এক কাপ কফি খেলে ভাল হত । নীলক্ষেতের পুরনো বইয়ের বাজার থেকে মেডিক্যাল জানার্ল্ খোঁজোর উদ্দেশে নিউমার্কেটের পাশ দিয়ে আমি ওখানে যাচ্ছিলাম। নিউমার্কেটের পাশের ক্যাফেতে আমি ঢুকে পড়লাম।
আমি এক কাপ ব্লাক কফি আর দুটো সামুচা অর্ডার দিয়ে পাশে নজর পড়তেই সুবিমলকে ডানদিকের একটা নিরিবিলি টেবিলে দুটো মেয়ের সঙ্গে গল্প করতে দেখলাম। ওদের টেবিলে কাপ, প্লেট ও গ্লাসগুলো টেবিলে ছড়ান। আমি ওদের কথাবার্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে সামুচা ও কফি শেষ করতেই ওয়েটার বিল নিয়ে হাজির। এবার আমার বিল পরিশোধ করে এবার আমাকে নীলক্ষেতে উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে হবে। আমি আর চোখ সুবিমলের টেবিলের দিকে তাকালাম। দেখলাম মেয়ে দুটো সুবিমলের কাছ থেকে বিদায় নিল।
আমি ভাবলাম, এবার হয়তো সুবিমলকে একা পাওয়া যাবে। বিল পরিশোধ করতে গিয়ে সুবিমলের সঙ্গে আমি মুখোমুখি হলাম। ও আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘ নিরামিষ মানুষ তুই এখানে কেন ? ’ ‘ একটু কফিটফি ---’ আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল, ‘ তুই তাহলে জানিস এখানে কফি’ ছাড়াও টফিও পাওয়া যায়। টফিতো একা একা খেলে মউজ হয় না তুই হয়ত এখনো জানিস না, তাই তো?’ আমি ওর কথা শুনে বুঝতে পারলাম, আমি ভুল জায়গায় কফি খেতে এসেছি। আমি ওর কথা কান না দেওয়ার ভান করে বললাম,‘ রাখ ও সব কথা, চল বাইরে গিয়ে একটু নিরিবিলিতে বসি।’
সুবিমল আমার কথায় রাজি হল। আমরা ওখান থেকে বের হয়ে নিউমার্কেটের বাইরের একটা নিরিবিলি জায়গায় বসলাম। ‘ তুই আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলি মায়ের কাছে শুনলাম।’ ‘ হ্যাঁ, তোর ছেলেটাকে দেখতে তো পুতুলের মতো হয়েছে রে, সুবিমল।’ ‘ তোর রমলাবৌদি তাহলে তোকে ভাল করেই মগজ ধোলাই করেছে।’ ‘ কী যা তা বলছিস ! আমি কি হাবাগোবা যে কেউ ইচ্ছে করলেই আমাকে মগজ ধোলাই করতে পারে।’ ‘ ওহ! তা ঠিক। তোর রমলাবৌদি আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছে, তাই না?’ ‘ আমি এখন বুঝতে পারছি,তোর পেটে---’ ‘ তুই তো জানিস আমি মদ খেয়ে মাতাল হই না।’ ‘ তাহলে তুই আবোল তাবোল কেন বলছিস ? ’ ‘ তোর রমলাবৌদির বাবা মা আমাকে ঠকিয়েছে। তারপর ও নিজে একটা ছেলে জন্ম দিয়ে কৃতার্থ করেছে। ’ ‘?’
আমার কথার জবাব না দেওয়ায় আমি ওকে বললাম,‘ তুই তো নারী প্রগতির জন্যে বড় বড় লেকচার দিয়ে আসছিস কলেজে উঠার পর থেকেই। এখন রমলাবৌদিকে কী কারণে দুষছিস্ ------- ’ আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে সুবিমল বলে উঠল,‘ তুই বুঝবি নে হ্যাদারাম। ’ সুবিমল এর কথা শুনে আমার মাথার ভেতর ঘোরপাক খেতে লাগায় আমি আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে গেলে সুবিমল আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলল,‘ তুই তো এখনো বিয়েথা না করে ব্রহ্মচর্য পালন করছিস্, তুই স্বামীস্ত্রীর মিলনের কথা কী বুঝবি !’ সুবিমলের কথাবার্তায় বুঝলাম রমলাবৌদির সঙ্গে ও কী কারণে গন্ডগোল পাকাচ্ছে। আমি সুবিমলকে বললাম,‘ আগামী শুক্রবার বিকালে বাড়ি থাকিস , আমি তোদের বাড়িতে যাব। রমলাবৌদির সামনেই তোর সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করব।’ ‘ যাস , তবে তুই কী বোঝাপড়া করবি? আজ পর্যন্ত বিয়ে করলিনে, তুই বৌয়ের কী বুঝিস রে!’
পরের শুক্রবারে সুবিমলের বাড়িতে গিয়ে সুবিমলকে না পেয়ে আমার মনটা দমে গেল। মাসিমা চোখের ডাক্তার দেখাতে রোটারী ক্লাবে গেছেন। বাড়িতে শুধু রমলাবৌদি আর তার ছোট্ট ছেলেটিই বাড়িতে আছে। সুবিমল ও মাসিমাকে বাড়িতে না পেয়ে আমি ফিরে আসছিলাম। ‘সুবিমল ও মাসিমা বাড়িতে আজ তবে ফিরে যাই রমলাবৌদি ’ আমি রমলাবৌদিকে বললাম। ‘ বসুন অনিমেশদা, মা এখনই ফিরে আসবেন।’ ‘সুবিমলের তো বাড়িতে থাকার কথা ছিল। ওর সঙ্গে আমার জরুরী কথা আছে । ফোন করেও ওকে পাচ্ছি না, বলছে সুইজ অফ।’ ‘ ওর ফোন সব সময়ই সুইজ অফ থাকে। হয়ত----’ রমলাবৌদি কথা শেষ না করে কোলের ঘুমন্ত ছেলেটিকে দোলনায় শুয়িয়ে দিতে ভেতরে গেল।’ আমি ততক্ষণে ডিভানে বসে পড়েছি। রমলাবৌদি ফিরে এসে আমার পাশে বসে তার দু:খের ফিরিস্তি বলতে শুরু করল। আমি রমলাবৌদির কথা শুনে থ মেরে গেলাম। ‘আপনার বন্ধুর কথা বলতে লজ্জা লাগে, তবুও আপনাকে বলতে হবে।’ ‘নি:সঙ্কোচে আপনি বলুন, আসল ঘটনাটা শুনে যদি আমি আপনার কাজে লাগতে পারি।’ রমলাবৌদি মুখ খুলল,‘ আপনার বন্ধু অহেতুক একটা সন্দেহের মধ্যে আছে, আমার বাবা নাকি আমার বয়স কমিয়ে বলে আপনার বন্ধুর সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিয়েছেন। ’ রমলাবৌদি কথা থামিয়ে কী যেন ভেবে ভেতর থেকে একটা ফাইল হাতে করে ফিরে এলো। ফাইল থেকে এস.এস.সি এর সার্টিফিকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘পড়ে দেখুন আমার বয়স আপনার বন্ধু চেয়ে বেশি কিনা। ওর অভিযোগ, আমার বয়স ও চেয়ে বেশি, আমি বুড়িয়ে গেছি , তাই আমি নাকি আপনার বন্ধুটিকে তৃপ্তি দিতে পারছি না।’ ‘ আপনি কী বলছেন তার মাথামুন্ড কিছুই বুঝছি না!’ ‘ ওহ! আপনি কি বাৎসায়নের লেখা ‘কামসূত্র’ পড়েছেন?’ ‘ ধরুন, কিছুটা পড়েছি, বৌদি।’
‘ লালন বাৎসায়নের লেখা ‘কামসূত্র’ অনুযায়ী এই গানটিতে নারী পুরুষের শ্রেণির ব্যাখ্যা করেছেন এ ভাবে. - চিন্তামণি ,পদ্মিনী নারী এরাই পতিসেবার অধিকারী। হস্তিনী , শঙ্খিনী নারী তারা ককর্শ ভাষায় কয় বচন। শশক পুরুষ সত্যবাদী, মৃগ পুরুষ উর্ধভেদী। অশ্ব, বৃষ নিরবধি তাদের কুকর্মেতে সদাই মন। ‘ এ গান দিয়ে আপনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন, রমলা বৌদি ? ’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
‘ তাহলে আমাকে কি ব্যখ্যা করে বলতে হবে, ব্যাখ্যা করে বললে কিন্তু আপনার বন্ধুর চরিত্র প্রকাশ---- ।’ রমলাবৌদি কথাটা শেষ না করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছল। রমলাবৌদির মনের অবস্থা বুঝে আমার মনটাও মুহূর্তের মধ্যে কেমন যেন হয়ে গেল।
রমলাবৌদি যে কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারছিল না সে কথাটা আমি বুঝতে পারলাম। আসলেই আমার বন্ধু সুবিমল বৃষ কিংবা অশ্ব শ্রেণির পুরুষ, আর অন্যদিকে রমলা বৌদি চিন্তামণি কিংবা পদ্মিনী শ্রেণির নারী।
রমলাবৌদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে এবার আমাকে যা বলল তা শুনে থ হয়ে গেলাম। রমলাবৌদি বলল সুবিমল নাকি তাকে ডিভোর্স দেওয়ার ফন্দি ফিকির খুঁজছে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তাদের একটা ছেলে হয়েছে। রমলাবৌদির সঙ্গে তার শাশুড়ির মানে আমার মাসিমার সম্পর্ক মধুর। সুবিমল ও রমলাবৌদির মধ্যে ঝগড়াঝাটির কথা কেউ শোনেনি। ডিভোর্স চাইলিই তো হবে না যুক্তি সংগত কারণ অবশ্যই থাকতে হবে। তাছাড়া হিন্দু বিয়ে সোসাল কন্ট্রাক্ট নয়। হোমাগ্নিকে সাক্ষী রেখে আজীবনের জন্যে স্বামী স্ত্রীর বন্ধনকে মুছে ফেলা সহজ কথা নয়। সুবিমল যদি রমলাবৌদির নামে কামশীতলতার অভিযোগ আনে তা ধোপে টিকবে না, কারণ অল্প কিছুদিন আগে রমলা বৌদির ছেলে হয়েছে।
কয়েকদিন পরে বসুন্ধরায় অফিসে যাওয়ার পথে বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে সুবিমলকে যেন দেখতে পেলাম । কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হল, মেয়েটির সাথে এমন ভাবে হাত ধরাধরি করে সুবিমল এখানে আসতে যাবে কেন! সামনের স্টপেজে বাস থামতেই আমি বুঝতে পারলাম আমার পরের ধারণা ভুল, আগের ধারণাটাই ঠিক। সুবিমলের সঙ্গে মিতাকে দেখতে পেয়ে আমি তো অবাক! মুহূর্তের মধ্যে রমলাবৌদির কথা আমার মনে পড়ল। কেন সুবিমল রমলাবৌদিকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছে তা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। ক্লাস এইটে থাকাকালে সুবিমল মিতাকে ভালবাসতো, সেই ভালবাসা যে এ পর্যন্ত গড়াতে পারে তা আমি এখন ভাবতেও পারছি না।
আমি জানি, সুবিমলের মতো বেহেবিয়ান মানুষেরা কিন্তু সাহসী হয় না। ওই ধরনের মানুষ ধান্দাবাজির উদ্দেশে ব্লাকমেইল করতে পছন্দ করে। রমলাবৌদির ছেলে হওয়াও সুবিমল খুশি হতে পারেনি, এটা বিশ্বাস করতে আমার মন সায় দিল না। সুবিমল রমলাবৌদিকে ভালবাসে না তাও বিশ্বাস করতে আমার মন চায় না। ডিভোর্সে ভয় দেখিয়ে রমলা বৌদিকে ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছে।
তবে অনেক বিবাহিতা মহিলাদের মধ্যে কামশীতলতা থাকে । রমলাবৌদির ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে বলে মনে হয়।সুবিমল তার স্ত্রী রমলাকে যৌনকামনায় উদ্দীপ্ত করতে পারছে না, তাই রমলাবৌদি তার স্বামীর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। ডাক্তার হিসাবে এটাই হচ্ছে আমার মতামত। সেদিন রমলাবৌদিকে বলে এসেছিলাম,‘ আপনি চিন্তা করবেন না । আমি দেখছি, আমার বন্ধু সুবিমলকে বাগে আনতে পারি কিনা।’
আমি বিষয়টা নিয়ে কয়েকদিন ভাবলাম। এক সময় আমার মনে পড়ল ডা.এস .হুমাউন স্যারের কথা। তিনি নাম করা একজন সাইকাট্রিক্স । স্যারের সঙ্গে সুবিমলের বিষয়টা নিয়ে কনসাল্ট করলাম । আমার কথা শুনে তিনি বললেন,‘ আমি আমার পেশাগত জীবনে এধরনের অনেক পেসেন্টকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি। এ পৃথিবীতে যে হরেক রকমের মানুষ আছে! কেউ হয়ত ভোজন বিলাসী, কেউ হয়ত শয়ন বিলাসী, কেউ হয়ত রতি বিলাসী আবার কেউ হয়তো বিত্ত বাসনায় মত্ত। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, সে রতি বিলাসী। তুমি নিজেই তোমার বন্ধুর সঙ্গে খোলামেলা ভাবে আলাপ করে দেখলেই বুঝতে পারবে সে তার স্ত্রীর কাছ থেকে কোন কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা। ’ তিনি কী যেন একটু ভেবে আবার বললেন, ‘ তোমাকে ওদের দু’জনের সাথেই কথা বলতে হবে। ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকতে-----।’ আমি স্যারের কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম, ‘ ঠিক আছে, স্যার,।আমি দেখছি স্যার, ব্যর্থ হলে আপনাকে বলব।’
সপ্তাহ খানেক পরে একদিন বিকেলে সুবিমল আমার বাসায় এসে হাজির। আমার ডিউটি না থাকায় বিদেশী মেডিক্যাল জার্নাল পড়ছিলাম। ‘ এ দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়ে যাই। বিশেষ কাজে জড়িয়ে পড়ায় আমি কথা মতে বাড়ি যেতে না পেরে দু:খিত। রমলার কাছে শুনলাম সেদিন তুই বাড়িতে আমাকে না পেয়ে ফিরে এসেছিস্, মা ওই ওই দিন চোখ দেখাতে গিয়েছিলেন। মায়ের সঙ্গেও তোর দেখা হয়নি। তা তোর রমলাবৌদি তো আমার নামে তোর কাছে অনেক কথা লাগিয়েছিল, তাই না?’
আমি রমলাবৌদির কথা শুনে আগেই বুঝেছিলাম সুবিমল মনের রোগে ভুগছে। একে মনোবিকল বলা হয়ে থাকে। আমি ওদের দাম্পত্য জীবনে সমস্যা সম্বন্ধে কিছুই জানি না এমনটা ভান করে বললাম,‘ রমলাবৌদি তোর নামে আমাকে লাগাতে যাবে কেন? তোরা তো আদর্শ দম্পতি এটাই তো জানি। ’ আমার কথা শুনে সুবিমল যেন স্বাভাবিক হয়ে আরাম করে বসে কথা ঘুরিয়ে বলল,‘ তুই কি আইবুড়ো থেকে যাবি সারাজীবন? ’ আমি তার কথার কোন জবাব না দিলে সে আবার বলল,‘ তোকে আমার বিশ্বাস আছে, তবুও আমার মনে হয় তুই আবার কোন ডাক্তারনীকে বিয়ে করার মতলবে আছিস্ কিনা কে জানে!’ ‘ না না, তোর সে ভয় নেই। তুই তো জানিস্ , আমি মা বাবার একান্ত বাধ্যগত ছেলে। আর একটা ডিগ্রি নিয়ে তবেই বিয়ে কথা-----’ ‘ তাহলেই হয়েছে- ততদিনে তোর দাড়িগোঁফ পেকে না যায়!’ ‘ তাহলে কি হলে তুই খুশি হবি? ’ ‘আমার খুশিতে তোর ------’ আমি তাকে আর কথা বাড়াতে না দিয়ে বললাম,‘ তোদের বাড়িতে গেলে তোকে একদিনও পাই, তুই থাকিস কোথায়!’ ‘ আমি কোথায় থাকি তুই জানিস্ না!’ ‘ ঘরে এমন সুন্দরী বৌ থাকতে তুই কি আগের মতোই থেকে যাবি?’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। ‘ সুন্দরী না ছাই----’ ওর কথা শুনে তার প্রতি আমার মনে ক্ষেভের সঞ্চার হলেও নিজেকে শান্ত রেখে ওর কথার সঙ্গে তাল দিতে চেয়ে তাকে বললাম,‘ তুই তোর বাবা মা’র পছন্দের গেয়ো আনকালচার্ড্ মেয়েকে বিয়ে করবি আমি ভাবতে পারিনি!’
আমার কথা শুনে সুবিমল কোন কথা না বলে চুপ করে কী যেন ভাবতে শুরু করল। আমি ভাবলাম, রমলাবৌদি সম্বন্ধে ও কী বলে তা থেকে আমি ওকে বুঝতে পারব। ‘ বাবা মা কথায় যখন আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি তখন কী জানতাম ওর আসল বয়সটা কত! তুই রমলাকে গোয়ো আর আনকালচার্ড্ বলছিস্ সেটা কিন্তু ঠিক নয়, আর কুৎসিতও নয়, সুন্দরী তো বটেই। তবে ওর একটাই দোষ ও আমাকে ------’ ‘এবার থাম্ সুবিমল, আর বলতে হবে না!’ তবুও সুবিমল কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইলে আমি ওকে ধমক দিয়ে বললাম,‘ তুই থাম , আর বলতে হবে । তোর সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি।’
অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে প্রাইমারী স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত আমরা দু’জন এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। রমলাবৌদির কাছ থেকে ও যা পেতে চায় তা না পেয়ে ও সুন্দরী বৌকে ডিভোর্স দিতে দিতে চাচ্ছে। আমি ভাবলাম, রমলাবৌদিকে গেয়ো ও আনকালচার্ড্ বলায় সুবিমল খুশি নয়। সে তার বৌকে সুন্দরী বলেই জানে, তার কথায় মনে হল। তবে তার একটা দোষ আছে কেন ও বলছে সেটাই ওর মুখ থেকে বের করতে পারলেই ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে। ‘ তুই একটু বস কফি করে আনছি।’ বলে আমি চেয়ার থেকে উঠে কাপর্বোড্ থেকে গরম জল ভর্তি ফ্লাক্স , কফি ,চিনি আর কাপি আনতে এগিয়ে গেলে ও বলে উঠল,‘ একজন ব্যাচেলরের হাত থেকে আমি কিছু খেতে চাইনে।’ ‘ তাহলে চল তোদের বাড়িতে যাই , রমলাবৌদির হাতের থেকে কফিটফি খেয়ে আসা যাবে, আর তোদের---’ সুবিমল আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ হাতির ঝিলের ওদিকে আমার একটা কাজ আছে।’
‘তাহলে নে শুরু কর, তোর ফেভারাইট বিস্কিট আর নেসক্যাফের নিউ ব্রান্ডের কফি!’
কফি শেষ করার পর আমি সুবিমলকে বললাম,‘ তোর সমস্যাটি কী আমাকে খুলে বলতো দেখি।’ সে প্রথম দিকে বলতে ইতস্তত করলে আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম,‘ এখন আমি শুধুই তোর বন্ধু অনিমেশ নই, আমি ডা. অনিমেশ। ডাক্তারের কাছে সমস্যার কথা বলতে ইতস্তত করতে নেই।
এবার সুবিমল গড় গড় করে তার সমস্যার কথা বলে গেল। আমি যা ভেবেছিলাম তাই। রমলাবৌদির কাম শীতলতা সুবিমলের উদগ্র রতিবিলাস কাছে পরাজিত, আর এর ফলেই ওদের দাম্পত্য জীবনে এই টানাপোড়েন।
হুমায়ুন স্যার ছাড়াই হয়তো সুবিমলের সমস্যার সমাধান করা যাবে। তবে দু’একদিনের মধ্যে রমলা বৌদির সঙ্গে আলাপ করা লাগবে, আমি ভাবলাম। ‘ তোকে একটা বই দেব। বাংলা ভারসন হলে ভাল হতো।’ বইয়ের শেলফ থেকে Byatshayan’s Kamsutram’ বইটি বের করে কয়েক পাতায় লাল কালি দিয়ে মার্ক করে সুবিমলের হাতে দিয়ে হেসে বললাম,‘ লাল কালি দিয়ে মার্ক পাতাগুলো পড়ে সে মতো ----- । ’ সুবিমল ছোঁ মেরে বইটি নিয়ে নেওয়ায় আমি আমার কথা শেষ করতে দিল না। ‘ এক সপ্তাহ পরে তুই আমার সঙ্গে আমার এখানে দেখা করবি।’ ‘ ঠিক আছে।’ বলে সুবিমল আমার ওখান থেকে প্রস্থান করল। আমি ভাবলাম, রমলা বৌদির সঙ্গে দেখা করে সুবিমলের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলার জন্য বলে আসতে হবে।
এক সপ্তাহ পরে সুবিমল আবার এলো। ওর মুখটাতে খুশি খুশি ভাব দেখে আমার মনে হল আমার বুক থেরাপিতে কাজ হয়েছে। ও আমার দিকে মুচকি হেসে বলল,‘ বইটা তো খুব সুন্দর রে। এই বইটা আগে পেলে তোর রমলা বৌদির সঙ্গে কবেই তো বনিবনা হয়ে যেত।’ আমি কপটতার ভান করে বললাম,‘ আমি ভেবে দেখলাম রমলাবৌদিকে তোর ডিভোর্স দিয়ে দেওয়াই ভাল। ’ ‘কী যা তা বলছিস তুই ! ’ কী যা তা বলছি মানে, রমলাবৌদিকে ডিভোর্স দিয়ে তোর পছন্দের মেয়েকে বিয়ে কর, তাহলেই তোর সব সমস্যা মিটে যাবে। এবার সুবিমল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,‘ তোর রমলাবৌদিকে ছাড়তে পারি তুই কেমন করে ভাবতে পারলি!’
পরের সপ্তাহে মোবাইল ফোনে রিং বেজে উঠতেই ডিসপ্লেতে চোখ রেখে দেখতে পেলাম রমলাবৌদির রিং। রমলা বৌদি প্রথমেই বলল,‘ কনগ্রাচুলেশন, অনিমেশদা।’ তার কথা শুনেই বুঝলাম পজেটিভ রেসপন্স ।‘ আপনি সত্যি সত্যি জাদু জানেন , দাদা। আপনার বন্ধুটি কুপোকাত!’ ‘ তাহলে তো পোয়াবার! তবে আমার কোন কেরামতি নেই। আমার বন্ধু সুবিমলের মনটাকে আপনি ভাল করে দিয়েছেন। তাই ধন্যবাদ আপনারই প্রাপ্য।
তা নিজের হাতের রান্না করে কবে খাওয়াচ্ছেন ,বলুন তো বৌদি?’ ফোনের ও প্রান্তের খিল খিল হাসির শব্দের মাঝে কানে ঝংকৃত হল,‘অবশ্যই খাওয়াবো, তবে তার আগে আপনাকে কুপোকাত করার মানুষটি আনতে হবে ! বুঝলেন ডাক্তার বাবু!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন