০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গল্প - প্রবলকুমার মন্ডল

বান্ধবীর বোন 

মাঝে মাঝে এমন সব ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় যা কল্পনাতে আসে না। কখনো কি আরিফ ভেবেছিলো তার সংগে এমন কিছু ঘটবেযাকে সে কখনো কল্পনাই করেনি সে তাকে ভালোবাসবে?
প্রাইমারী থেকে অনার্স পর্যন্ত আরিফের ছায়াসঙ্গী ইতি। সেই ক্লাস থ্রি তে কলম চুরির অভিযোগ থেকে আরিফ কে ইতি বাঁচিয়ে ছিলোসেই তখন থেকেই ইতির সংগে আরিফের সুসম্পর্ক।
অনার্সে এসেও সেই সস্পর্ক অটুট রয়ে গেছেমাঝে মাঝে একটু আধটু ঝগড়া হয় কিন্তু পরদিনই আরিফ কান ধরে ক্ষমা চেয়ে বসে।
ইতিও থাকতে পারে না আরিফের সংগে কথা না বলেযতই হোক ছোট বেলার বন্ধু তার সংগে কি বেশীক্ষণ রাগ করে থাকা যায়?
সেদিন মাঘী পূর্ণিমা ,
চাঁদের আলোয় ভরে গেছে চারদিকহরগৌরি মেলা থেকে জিলাপিবেলুন কিনে ইতির সংগে বাড়ি আসতেছে আরিফ।
হঠাৎ বেলুন ফাঁটার শব্দে ইতি চমকে উঠলোঅনেকক্ষণের নীরবতা ভাঙতে আরিফ ইতির বেলুন ফাটিয়ে দিয়েছে। শখ করে কেনা ফেলুন ফাঁটতে দেখে আরিফ কে অতি ধীরে একটা লাথি দিলো ইতি কিন্তু ইতির পা আরিফ পর্যন্ত পৌঁছালো না।
-ইতু দেখআকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
আমার চাঁদ দেখে কাজ নেইতুই কবি মানুষ তুই দেখ।
আচ্ছা দেখবো কিন্তু তোকে একটা গোপন কথা বলার কথা ভাবতেছি কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না আবার লজ্জাও লাগতেছে।
তোর আবার লজ্জাযা বলার বলে দে।
আজ নাদুদিন পর বলিআরও একটু সাহস সঞ্চয় করি।
দেখিস বলতে এসে যেনো কাপড় নষ্ট রা করিস।
বাড়ি তে এসে ছাদের উপর আরাম কেদারায় বসে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বার বার ভেংচি কাটতেছেমনে হচ্ছে যেনো চাঁদ আরিফের সামনে বসে আছে।
মনে মনে চাঁদ কে বলতেছেআচ্ছা চাঁদ বলতোআমি যদি ইতি কে সব গোপন কথা বলে দেই তবে কি সে রাগ করবেআমাদের বন্ধুত্ব কি নষ্ট হয়ে যাবেবিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধে আমি কি বিশ্বাসঘাতক হবো?
চাঁদ নিশ্চুপ থাকেআরিফ আবার ভাবে- কতদিনের বন্ধুত্ব সেটা যদি একটা কারণে নষ্ট হয়ে যায় তবে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না ।
জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ইতিইলেকট্রিসিটির বাল্ব বন্ধ করা কিন্তু চাঁদের আলোতে ঘর ভরে গেছে।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে আরিফের কথা ভাবতেছে ইতি। আসলেই আজকের চাঁদ টা অনেক সুন্দরআরিফ ঠিকই বলেছে।
আবার মনে হচ্ছেআরিফ তাকে কি বলতে চেয়েছিলোসে যেটা ভেবেছে আরিফ কি তাকে সেটাই বলতে চেয়েছেআরিফ কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছেতার মনের সুপ্ত বাসনা কি সত্য হতে যাচ্ছে?
সেই কবে থেকে ইতি আরিফ কে তার মনের কথা বলতে চায় কিন্তু সে ইচ্ছে করেই বলেনি। সে সব সময় চেয়েছে আরিফই তাকে বলবেআজ তার স্বপ্ন সত্য হওয়ার পথে।
দুজনেই
চাঁদের দিকে তাকিয়েই রাত কেটে দেয়,কারো ঘুম আসে না।।
আরিফ আজ বলে দিবে তার সব গোপন কথাইতি উৎসুক ভাবে কলেজের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে।
শীত ভালই পড়েছে কিন্তু তবুও আরিফ ঘেমে যাচ্ছে। মনের ভিতর একটা অপরাধ বোধ কাজ করতেছে। এই বুঝি তার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
ইতির মনে আনন্দের তুফান বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে চোখে মুখে রাগ রাগ ভাব এনে আরিফ কে বললো, "কি রে বলবি নাকি ব
চলে যাবো? "
-বলবো কিন্তু সাহস হচ্ছে না। যদি কিছু না বলিস তবে বলবো।
আরে বয়স হলে ওসব হবেই।  বলে দে,কিছু বলবো না।
আমি কি বলবো তুই কি বুঝতে পেরেছিস?
একটু একটু তবু তুই বল,তোর মুখে শুনতে ভাল লাগবে।
আচ্ছা বলতেছি
আরিফ দু হাত জোর করে ইতি বললোআমি তোর ছোট বোনের সংগে প্রেম করিতুই কিছু মনে করিস না। তোর পরিবার আমাকে অনেক বিশ্বাস করে কিন্তু আমি তোদের বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারিনি। আর কেমন করে যে প্রেম হয়ে গেলো সেটা বুঝতেই পারিনি। :-(
ইতির
মনের ভিতর নেপালের সেই বিধ্বংসী ভূমিকম্পের মত কিছু একটা হয়ে গেলো। সব স্বপ্ন ভেঙ্গে স্তুপাকারে জমা হলো,
বাকশূণ্য হয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে রইলো।
একটু পর ইতি বললোতুই আমার সামনে থেকে চলে যাতুই আমার সংগে বেঈমানী করেছিস।
আরিফ প্রতিবাদ না করে হেঁটে চলতেছেনিজের ভুলের জন্য সে অনুতপ্ত কিন্তু কি করবে প্রেম কি কোনো নিয়ম মেনে চলেপ্রাকৃতিক ভাবেই হয়ে গেছে।
কলেজের গেট পার হবেএমন সময় কে যেনো জামাই বলে ডাকতেছে । আরিফ পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো ইতি তাকে ডাকতেছে। অবশেষে আরিফের টেনশন মুক্তি ঘটলো।
-এ শোনআজ থেকে আমাকে আপা বলে ডাকবিআর ইয়ার্কি ফাজলামি করবি না যতই হোক তোর বউয়ের বড় বোন।
আচ্ছাআপা। ইতি আপা,ইতু আপা।
ইতি আরিফ কে বিদায় জানিয়ে বাড়ির থেকে হাঁটতেছে। মনে অনেক চিন্তাছোট বোনের প্রতি রাগ হচ্ছে। কলেজে উঠতে না উঠতেই প্রেমতাও বোনের বন্ধুর সংগে কিন্তু কিছু বলার নেই।  আরিফের প্রতি ভালো লাগা কে সময়ের দেওয়া মোহ ভেবে সেটা কে মন থেকে মুছে ফেলার প্রতিজ্ঞা করলো ইতি।
বাড়ির দরজায় রিয়া দাড়িয়ে আছেইতি কে দেখেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
বোনের ভালোবাসা সব ভালোবাসা কে ভুলিয়ে দিলো।
এরপর থেকে আরিফের সংগে আগের হাসি ঠাট্টার সম্পর্ক নেইআরিফ কে অনেক আদব কায়দা মনে চলতে হয়। ইতিও দূরে দূরে থাকে।
ইতির সংগে আর ফাজলামি হয় নাএজন্যে আরিফের আপসোস হয়কেন যে সে ইতিকে বলতে গেলো।
পরবর্তীতে কি হয়েছিলো জানি নেশুধু শুনেছি ইতি কিছুদিন পর বিয়ে করে বরকে নিয়ে থাইল্যান্ড চলে গেছে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন